. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া...
দুরন্ত এক্সপ্রেসে সকাল ৬টায় আজমির রওনা হলাম। অতো সকালে আমাদের ডেকে দেয়া, স্টেশনে নিয়ে ট্রেনে তুলে দেয়া সব দায়িত্ব পালন করলো হোটেলেরল বয় সেলিম। ভিষন ভালো ছেলে। বিহারে বাড়ী। আমাকে সর্বক্ষন আম্মা আম্মা করে সযতনে দেখভাল করেছে।
নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়লো। ছিমছাম পরিস্কার ট্রেন। সকাল ৭টায় নাস্তা দিলো। ব্রেড, মাখন, ২টা ডিম সেদ্ধ, সবজি সেদ্ধ, জাফরানি দুধ, চা।
তখন সূর্য্যি মামা আড়মোরা ভেঙ্গে উঠছেন।
দিল্লী থেকে আজমির যেতে ট্রেনে সময় লাগে ৬ ঘন্টা। আস্তে আস্তে চারপাশের প্রকৃতি বদলে যেতে থাকলো। উষর, রুক্ষ প্রান্তর, চাষের জমি, বাবলার সারি। বাবলা গাছে ঝুলতে অসংখ্য বাবুই পাখীর বাসা। ট্রেনের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে সে দৃশ্য ধরে রাখতে পারলাম না।
রাজস্থানের রুক্ষ প্রকৃতির মাঝেও অন্য রকম সৌ্নর্য্য আছে। চষা মাঠ অপেক্ষায় আছে ভুট্টো, জোয়ার, বজরা বুণনের অপেক্ষায়।
ভারতের অন্যতম প্রদেশ রাজস্থান। ছোট বড় অসংখ্য পাথুরে শক্ত পাহাড়ের গিরিখাদে ভরা দুর্ভেদ্য প্রাচীর আরাবল্লী পর্বতশ্রেনী প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থান জুড়ে পশ্চিম ভারতের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিন-পশ্চিম পর্যন্ত হরিয়ানা, রাজস্থান ও গুজরাট রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান।
দুপুর ১২টার দিকে আমরা আজমির পৌছে গেলাম।
আমরা হযরত খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছাকাছি একটি হোটেলে উঠলাম। ভাগ্যি ভালো লিফট আছে। হোটেলের রুমও অনেক বড়, এসি, গরম পানির ব্যাবস্থাও আছে। দাম সে তুলনায় অনেক কমই মনে হলো। হোটেলের বারান্দা থেকে আজমিরের কিছু দৃশ্য!
দুপুরে গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নিলাম।
এখানে মাছ দুর্লভ। কারন পানির অভাব। নিরামিশ আর মাংসই বেশী চলে। আর নিরামিশে পনির থাকবেই। খাবারে প্রচুর তেল, মশলা।
যাই হোক! খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নিয়ে মাগরিবের আগে দরগা শরিফে গেলাম।
দরগার প্রধান ফটক।
সেখানে গিয়ে কুম্ভকর্ন ব্যাস্ত হয়ে তার পরিচিত খাদেম শরিফুদ্দিন চিশতি সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য। উনার অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো উনি গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছেন। আমি যতই তাগাদা দেই " চলো জিয়ারত শেষ করে নেই"।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। কাছেই উনার বাড়ীতে গিয়ে উনার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলাম। এর মধ্যে অবশ্য উনার কাছে ফোন গিয়েছে। উনি ফিরে আসার জন্য রওনাও দিয়েছেন। উনার বাড়ীতে আমরা একবার থেকেছিলাম।
এখন ঘর ভেঙ্গে বড় ও আধুনিক ভাবে সাজানোর কাজ চলছে। উনার শোবার ঘর থেকে খাজা বাবার ঝলমলে মাজারের সবটুকুই দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত খাদেম সাহেব এলে পরে উনি সঙ্গে মানুষ দিয়ে দিলেন। আমরা আগেই বলে নিলাম, আমরা ফুল, চাদর চড়াবোনা, সিজদাও করবোনা। ঝামেলা ছাড়াই মাজার জিয়ারত করলাম।
দুইটি বিশাল আকারের ডেগ আছে যাতে দুই বেলা রান্না করে বিলানো হয়। বড় ডেগে তখন রান্না চলছিলো।
সিড়ি ভেঙ্গে ছোট ডেগের সামনে গিয়ে দেখি সেটাতে চাল, ডাল, আটার বস্তা ও টাকার ছড়াছড়ি। রাতে এগুলো সরিয়ে এটাতে সকালে রান্না চড়বে।
মাজারের ভেতরে গেটের সামনে অসংখ্য ফুল আর চাদরের দোকান।
মানুষজন এখান থেকে ফুলের টুকরি ও চাদর কিনে মাজারে চড়িয়ে দেয়। সেই চাদর আবার সেই দোকানেই বিক্রি হয়। হায়রে ধর্ম, মাজার নিয়ে ব্যাবসা!
মাজার থেকে বের হয়ে একটি হোটেলে নান আর কাবাব খেয়ে হোটেলে ফিরে ঘুম দিলাম। কাল যাবো আনা সাগর দেখতে। যেটার জন্য আমি আজমির এসেছি।
তারপর দিন যাবো জয়পুর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।