প্রিয় বোন,
কেমন আছ? ভালো নেই জানি! তবু কেন
জিজ্ঞেস করলাম?
তুমি যদি কোনো আশার বাণী শোনাও
—এই প্রত্যাশায়! তোমার
কাছে আবার আশার বাণী কিসের?
‘দেশ-ভাই’র বোকামি দেখে হাসছ?
তুমি যে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার
ধারেকাছে থাক। আমরা তো আর
জানতে পারি না ‘দেশ-মা’র এমন ‘করুণ’
যন্ত্রণায় কী করবেন সৃষ্টিকর্তা!
তুমি হয়তো দূষিত বাতাসের
বাইরে থেকে দেখতে পাচ্ছ কোন
দিকে যাচ্ছে আমাদের সার্বভৌমত্ব।
সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমতের
অপেক্ষায় আছি কেন?
আমরা যে বড় ‘অক্ষম’ হয়ে গেছি।
সত্যিই আমরা ‘প্রতিবন্ধী’ হয়ে গেছি!
সত্য, সুন্দর, মা আর মাটি। ভীষণ
যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছে।
অন্ধকারে চশমা পরে আমরা সেসবকে এক্কেবারেই
‘দেখছি না’। আবার যারা ‘অসহ্য’
যন্ত্রণার কথা মুখ
ফুটে বলতে চাইছে তাদের দেশের
সবচেয়ে বড়
‘গালি’টি দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছি দেশান্তরে!
যারাই মুখ ফুটে বলতে চাইছে তাদের
‘আত্মীয়-কুটুমবিরোধী’
বলে প্রতিক্রিয়াবাদী বানিয়ে দিচ্ছি।
আচ্ছা, তুমি কি বলতে পার
‘প্রতিক্রিয়া’ আর ‘প্রগতি’র
মানে কী।
আমি তো বুঝি না। তবে আমার এক
বন্ধু দিয়েছে বর্তমান সময়ের
প্রতিক্রিয়া আর প্রগতির সংজ্ঞা।
কিছুই বুঝতে পারিনি।
ও বলল, তোমার
মতো হাজারো ‘দেশবোন’ খুন হলেও
‘চুপ’ করে থাকাটা প্রগতি! মেয়ের
বয়সী নারীদের সঙ্গে পশুসুলভ নৃত্য
নাকি প্রগতি! প্রগতি নাকি সত্য-
সুন্দর
থেকে দেশপ্রেমী লাখো তরুণকে সরিয়ে নেয়ার
আজগুবি গল্প বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা!
প্রগতির অর্থ নাকি সভ্যতায়
‘বিশ্বাস’ শব্দটি উঠিয়ে ‘উপভোগ’
শব্দটি প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ চেষ্টা! বছর
শুরুর দিনে সীমান্তে দুটি তাজা প্রাণ
ঝরে গেলে সেটিকে বন্ধুত্বের উপহার
হিসেবে মেনে নিতে ‘আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে’
মর্মে বক্তব্য দেয়া নাকি প্রগতি!
আচ্ছা, তোমার কাছে কী অস্ত্র ছিল?
একে-৪৭! মেশিনগান! নাকি দূরপাল্লার
ক্ষেপণাস্ত্র!
ও হ্যাঁ, ‘প্রতিক্রিয়া’র সংজ্ঞায়
বন্ধুটা কী বলেছিল তাও একটু বলি!
প্রতিক্রিয়া নাকি সত্য, সুন্দর, দেশ,
মা আর মাটির জন্য
জীবনোত্সর্গে প্রস্তুত থাকা!
প্রতিক্রিয়া নাকি ‘সত্য’কে সত্য আর
‘মিথ্যা’কে মিথ্যা বলে গণ্য করা, সব
বদলে দেয়া নয়!
প্রতিক্রিয়া নাকি রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক,
প্রাযুক্তিক কিংবা তথ্যমূলক
যে কোনো ধরনের অন্যায়-
অবিচারকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রতিবাদ
করা! প্রতিক্রিয়া নাকি ‘উপভোগে’র
নামে পশুসুলভ আচরণ থেকে বিরত
রেখে ‘বিশ্বাস’কে প্রাণের
গভীরে আঁকড়ে রাখা। আর এই
বিশ্বাসের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত
করতে নিজের তাজা কলিজাকে হাতের
মুঠোয় রেখে অবিরাম সংগ্রাম
করা নাকি প্রতিক্রিয়া।
এখন তুমি বল—আমি কোন পক্ষের।
থাক, তুমি বোধহয় রাগ করছ!
আজ তোমার ‘মৃত্যু’ বার্ষিকী, অথচ
এখনও আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জানালাম
না।
কী করব বল। তোমার আর আমার,
আমাদের দেশ মায়ের
ভালোবাসা তো আনুষ্ঠানিক নয়।
আমাদের ভালোবাসাতো সারাজীবনের
প্রতিটি ক্ষণের জন্য,
প্রতিটি মুহূর্তের জন্য।
কী! আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধার
কথা বলে আবার ক্ষেপিয়ে দিলাম। না,
না, আর বলব না।
আজই তোমাকে কন চিঠি লিখলাম
তাতো বুঝিই।
তোমার জন্য খাতা-পত্রের পৃষ্ঠাও
যে আনুষ্ঠানিক হয়ে গেছে।
তোমার পর আরও কত ‘দেশবোন-
দেশভাই’ বন্ধুত্বের বলি হচ্ছে...!
হয়তো একদিন আমিও...!
না, না। রাগ করিও না। আমাদের
মতো প্রত্যয়ী তারুণ্য তোমার
মতো আকাশের
তারা হয়ে গেলে সৃষ্টিকর্তা আরও
লাখো তরুণের মনে ‘দেশ মা’র
ভালোবাসা বুনে দেবেন।
সেই
ভালোবাসা একদিন সত্যিই তোমার
মৃত্যুর সংজ্ঞা বদলে দেবে।
হয়তো সেদিন সত্যিই তোমার
মৃত্যুকে শহীদ বলা যাবে!
ভাবিও না বোন। কেউ কেউ এ দেশের,
এ সমাজের বিশ্বাসের এত্তটুকুন
ক্ষতিও করতে পারবে না! খানিক
যা লাফালাফি ওটা ‘ওঝা’ হওয়ার
পূর্বাভাস! তোমার জন্য বরাদ্দ
আনুষ্ঠানিক কাগজ এক্কেবারে শেষ
পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
স্রষ্টার কাছে সত্য, সুন্দর, দেশ, মা,
মাটির জন্য দোয়া করিও।
ভালো থাকিও।
ইতি—
তোমার ‘প্রতিক্রিয়া’ ও ‘প্রগতি’
দোলাচলে থাকা ভাই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।