আহসান মোহাম্মদ
শাবানা আজমি। ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রাভিনেত্রী। হিন্দি সিনেমার সাথে পরিচিত, কিন্তু তার নাম জানে না এমন লোক সম্ভবত খুব কমই আছে। তাকে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীদের একজন বললেও খুব বেশি বলা হবে না, যিনি তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পাঁচবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শাবানা আজমির একটি পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে।
বলা যায়, ভারতের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের একটি তার পরিবার। যারা ভারতের শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে অপরিসীম অবদান রেখেছে। শাবানার বাবা কাইফি আজমি ভারতের প্রখ্যাত উর্দু কবি। আর শাবানার স্বামী জাভেদ আকতারও একজন খ্যাতিমান কবি। যিনি জনপ্রিয় অনেক হিন্দি গানের গীতিকার।
এখনো বলিউডের ব্যয়বহুল ও জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর বেশির ভাগ গান তারই লেখা। ভারতের চলচ্চিত্র তো বটেই, এখন ভারতের কোনো না কোনো টেলিভিশন চ্যানেলে প্রায় প্রতিদিনই তাদের দেখা যায়। শাবানা আজমি বাংলাদেশের একটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছিলেন। ‘মেঘলা আকাশ’ নামের এ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ঢাকায় এলে তার সাথে আলাপ করার সুযোগ হয়েছিল। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে তার একটি প্রিয় মন্তব্য জানিয়েছিলেন, ‘I am a daughter, a wife, a mother, a woman, an actress, an Indian, and a Muslim’.
শাবানার এ মন্তব্যটি তুলে দিলাম, কারণ তার আরেকটি মন্তব্য নিয়ে আজকের এ লেখা।
সম্প্রতি শাবানা আজমি এবং হিন্দি সিনেমার আরেক খ্যাতিমান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহকে ভারতের নামকরা জামিয়া মিল্লিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি দিয়েছে। তাদের কাজের স্বীকৃতির জন্য এমন ডিগ্রি পাওয়া খুব আশ্চর্যের বিষয় নয়। কলকাতার একটি বাংলা পত্রিকায় খবরটি পড়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ইন্টারনেটে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে আরো কিছু তথ্য জানা গেল। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। জামিয়া মিল্লিয়ার সমাবর্তনে যোগ দেয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে শাবানা আজমি দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করে ভারতের মুসলমানদের করুণ অবস্থার বিবরণ দেন।
তিনি বলেছিলেন, এ দেশের মুসলিমদের ওপরে অবিচার করা হয়, যার জন্য আমি ও জাভেদ আখতার চাইলেও মুম্বাইয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারি না। দেশের মুসলিম নেতারাও এই পরিস্থিতি শোধরানোর কোনো চেষ্টা করেন না। নাসিরুদ্দিন শাহ বলেছিলেন, হিন্দি ছবিতে সন্ত্রাসবাদী মানেই মাথায় ফেজটুপি আর পাজামা পরা মুসলিমদের ছবি দেখানো হয়। (আনন্দবাজার ৩১ অক্টোবর ২০০৮)
এ দুই অভিনয়শিল্পীর উচ্চারণে আমরা অন্যরকম এক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের ভেতরের চিত্রটি দেখতে পাচ্ছি। যে দুই ব্যক্তি মুসলমানদের করুণ অবস্থার কথা জানাচ্ছেন তারা ভারতের তথাকথিত মৌলবাদী মুসলমান নন।
মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের পিছিয়ে পড়া অংশের প্রতিনিধিও নন। সন্দেহ নেই ভারতে যে মুসলমানদের সমাজের উঁচুতলায় যাতায়াত ও যোগাযোগ আছে, অর্থবিত্ত আছে, শাবানা জাভেদ কিংবা নাসিরুদ্দিন শাহ তাদের একজন। শাবানা অভিযোগ করেছেন শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে মুম্বাইয়ে তিনি ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। এই যদি ভারতের সংখ্যালঘু সমাজের প্রভাবশালীদের অবস্থা হয়, তাহলে সমাজের নিুস্তরের সংখ্যালঘুরা কোন অবস্থায় আছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমরা কোন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের চিত্র দেখছি ! শাবানা আজমির এ বক্তব্যের পর মনে হয়েছে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে তার কন্যার পরিচয়, স্ত্রীর পরিচয়, মায়ের পরিচয়, একজন অভিনেত্রীর পরিচয়, একজন ভারতীয় হওয়ার পরিচয়ের চেয়েও তার মুসলিম পরিচয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
আর সমাজে এ জন্য তাকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
যে জামিয়া মিল্লিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাবানা আজমিনাসিরুদ্দিন শাহকে ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে মাত্র কিছু দিন আগে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হত্যা করে ভারতীয় পুলিশ। আরো কয়েকজন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ভারতের মানবাধিকার সংগঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কতৃêপক্ষ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং তারা জানান, এই ছাত্ররা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। কিন্তু ভারতের অনেক রাজনীতিক এবং গণমাধ্যম জামিয়া মিল্লিয়াকে সন্ত্রাসবাদীদের আঁতুরঘর হিসেবে প্রচারণা চালায়।
যেন মুসলমান মানে বা মুসলিম পরিচয়ের প্রতিষ্ঠান মাত্রই সন্ত্রাসীদের আখড়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর মুশিরুল হাসান তার বক্তব্যে বলেন, এখানে মুসলিম মানেই সন্ত্রাসবাদী বলে ছাপ্পা লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রতিবার কোনো সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতার অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়। আমাদের যেভাবে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে কে জানে কত দশক সময় লাগবে! আমাদের ছাত্রছাত্রীরা জামিয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে গেলে চাকরি পাচ্ছে না। কোনো ট্যাক্সিচালক এখানে যাত্রী নিয়ে আসতে চায় না।
মুশিরুল হাসান দুঃখ করে বলেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে কি শান্তিমিছিল করতে হয় অথবা আমরা শান্তির পক্ষে বলে দেয়ালে পোস্টার সাঁটাতে হয়? পরিস্থিতির চাপে আমাকে তাও করতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। ’ এখানে বলে রাখা দরকার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর জামিয়া মিল্লিয়া হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে উঁচুমানের বিশ্ববিদ্যালয়। সমাবর্তন বক্তৃতায় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের করুণ আর্তি আমরা শুনতে পেলাম।
আলিগড় বা জামিয়া মিল্লিয়া ভারতের মুসলমানদের প্রথাগত ধর্মীয় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়।
একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব বিষয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। সমাবর্তনের খবর দিতে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানাচ্ছে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আর্ট গ্যালারির উদ্বোধন করা হয়। আর এ আর্ট গ্যালারির নাম দেয়া হয়েছে এম এফ হুসেন আর্ট গ্যালারি। এখন এম এফ হুসেন সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। এম এফ হুসেন অর্থাৎ ভারতের আরেক খ্যাতিমান শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের নামে জামিয়া মিল্লিয়া এই আর্ট গ্যালারিটি চালু করেছে।
মকবুল ফিদা হুসেন এখন ভারতে নেই। এক দেবীর মূর্তি আঁকার কারণে হিন্দু মৌলবাদীদের হামলার ভয়ে এখন তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতে আসতে পারছেন না, দুবাইয়ে আছেন। আমরা কি ভাবতে পারি আমাদের দেশের একজন লেখিকা যখন দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে একের পর আঘাত দিচ্ছে, কিন্তু এ জন্য দুঃখ পর্যন্ত প্রকাশ করছে না। তখন তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারত।
এমনকি তাকে পুরস্কৃতও করছে। আর সে দেশের একজন খ্যাতিমান শিল্পী ছবি আঁকার কারণে জীবনের ভয়ে দেশছাড়া। কোথাও কোনো প্রতিবাদ নেই, হইচই নেই। সে দেশের গণমাধ্যমে তোলপাড় নেই। কোথায় আজ ভারতে শিল্পীর স্বাধীনতা কিংবা বিবেকের স্বাধীনতা।
মকবুল ফিদা হুসেন মুসলমান বলে কি সব স্বাধীনতা শেষ হয়ে গেছে? ভারতের গণমাধ্যমের স্বরূপ দেখুন। এ খবর দিতে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস শিরোনাম করেছেঃ চসলময়মধঢ় মষ থড়য়? ঔথশমথ ষথশপঢ় থড়য় বথললপড়ী থফয়পড় থড়য়মঢ়য় গঋ ঐৎঢ়থমষ। অর্থাৎ মকুবল ফিদা হুসেনের নামে আর্ট গ্যালারি প্রতিষ্ঠার মাঝেও পত্রিকাটি রাজনীতি দেখছে। এই না স্বাধীন সংবাদপত্রের নমুনা!
ভারতের মুসলমানদের এই নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির বড় কারণ হচ্ছে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে এখন ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রন চলে গেছে। দেশটির সেনাবাহিনীও এখন এদের সাথে একাকার হয়ে গেছে।
হিন্দুত্ববাদীদের সাথে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মুসলমানদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এর প্রমান পাওয়া যায়, সম্প্রতি ভারতের আহমেদাবাদের মালেগাঁওয়ে এ মুসলমানদের ওপর এক হামলার ঘটনায় ভারতের সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ থেকে। ভারতের সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী সঙ্ঘ পরিবারের এক নেত্রী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের সাথে ষড়যন্ত্র করে হিন্দুত্ববাদীদের জন্য সেনাবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডার থেকে অত্যাধুনিক রাইফেল, বিস্ফোরক ও বুলেট সরবরাহ এবং হিন্দুত্ববাদীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের অভিযোগে সেনাবাহিনীতে কর্মরত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শ্রীকান্ত প্রসাদ পুরোহিত এবং অবসরপ্রাপ্ত দু’জন মেজরকে গ্রেফতার করে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম স্কোয়াড বা এটিএস। গ্রেফতার হওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল শ্রীকান্ত প্রসাদ পুরোহিত স্বীকার করেছেন, মালেগাঁও এবং আরো কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের তিনিই মূল হোতা। এটিএস আরো কয়েকজন সামরিক অফিসারকে গ্রেফতার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি নিয়েছে।
এই গোষ্ঠীটি সামরিক বাহিনীর কাছ থেকেই মারাত্মক বিস্ফোরক ও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করেছে। মুম্বাইয়ের অ্যান্টি-টেরোরিজম স্কোয়াড সামরিক বাহিনীকে যেসব তথ্য প্রদান করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শ্রীকান্ত প্রসাদ পুরোহিত ২০০৪-০৫ সালে যখন জম্মু কাশ্মীরে মোতায়েন ছিলেন, সে সময় তিনি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের লাইসেন্স গ্রহণ করেন। এখানে বলে রাখা দরকার জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনী স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মোকাবেলা করার জন্য কাশ্মীরের সংখ্যালঘুদের নিয়ে গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনী গঠন করেছে এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র তুলে দেয়ার এক প্রকল্প কার্যকর করছে। সম্ভবত এই খাত থেকেই লেফটেন্যান্ট কর্নেল পুরোহিত অস্ত্রশস্ত্রসহ বুলেট, বারুদ ও বিস্ফোরক সরবরাহ করছিলেন। শ্রীকান্ত পুরোহিত মুসলিমবিরোধী জঙ্গি সংগঠনও গড়েছেন যার নাম ‘অভিনব ভারত’।
তিনি সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র ও বুলেট সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে এ চক্রের হাতে তুলে দেন। সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়া সত্ত্বেও মধ্যপ্রদেশের পঞ্চমাহারি স্থানে হিন্দু যুবকদের নিয়ে গত আগস্ট মাসে এক ট্রেনিং ক্যাম্পের আয়োজন করেন। এ ছাড়া পুনেতে তার নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিদের অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ব্যবহার শেখানো হয়। এখানে ৫৪ জন হিন্দুত্ববাদী তরুণ প্রশিক্ষণ নেয়। অবশ্য ভারতের প্রতিরক্ষমন্ত্রী এ কে অ্যান্টানিও মুসলিম অধ্যুষিত কয়েকটি স্থানের বিস্ফোরণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জড়িত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আরেকটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল পুরোহিত কিছু দিন আগে কলকাতায় এসে বাংলাদেশের এক হিন্দু জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে গোপন বৈঠক করেন। বাংলাদেশভিত্তিক এই হিন্দু জঙ্গি গোষ্ঠীকে তিনি কী ধরনের কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নাশকতামূলক কাজেই তাদেরকে যে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা জানি না আমাদের বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে কতটা সতর্ক রয়েছে।
যদিও এ সরকারের কর্মকাণ্ডে ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় অনুগত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
যা হোক, আমরা আবার শাবানা আজমি আর নাসিরুদ্দিন শাহর বক্তেব্য ফিরে আসি। নাসিরুদ্দিন শাহ বলেছেন, হিন্দি ছবিতে সন্ত্রাসবাদী মানেই মাথায় ফেজটুপি আর পাজামা পরা মুসলিমদের ছবি দেখানো হয়। হায়! এটা কি শুধু ভারতের চিত্র? আজকে সমগ্র বিশ্বে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে মুসলমানদের টার্গেটের প্রতিচ্ছবি। জর্জ বুশের একেকজন অনুসারী প্রকাশ্যে মুসলমানদের ওপর আঘাত হানতে পারছে না বলে ঘৃণা ছড়ানোর মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এটা শুধু ভারতের চিত্র নয়, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশেও তো সমাজের সবচেয়ে খারাপ লোকটিকে চিত্রিত করা হচ্ছে টুপি ও দাড়িওয়ালা হিসেবে। বরং ভারতের চেয়ে আমাদের এই দেশে এ প্রবণতা বেশি। নাসিরুদ্দিন শাহের ভাগ্য ভালো যে তাকে বাংলাদেশের টেলিভিশন বা সিনেমা দেখতে হয় না। দেখলে হয়তো ভারতের চলচ্চিত্র সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে লজ্জা পেতেন। নাসিরুদ্দিন শাহ ভারতের সিনেমা জগতের কথা বলেছেন, কিন্তু আমাদের দেশের মুসলমানদের অবস্থা কী? জামিয়া মিল্লিয়ার ভাইস চ্যান্সেলর তো তার দুঃখের কথা বলতে পেরেছেন।
বাংলাদেশের ভালো কোনো মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল যদি বলেন, তার ছাত্ররা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, পরদিন বাংলাদেশের সংবাদপত্রে সে খবর বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হবে। সে মাদ্রাসায় সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এমন কেচ্ছা-কাহিনী প্রকাশ হওয়াও বিচিত্র নয়। জামিয়া মিল্লিয়া যেখানে প্রতিকূল পরিবেশে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করছে, সেখানে আমরা কিভাবে আরবি জানা বা মাদ্রাসা পড়া ছাত্রদের যাতে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা যায় তার আয়োজন করছি। জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়ার পরিবর্তে কারো কারো জন্য বন্ধ করে দিচ্ছি। পার্থক্য হচ্ছে ভারতে মুসলমানরা নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে হিন্দু বর্ণবাদী অভিজাত সম্প্রদায়ের হাতে, আর এ দেশে মুসলমানদের একাংশের হাতে অপর অংশ বঞ্চিত হচ্ছে।
হীনম্মন্যতা নামের এ অসুখ এমনই যে, আমাদের গোটা জাতির ধ্বংস ডেকে আনবে। শাবানা আজমি-নাসিরুদ্দিন শাহের তবুও সান্ত্বনা এতটুকু যে, সংখ্যালঘু হিসেবে তাদের সামনে প্রতিবাদ করা ছাড়া আর কী-ই বা করার আছে। কিন্তু এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কার কাছে প্রতিবাদ জানাবে? তাদের সান্ত্বনারই বা কী আছে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।