কেবল গণমুখী শিক্ষা এবং গণমুখী রাজনীতিই পারে সালাউদ্দিনদের সকল প্রতিক্রিয়াশীলতার বাইরে রাখতে । সুন্দর কিশোরকে ধর্মান্ধ না করে সমাজের পথে নিতে, প্রগতির পথে নিতে, মানুষের কল্যাণে পরিচালিত করতে.......
কেউ বলবেন শিবিরের সন্ত্রাসী মারা গেছে, বেশ হয়েছে । কেউ বলবেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী শক্তি যারা বাংলাদেশকে স্বীকার করে না, লাল সবুজ পতাকায় যাদের আস্থা নেই, যারা পাকি জানোয়ারের বংশধর, যারা স্বাধীনতার শত্রু তাদের দোষর মারা গেছে , বেশ হয়েছে । আবার কেউ কেউ বলবেন, উগ্র ধর্মান্ধ জানোয়ার মারা গেছে, এদের আরো মারা উচিৎ, দেখা মাত্র গুলি করা উচিৎ...................... আরো শত অভিধা দিয়ে হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করবেন, বৈধতা দেবেন, উস্কানি দেবেন, মেনে নেবেন । আমার স্ট্যাটাসকেও গালাগালি করতে পারেন ..................... এবং অনেকে করবেন ।
আমি তা জানি ............... কিন্তু কোন যুবক মারা যায়নি , কোন অস্ত্রধারী মারা যায়নি, মারা গেছে সালাউদ্দিন:একজন কিশোর ....
কিন্তু তারপরও কথা থাকে । কিছু প্রশ্ন থাকে ।
ছেলেটি দশম শ্রেণিতে পড়তো । নাম সালাউদ্দিন । যখন তার খেলাধূলা করে শীতের বিকেলেও দরদর করে ঘাম ঝড়ানোর কথা তখন সে রাজনৈতিক খেলার দর্শকের ভূমিকায় থেকে মৃত্যু বরণ করলো ।
ভোটের দিন বিকেলে (যতটুকু জানি) ক্ষমতার লড়াই দেখতে গিয়ে একটি ধাতব বুলেট বুকে সেঁটে পৃথিবী ছেড়েছে সালাউদ্দিন । সে শিবিরের কর্মী ছিল । শিবির বলবে,‘ সে শহীদ হয়েছে’ , আমাদের প্রগতিশীল বেল্টের অনেকে বলবেন,‘ শিবিরের ক্যাডার মারা গেছে’ । আমি বলতে চাই একটু ভিন্ন কথা,‘ একটি কিশোর মারা গেছে । ’ সে জান্নাত পাবে নাকি জাহান্নামে যাবে, সে হিসেবের খাতা আমি উল্টাতে চাই না ।
তারপরও আরো কিছু প্রশ্ন থাকে ....
এক.
সালাউদ্দিন একটি কিশোর । দশম শ্রেণি পড়ুয়া একটি ছেলে ধর্মকে ব্যবহার করে মুনাফা অর্জনের কথা চিন্তা করতে পারে না । ‘একাত্তরে কি করেছে জামাত ?’ ‘স্বাধীনতার মানে কি ?’ , বাংলাদেশের উজ্জ্বল অধ্যায় ‘বায়ান্ন’ নিয়ে কেউ তার সাথে হয়তো কথাও বলেনি । খালি মস্কিকে খেলেছে শিবিরের কর্মীরা । কোমল কিশোরের ফাঁকা মাথায় ঢুকিয়েছে ধর্মান্ধতা ।
নাম লিখিয়েছে ‘শিবিরের খাতায় । ’ সে বুঝতেও পারেনি ‘কোথায় চলেছে সে নিজে ?’
আর আমরা শহুরে মেজাজি ভদ্রলোকেরা বাচ্চাদেরকে ‘হায়েনা’র মুখে ছেড়ে প্রগতীর বুলি আউড়াচ্ছি । চায়ের টেবিলে , সকালের নাস্তার শীতল টেবিলে চপেটাঘাত করে শরীর গরম করছি । মাঠ ফাঁকা । খেলছে শিবির কর্মী ।
জালে ধরা পরছে অসহায় সালাউদ্দিনরা । মরছে সালাউদ্দিনরা । আমরাই আবার ‘শিবিরের সন্ত্রাসী’ বলে গালি দিচ্ছি একটি মৃত কিশোরকে, ক্ষমতার পালা বদলে হাজারো নিরপরাধ মানুষের সাথে আকাশের পথে যাত্রা করছে দুচারটে কিশোর অপরাধী ; যাদের ফুটফুটে শীতের রাতে খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার কথা ছিল ।
কোন মানুষের সাথে আলাপে না গিয়ে ‘হাসিনা-খালেদা’র গুষ্ঠি উদ্ধার করছি । সারাটা বিকেল ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে ভর সন্ধ্যায় ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’ বইটি বগল থেকে ছুঁড়ে ফেলে হতাশ হয়ে বলছি ,‘হাবা গোবা জনগণ ।
বিপ্লব এখানে হবে না । ’ কোন মানুষের খোঁজ নিচ্ছি না, কোন মানুষের সাথে কথা বলছি না, ঘামে ভেজা শরীর দেখলে ঘৃণায় জ্বলছি । আবারও মাঠ ফাঁকা । শিবির বসে নেই । সালাউদ্দিনদের গিলেই যাচ্ছে ।
সালাউদ্দিনরা মরেই যাচ্ছে । আমরা পরাণ ভরে গালিও দিয়ে যাচ্ছি যেনবা আমাদের আর কোন দায়িত্ব নেই । সালাউদ্দিনদের প্রতি আমাদের কোন টান থাকতে নেই , তাকে সচেতন করার ভার আমাদের নয় । সালাউদ্দিনদের ধ্বংস দুচোখ ভরে দেখার জন্যই আমাদের জন্ম ।
দুই.
যতই প্রগতীর কথা বলি ।
কী করেছি আমরা প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে ! ক্ষমতার প্রয়োজনে অনেক তথাকথিত প্রগতিশীলদের দেখেছি প্রতিক্রিয়াশীলতার শিরোমনিদের সাথে হাত মেলাতে । বিপদে আপদে গাছের গোড়ায় পানি দিতে । আবার সেই গাছ যখন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরছে সালাউদ্দিনদের তখন বলতে শুনেছি ,‘ দেখা মাত্র গুলি । ’ কেন ? কার স্বার্থে ? ক্ষমতার জন্য জনজীবনের শিকড় নিয়ে হলি খেলা কেন ? সালাউদ্দিনের মত কিশোর ছেলেরা কেন ধর্মান্ধ হবার সুযোগ পাবে ? তাহলে বিদ্যালয় কেন ? সব মাদ্রাসায় পড়লেই চলে ।
তিন.
মাশাল্লাহ্ আমরা পহেলা বৈশাখে পুরো বাঙালি ।
পান্তা ইলিশের সাথে সেকলো-২০ লাগতে পারে তবে একদিন বাঙালি হতেই হবে । কথাও আমাদের কম নয় ,‘আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ ‘ । কোথায় সে চর্চা ? গ্রামের একটি ছেলে কোন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দেখে সে শিবির আর প্রততিশীলদের মধ্যে পার্থক্য করবে ? কেন আছে সংস্কৃতির উপর মন্ত্রনালয় ? এই টিএসসিতে নাটক-আবৃত্তি আর দালালির জন্য ? কেউ মরলে শহীদ মিনারে খাটিয়ার পাহারা দেবার জন্য ? নানা দলের দালালির জন্য ? ‘কেউ ভাবছে না সালাউদ্দিনদের কথা । কেউ তাকে সচেতনতার দায়িত্ব নেবে না । ‘ মরার পরে সবাই গালি দেবে ।
কিশোর হিসেবে সে ভালবাসা টুকুও পাবে না কারণ সে শিবিরের খাতায় হয়তো কাঁপাকাঁপা হাতে নাম লিখিয়েছে । অথচ, সালাউদ্দিনরা শিবিরের খপ্পরে পরার দায়ভার আমাদের ঘাড়েই পড়ে বেশি ........ আমরা সে দায়ভার নেবো না ; কেবল গালি দেবো ..... .........................................................
চার.
অনেক সংখ্যালঘুদের বাড়ি পুড়েছে । মন্দির পুড়েছে । আপনজন হারিয়েছে । কতটুকু কষ্টের হতে পারে তা আমি একটু বুঝি ।
এর জন্য অনেকটা ( পুরোও হতে পারে, তা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার ) শিবির দায়ী । সালাউদ্দিনও শিবির করতো এবং সে একজন কিশোর । আমি সব কিশোর এবং শিশুদের (যাদের বয়স ১২’র কম)কথা বলছি । একটি অস্ত্রের ট্রিগারের কোন শাস্তি হয় না , শাস্তি হওয়া উচিৎ চালকের । কত মশা মারবেন যদি ড্রেনের ময়লা পানি ফেলে তা পরিষ্কার না করেন ? কয়েল জ্বেলে রাত কাটানো চলে কিন্তু সব মশা ধ্বংস করা যায় না ।
পাঁচ.
কেবল গণমুখী শিক্ষা এবং গণমুখী রাজনীতিই পারে সালাউদ্দিনদের সকল প্রতিক্রিয়াশীলতার বাইরে রাখতে । সুন্দর কিশোরকে ধর্মান্ধ না করে সমাজের পথে নিতে, প্রগতির পথে নিতে, মানুষের কল্যাণে পরিচালিত করতে .............................
আপনার পাশের কিশোরটি যেন সালাউদ্দিনের পথে না হাঁটে , সে যত্নটুকু নিন ................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।