মাঝে মাঝেই ছেলেটিকে এই পথে হাটতে দেখা যায়। সবসময়ই কেমন যেন আনমনা চলন। আজ যেমন হেটে যাচ্ছে আপনমনে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা আর পরনে ধুসর টিশা্র্ট এর সাথে রংচটা জিন্সের প্যান্ট। কিন্তু যে জিনিসটা ছেলেটাকে আর দশটা ছেলে থেকে আলাদা করে দেয় তা হল ওই মোটা ফ্রেমের আড়ালের চোখজোড়া।
এক অদ্ভুত দিপ্তি যেন ফুটে ওঠে সেখান থেকে।
ওর একুশতম জন্মবা্র্ষিকির কথা। যেদিনটা ওর কাটানোর কথা অনেক আনন্দে তার বদলে শুরু হয় এক ধাক্কা দিয়ে। এমন একজন যাকে ও নিজের থেকেও বেশি পছন্দ করে ওকে ছেড়ে চলে যায়। জীবন তখন বৃথাই মনে হয়।
চারদিন পরের কথা। মনে হয় একজন মানুষ না থাকার মানে জীবন বৃথা হতে পারেনা। জীবনের মানে আরও বড় কিছু। বাস্তবতার ক্যানভাসে স্বপ্নের রঙ তুলির আচরে আকা প্রতিচ্ছবিই তো এই পৃথীবিকে রঙ্গিন করে আছে নিয়ত। তাই ও ঠিক করে জীবনকে দেখার এ দৃ্ষ্টিভঙ্গি আজীবন অম্লান রাখবে।
ওর বয়স তাই হবে একুশ বছর চার দিন। এর পর থেকে তাই কেউ যদি জিজ্ঞেস করে ওর বয়স কত নি্র্বিকারে উত্তর দেয় একুশ বছর চার দিন। ওর খুব কাছের বন্ধুটা হয়ত ওকে ওর জন্মবা্র্ষিকির দিনে এই উত্তর পেয়ে বলে “শালা ফাজলামোর আর জায়গা পাসনা। জন্মদিনের দিন বলিস বয়স একুশ বছর চার দিন। “ তখন ও বলে “আমার বয়স হয়ত তেইশ বছর কিন্তু আমার মনের বয়স তো একুশ বছর চার দিন।
“
একদিন রেললাইনের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় এক মেয়ের কান্না ভেসে আসে ওর কানে। তাকিয়ে দেখে প্রতিদিন রাস্তার পাশে যে পাগল মেয়েটাকে ভিক্ষে করতে দেখা যায়, চার পাচটা ছেলে তাকে টানতে টানতে এক বগীর ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে। আর দশটা মানুষের মত ছেলেটাও এই চিন্তে করতে করতে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় যে আমার কি? আমি কেন শুধু শুধু বিপদে পরতে যাব?কিছুদুর যাওয়ার পর ও থমকে দাড়ায়। নিজেকে ধিক্কার দিয়ে ওঠে কি করতেছি আমি?ঘুরে দাঁড়ায় পিছনের পথে। যেই পথে ডুকড়ে ওঠা কান্না ট্রেনের বগীর দেয়ালে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।
তখন যদি কেউ ওর চোখের দিকে তাকাত তাহলে ঐ অদ্ভুত দিপ্তিটাই যেন দেখতে পেত।
পরেরদিন কোন এক মফস্বল শহরে দুইটা টোকাই ছেলে একে অপরের সাথে কথা বলছে। “ঐ জানিস আইজকা না ট্রেনের ছাদে এক বেডার লাশ পাইছে। যাবি দেখত?” আরেকজন তখন বলে ল যাই।
যতক্ষনে টোকাই ছেলে দুটো লাশের পাশে যায় তার আগেই পুলিশ এসে হাজির।
দু একটা সাংবাদিক ও দেখা যায় আশেপাষে। তারমাঝের একজন পুলিশ অফিসারকে যেয়ে জিজ্ঞেস করে “কি রাঈসুল সাহেব, ছেলেটা কে কোন খোজ বের করতে পারলেন নাকি?” উত্তরে পুলিশ অফিসারটি বলে “না। পকেটে কিছু পাওয়া যায়নি যা দিয়ে ট্রেস করব। দেখেন কোথায় কার সাথে কি করতে গিয়ে মারা গেছে আর নাই ভেজাল আমার মাথায় এসে ফেলে গেছে। “
সাংবাদিকটি তখন লিখতে শুরু করে।
আজ সকালে পারাবত ট্রেনের ছাদে অজ্ঞাতনামা এক ছেলের লাশ পাওয়া গেছে। কে বা কারা ছেলেটিকে হত্যা করেছে তা এখন খোজ পাওয়া যায়নি। ছেলেটির পরনে ছিল ধুসর টিশা্র্ট আর রংচটা জিন্সের প্যান্ট। বয়স আনুমানিক তেইশ বছর..................
কিন্তু আমরা তো জানি ছেলেটির বয়স একুশ বছর চার দিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।