আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিভাবে ‘রেপ’ করবেন



সিওর? সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন এমন কিছু করবেন? না, বারণ করছি না। করতেই পারেন। ইনফ্যাক্ট করাই উচিৎ। আফটার অল ‘শখের দাম লাখ টাকা’। এধরনের শখ পালনে যদিও আইনগত বাঁধা আছে, তারপরও ভয় পাবেন না।

একটু জল ঘোলা হবে, লোক জানাজানি হবে। হয়তো কিছুদিন পত্র পত্রিকায় লেখালেখিও হবে। বেশি পাবলিসিটি হলে ধরাও হয়তো পড়তে পারেন। তবে, ঐ পর্যন্তই। এর বেশী কিছু হবে না।

শাস্তি তো হবেই না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার যেটা দেখতে পাবেন তা হচ্ছে, পুরো পরিবার আপনাকে হেল্প করবে। পরিবারের নারী সদস্যরাও আপনার পাশে দাঁড়াবে। আপনার সঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে বলবে, ‘ফাঁসানো হচ্ছে’।
আপনার মনে যে ইচ্ছা জেগেছে, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র অপরাধ বোধে ভুগবেন না।

ইচ্ছে তো আপনার মনে জাগে নি, জাগানো হয়েছে। চারদিকে বেপর্দা হয়ে ঘুরে বেড়ানো মেয়েরা জাগিয়েছে। ফ্রক পরে আপনার বাসায় বেড়াতে আসা পাশের বাড়ির মেয়েটা জাগিয়েছে। আপনার স্কুলের ছাত্রী জাগিয়েছে। আপনার অধীনে ট্রেনিং নেয়া শিক্ষানবিস মেয়েটি কিংবা আপনার সহকর্মী মহিলাটি।

ওদের পোশাক, ওদের চলাফেরা, ওদের গলার আওয়াজ সব কিছুই তো আপনাকে উত্তেজিত করার জন্যই। অবশ্য ওরা সব ঘরের ভেতরে থাকলেও হয়তো আপনার এমন ইচ্ছা জাগতো, সেকথা আলাদা।
আজকের দিনটি বিশেষও হতে পারে। হতে পারে আজকে আপনার সামনে দিয়ে এমন কোন মেয়ে হেঁটে গেছে যার পোশাক উত্তেজক ছিল। কিংবা এমন কোন বই পড়েছেন, যেখানে উত্তেজক কোন দৃশ্যের বর্ণনা ছিল।

সিনেমা কিংবা ইন্টারনেট দেখেও ইচ্ছা জাগতে পারে। সব ক্ষেত্রেই কোন না কোন নারী এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। হয় কোন এক নারী উত্তেজক ‘পোজ’ দিয়ে ছবি উঠিয়েছে। যা দেখেই না আপনার এই অবস্থা। উত্তেজক ছবি গুলোও তো কোন নারী ছাড়া হয় না।

ওরা এসব না করলে তো আজ আপনার এই ইচ্ছা হয় না। তাই না? অতএব, আপনার এই ইচ্ছা জাগবার পেছনের মূল কারণ ‘এই নারীসমাজ’। ‘অতিরিক্ত নারী স্বাধীনতা’। তাই আপনার এমন ইচ্ছা জাগা দোষের কিছু না। আর কাজটা যদি করেই ফেলেন, তখন নিজের বিবেককে এসব যুক্তি দিবেন।

তেতুল তত্ত্ব।
এবার সিদ্ধান্ত নিন কার সঙ্গে। এব্যাপারে কোন কুসংস্কার রাখবেন না। অন্য ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করা নিয়ে যদিও অনেক রকম ঝামেলা আছে। এসব কাজে নেই।

অন্ততঃ এসব কাজের পরে কোন ফতোয়ারও দেখা পাওয়া যাবে না। ফলে ধর্মের দিক থেকে আপনি নিরাপদ। এসব ক্ষেত্রে আপনার ইচ্ছেই বড় কথা। তেমন যদি কাউকে পছন্দ করেই ফেলেন তবে কাজটা একটু প্ল্যান করে করতে হবে। কোন না কোন ভাবে দুই ধর্মে ঝগড়া লাগবার মত একটা ইস্যু তৈরি করে ফেলেন।

ব্যাস আর কিছু লাগবে না। এরপর একদল লোক নিয়ে যেয়ে হামলা চালাতে পারেন। বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়েও আসতে পারেন। সঙ্গে সেই কাজটিও। শুধু খেয়াল রাখবেন, আপনাকে হতে হবে সংখ্যা গুরু আর প্রতিপক্ষ সংখ্যা লঘু।

গরীব হলে আরও ভালো হয়।
ধর্ম ব্যবহারের আরেকটি সুবিধা আছে। সঙ্গে অনেককে পেয়ে যাবেন। রটনা সত্যি না মিথ্যে, তার প্রমাণ কেউ চাইবে না। ঘটনাটা উত্তেজক হওয়া চাই, ‘আপনার ধর্মের চরম অপমান হয়েছে’ এমন একটা কোন রটনা।

এখানে আপনি যেহেতু পুরো মহল্লা কে আক্রমণ করছেন, সেই ধর্মের যতজন আছে সবাইকেই একসঙ্গে পাচ্ছেন। অন্ততঃ যদি আক্রমণ টা খুব চুপিসারে করতে পারেন। মানে পালাবার সুযোগ না দেন। তবে যেহেতু দলবেঁধে গিয়েছেন, সবাইকেই সুযোগ দিতে হবে। হোতা হিসেবে হয়তো আপনি আগে সুযোগ টা নিতে পারেন তবে দলের বাকীদের ও সুযোগ দিতে হবে।

যদি সামর্থ্য কুলোয় তবে হয়তো পুরো পরিবারে যতজন আছে, সবাইকেই। শর্ত একটাই সবাই প্রতিপক্ষ ধর্ম টি সংখ্যা লঘু হতে হবে। আপনার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে ভালো, না থাকলেও চলবে। এখানে রটনা যেহেতু ‘ধর্মের অপমান হয়েছে’ তাই নিজ ধর্মের লোকেদের পাশে পেয়ে যাবেন, সহানুভূতি দেখাতে এগিয়ে আসবে।
পছন্দের মানুষটি যদি সংখ্যালঘু ধর্মের কেউ যদি না হয়, তবে কি কাজটা করা যাবে না? না রে ভাই, তারপরও যাবে।

শুধু মেয়েটাকে সুযোগ মত পেতে হবে। ব্যাস। সুযোগ পেলেই কাজ সেরে ফেলুন। ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে কিংবা পত্রিকায় চলে আসলে ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে। ‘গা ঢাকা’ দিতে হবে।

সবকিছু শান্ত না হওয়া পর্যন্ত। খুব বেশী দিন লাগবে না। বড়জোর সপ্তাহ দুয়েক। ইদানীং এতো এসব ঘটনা ঘটছে, আর যেমন সব নিত্য নতুন স্টাইলে ঘটছে, দুদিন আগের ঘটনাও আর প্রথম পাতায় সুযোগ পায় না। আর প্রথম পাতা থেকে সরে যাওয়া মানে, ‘নো টেনশান’।

সো, পত্রিকায় যদি খবরটা চলে আসেও, ভয় পাবেন না। শুধু চেষ্টা করবেন ধরা যেন না পড়েন। খুব কঠিন কিছু না। পুলিশে বহু লোক পাবেন, আপনাকে আগাম সতর্ক করে দেয়ার জন্য। তাঁদের একজনকে হাতে রাখলেই হবে।

নেহাত যদি ধরা পরেই যান, বহু উকিল পাবেন। রাতারাতি জামিনে বের করে আনতে পারে। খরচ একটু হবে, তবে সেটা এক দিক দিয়ে ভালো। কারণ আপাততঃ আপনি নিশ্চিন্ত। পালিয়ে বেড়াতে হবে না।


আর পত্রিকায় ছাপা হওয়া যদি আটকাতে পারেন, তবে আর পায় কে। হয়তো কাজটা আরও কয়েকদিন ধরেও চালাতে পারেন। ভিডিও করতে পারেন। সেই ভিডিওর ভয় দেখিয়ে আরও কয়েকবার। খুব বড় মাপের নেতা হলে হয়তো এতো রাখঢাক এর দরকার হবে না।

সবাই জানবার পরও কেউ কিছু বলবে না। বরং একাজ সেলিব্রেট করার জন্য মিষ্টি বিতরণও করতে পারেন। আসলে সবকিছুই নির্ভর করছে, আপনার ক্ষমতার ওপর। ক্ষমতা মানে দুটোই বলছি। ‘রাজনৈতিক’ আর ‘পয়সা’।

পয়সা একদিক দিয়ে ‘সেফ’ কারণ ব্যাপারটা একবার সেটল করে ফেলতে পারলে আর সমস্যা হবে না। আর রাজনৈতিক হলে পরে ঝামেলা হলেও হতে পারে। অন্য দল ক্ষমতায় আসলে। তখন নাহয় সুযোগ বুঝে কদিনের জন্য সটকে পড়বেন।
ক্ষমতা কম থাকলে কিংবা রাজনৈতিক ‘গডফাদার’ না থাকলে অর্থাৎ যাকে বলে সাধারণ জনতা টাইপ কেউ হন, তবে কি করবেন? একদম ভাববেন না।

অবস্থার এমন কোন হেরফের হবে না। প্রায় নিশ্চিত থাকতে পারেন, মেয়েটি কোন রকম থানা পুলিশ করবে না। সমাজের ভয়, লোকলজ্জার ভয়, লোকজনের ‘ছি ছি’, ‘নিশ্চয়ই মেয়েটার কোন দোষ ছিল’। নেহাতই দারুণ সাহসী কেউ যদি কেস করেও, একদম ঘাবড়াবেন না। প্রথমেই বলবেন, আপনাকে ফাঁসানো হয়েছে।

এরপরে মেয়েটির চরিত্র নিয়ে যা মনে আসে বলে ফেলুন। আর একজন ভালো উকিল ধরুন। কেসটি লম্বা টানুন। মেয়েটি কয়দিনেই হাল ছেড়ে দিবে। তখন আপনি আবার আগের জীবনে ফিরে যাবেন।


পরিবার পরিজন নিয়েও ভাববেন না। আপনার ওপরেই তো পরিবার নির্ভর করে। আপনি জেলে গেলে ওদের কি হবে। তাই আপনার পাশেই থাকবে। স্বীকার করলে পাড়ায় মুখ দেখাতে পারবে না, তাই কেউই স্বীকার করবে না।

‘ষড়যন্ত্র’ বলে বেড়াবে। আপনি যদি পরিবারের পুত্র হন, সেখানেও একই অবস্থা। মা, বোন সবাই আপনার পাশে দাঁড়াবে। ‘বয়সের দোষ’ বলে হয়তো একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। বাসায় কিছু চড় থাপ্পড় মারলেও, বাইরে আপনাকে রক্ষা করবে।

আপনার নামে কেস হলে, দামী উকিলও জোগাড় করবে।
বলছি তো একদম টেনশান করবেন না। শুধু পছন্দ করুন কাকে। নিজের প্রফেশান নিয়েও ভাববেন না। শিক্ষক হয়েছেন তো কি হয়েছে? ছাত্রী দের বাদ দিতে হবে এমন কে মাথার দিব্বি দিয়েছে? নিশ্চিন্তে পছন্দ করতে পারেন।

পড়া বুঝিয়ে দেয়ার বাহানা করে কিংবা পরীক্ষায় ভালো নম্বর দেয়ার লোভ দেখিয়ে। যেভাবে সুবিধা হয়। অন্য পেশাতে থাকলেও সমস্যা নেই। দেখেলন না, ভারতে একজন বিচারক, শিক্ষানবিস এক আইনবিদের সঙ্গে সেরে ফেলেছে। সেই মেয়ে সাহসও পায় নি কাউকে বলার।

ব্লগে যে লিখেছে, তাও নাম দেয় নি। সেই বিচারক চাপে পড়ে পদত্যাগ করেছে, তবে ঐ পর্যন্তই। আর কিছু হবে না। শুধু ‘শিরোনাম’ থেকে সরতে দেন।
আচ্ছা বাদ দিন পেশাগত ব্যাপার।

হয়তো এমন পেশায় আছেন, যেখানে আশেপাশে নারী খুব সহজলভ্য না। এই তো? সমস্যা কি? একটু সুযোগে থাকুন, পেয়ে যাবেন। দেখলেন না, কিছুদিন আগে এক ওয়ার্ড বয়, এক মহিলা ডাক্তারের ওপর চেষ্টা করেছিল? নেহাত মারা গেল, নইলে কি আর ব্যর্থ হতো? আর সবসময় যে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে এমন কে বলেছে। হয়তো একদিন দেখলেন আপনার পাশের বাসার ছোট্ট পাঁচ বছর বয়সী সুন্দর ফুটফুটে মেয়েটা আপনার বাসায় এসেছে। ছোট্ট হাতে একটা বাটিতে রান্না করা একটু শুটকি মাছ।

দরজায় দাঁড়িয়ে বলছে, ‘অ্যান্টি নাই আঙ্কেল? আম্মু পাঠিয়েছে। ‘ কি ভাবছেন? আপনার মেয়ের বয়সী? এসব ভাবলে তো হবে না মশাই। সুযোগ সব সময় আসে না। কোন চিন্তা না করে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.