ভারতের সঙ্গে তিস্তা ও জলসীমান্ত চুক্তিতে ব্যর্থ হওয়ায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাই পাননি বলে মনে করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা। পত্রিকাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দুই চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে যাওয়া এবং ‘বেশি কথা বলা’ কাল হয়েছে দীপু মনির।
আনন্দবাজার লিখেছে, আগের পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও ভারতের সঙ্গে তিস্তার জলবণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন করা যায়নি। সে জন্যই কি এ বার শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেন দীপু মনি? বাদ পড়েছেন আগের দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও মহিউদ্দিন খান আলমগীরও। বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজের হাতেই রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আনন্দবাজার জানায়, রবিবার বিকেলে হাসিনার ৪৯ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ২৯ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ছাড়া শপথ নেন দুই উপমন্ত্রীও। পুরনো শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন আগের বার মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও এই দফায় বিমান ও পর্যটনের দায়িত্ব পেয়েছেন। পুরনো তথ্য মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুকেই। কিন্তু হাসিনা মন্ত্রিসভার সব চেয়ে বড় নতুনত্ব বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এক জনকে পূর্ণমন্ত্রী ও দু’জনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দলের নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ বিরোধী নেত্রী হলেও তাঁর স্বামী দেশের প্রাক্তন সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মন্ত্রী পদমর্যাদায় নিজের বিশেষ দূত নিয়োগ করেছেন হাসিনা। বিরোধীরাও মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ায় গণতন্ত্র ক্ষুন্ন হয়েছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করলেও নিজের বাড়ির লনে এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসিনা বলেন “আপনারাই সকলকে নিয়ে চলতে বলেন, আবার তা করতে গেলে আপনারাই প্রশ্ন তোলেন!”
আনন্দবাজার জানায়, তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর হাসিনাকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। হাসিনার প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, নেত্রী শপথ শেষে বাড়ি ফেরার পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তাঁকে ফোন করেন মনমোহন। আজাদ বলেন, “মনমোহন সিং বলেছেন, ভারতের মানুষ যে কোনও পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পাশে থাকবে। ” দু দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি অমীমাংসিত দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভায় প্রায় ১২ বছর পরে ফিরেছেন তাঁর দলের তিন প্রবীণ নেতা। এরা হলেন আমির হোসেন আমু (শিল্প), মোহাম্মদ নাসিম (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ) ও তোফায়েল আহমেদ (বাণিজ্য)। ২০০৬-এ অভ্যুত্থানকারী সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে হাসিনাকে সরিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংস্কারের দাবি জানানোর কারণেই গত মন্ত্রিসভায় এঁরা জায়গা পাননি। পরে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সময়ে তোফায়েল আহমেদকে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু আগের মন্ত্রিসভার যে সব সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ ও অকর্মণ্যতার অভিযোগ উঠেছিল, এই মন্ত্রিসভায় তাঁদের বাদ দিয়েছেন হাসিনা।
আনন্দবাজার লিখেছে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রের খবর, দীপু মণির বিরুদ্ধে তাঁর সতীর্থরাই ‘বেশি কথা বলা’র অভিযোগ করতেন। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হাসিনার উপদেষ্টারাও তাঁদের বিদেশমন্ত্রীর ওপর খুশি ছিলেন না। তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য দীপু মণি কলকাতায় এসে মহাকরণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে তিনি বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের বদ্ধমূল ধারণা, এই ঘটনার পর থেকেই তিস্তা চুক্তি ও স্থলসীমা চুক্তি নিয়ে বিরোধিতায় অনড় অবস্থান নেন মমতা।
ফলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরে গিয়ে হাসিনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসার পরেও অতি গুরুত্বপূর্ণ এই দুই চুক্তি বাস্তবায়ন করা যায়নি। মমতার সঙ্গে বাদানুবাদকে দীপু মণির সব চেয়ে বড় ‘কূটনৈতিক হঠকারিতা’ বলে মনে করা হয়, যার খেসারত দিতে হয়েছে দেশ ও সরকারকে। নির্বাচনী অন্তর্বর্তী সরকারেই দীপু মণিকে ছেঁটে দিয়েছিলেন হাসিনা। এ বারও বাদ পড়তে হল তাঁকে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শেয়ারবাজার বিপর্যয় সামলাতে অকর্মণ্যতার অভিযোগ উঠলেও আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে অর্থ মন্ত্রণালয়ই দিয়েছেন হাসিনা।
দায়িত্ব পাওয়ার পরে সৎ ভাবমূর্তির এই নেতা জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতি সব চেয়ে বেশি মার খাচ্ছে একের পর এক হরতাল-অবরোধে। ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন লাটে উঠেছে, মূল্যবৃদ্ধিও আকাশ ছুঁয়েছে। মুহিত জানিয়েছেন, সংসদ শুরু হলে আইন করে হরতালকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব আনবেন তিনি। হরতাল ডেকে দেশকে পিছিয়ে দেওয়া নাশকতা ছাড়া কিছু নয়।
এ দিন শপথের সময়ে গোমড়া মুখে বেগম রওশনের পাশে বসে ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদ।
হাসপাতাল থেকেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। শপথের পরে হাসিনা তাঁর নাম মন্ত্রী পদমর্য়াদার দূত হিসেবে ঘোষণা করার পরে প্রাক্তন এই সেনাশাসকের মুখে হাসি ফোটে। রাষ্ট্রপতির বাসভবন থেকে আর হাসপাতাল নয়, নিজের বাড়িতেই ফেরেন এরশাদ সাহেব।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।