ম্যাডামের আজকের বক্তব্য পড়লাম। পড়ার পর মনে হল ছোট মুখে কিছু বড় কথা বলতেই হয়...
>তিনি বলেছেন, "পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনীসহ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের প্রতি আমার আহ্বান, বাংলাদেশের মানুষের টাকায় যে অস্ত্র কেনা হয়, সেই অস্ত্র নির্বিচারে জনগণের উপর ব্যবহার করবেন না। আপনাদের পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে, দেশের জনগণের জীবন রক্ষা করা। নির্বিচারে তাদের জীবন কেড়ে নেয়া নয়। একটি গণবিচ্ছিন্ন ব্যর্থ সরকারের অন্যায় হুকুমে আপনারা গণহত্যাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না।
বরং জনগণের মৌলিক মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। "
>>কিন্তু তিনি বলেননি যে জামাত-শিবিরের সহিংসতার কারণে দেশের জণগণের জীবন আজ হুমকির মুখে। এবং জামাতীদের উপর গুলি চালানো যদি দেশের জনগণের উপর গুলি চালানো হয়, তাহলে কি নন-জামাতী আমরা যারা আছি বাংলাদেশে, তারা কি 'জনগণ' না? আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে কি পুলিশ জামাতীদের উপর গুলি চালাবে না? তাহলে আমাদের টাকায় পুলিশকে অস্ত্র কিনে দেওয়া হয় কেন সে অস্ত্র যদি আমাদেরই নিরাপত্তা দিতে না পারে?!?
>তিনি বলেছেন, "দেশ আজ এক ভয়াবহ সংকটে। এমন ভয়ঙ্কর অবস্থা স্বাধীনতার পর আর কখনো সৃষ্টি হয়নি। গোটা জাতিকে আজ বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে।
দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম পবিত্র ইসলাম এবং আমাদের মহান স্বাধীনতাকে আজ পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষ বানিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা-প্রিয় তেমনি ধর্মপরায়ন। ধর্ম কিংবা স্বাধীনতা কোনোটির উপর আঘাতই তারা সহ্য করে না। ইসলাম এবং স্বাধীনতায় কোনো বিরোধ নেই। অথচ একটি কুচক্রি মহল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে পবিত্র ইসলাম, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে নোংরা কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়েছে।
এতে স্বাভাবিকভাবেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি দারুণভাবে আহত হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ধর্মপ্রাণ মানুষ এর বিরুদ্ধে যখন শান্তিপূর্ণ পন্থায় প্রতিবাদ জানাবার উদ্যোগ নিয়েছে, অপরাধীদের সনাক্ত করে বিচারের দাবি তুলেছে তখন সরকার তাদের উপর চালিয়েছে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। শুধু তাই নয়, এইসব ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসর হিসাবে চিত্রিত করে সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। "
>>কিন্তু তিনি বলেননি যেসব স্বাধীনতাবিরোধীদের ৭১ এর পরই নিশ্চিহ্ন করা দরকার ছিল, তাদের পুণর্বাসন করার কারণেই আজ এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেননি, ইসলাম ও জামায়াত এ ইসলামকে মিশিয়ে ফেলে জামাতীরাই আমাদের মহান স্বাধ্যীনতা ও দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম পবিত্র ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
জামাতীরা যখন ইসলামের নামে স্বাধীনতার চেতনার মূল শহীদ মিনার ভাংচুর করেছেন তখনই স্বাধীনতা ও ইসলাম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে জামাতীদের মাধ্যমে। আর শহীদ মিনার ভেঙ্গে জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে কিভাবে "শান্তিপূর্ণ পন্থায় প্রতিবাদ" করা হয় সে ব্যাপারেও ম্যাডাম কোন মন্তব্য করেন নাই।
>তিনি বলেছেন, "শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রতিটি অভিযুক্তকে ফাঁসি দেওয়ার যে দাবি জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শুধু সমর্থনই ব্যক্ত করেননি বরং ট্র্যাইবুনালের বিচারকদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের দাবি বিবেচনায় রেখে রায় দেওয়ার আহ্বান জানান। "
>>কিন্তু তিনি বলেননি একজন মানুষের বিরুদ্ধে রাজাকার হিসেবে লুট, ধর্ষণ, গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর কিভাবে তাকে ফাঁসী ছাড়া অন্য দন্ড দেওয়া যৌক্তিক হয়?
>তিনি বলেছেন, "আমি গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ভাইবোনদের প্রতি আহ্বান জানাই অতীতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আপনারা যেমন সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছিলেন আজ দেশ ও জাতির এই দুঃসময়ে ঠিক সেভাবেই জনগণের প্রকৃত আশা-আকাঙ্খা ও সংগ্রামকে প্রচার ও প্রকাশ করে চলমান গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নিন।
আমরা শান্তির পক্ষে।
আমরা সংঘাত-সংঘর্ষ-হানাহানির বিপক্ষে। আমরা গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে। দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পক্ষে আমাদের দৃঢ় অবস্থান। "
>>কিন্তু তিনি বলেননি, অতীতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আমরা যেভাবে রাস্তায় নেমেছিলাম, এখনো আমরা নেমেছি এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছি। আমরা শান্তির পক্ষে বলেই দেশব্যাপী গণজাগরণ মঞ্চে অহিংস কর্মসুচীর মাধ্যমে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছি।
বরং সংঘর্ষ হানাহানির পথে হেঁটেছে আপনার রাজনৈতিক দোসর জামাত এ ইসলামী। তাই দেশের প্রতিটি নাগরিকের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জামাতকে নিষিদ্ধ করা উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব- এ কথাটাও তিনি সযত্নে এড়িয়ে গেছেন।
এবং সর্বশেষে আগামী মঙ্গলবার হরতালের ডাক দিয়ে তিনি দেশের মানুষকে একটা মেসেজ দিলেন। আগে বিএনপি কর্মসুচী দিত, জামাত তাতে সংহতি/সমর্থন দিত অথবা জোটের পক্ষ থেকেই অভিন্ন কর্মসুচীর ঘোষণা আসত। এ থেকে বুঝা যেত বিএনপি দেশের মূল বিরোধী দল, জামাত তাদের সহযোগী ছিল।
কিন্তু গত কয়েকদিনের কর্মসুচী এবং আগামী হরতালের ঘোষণায় একটা ব্যাপার পরিষ্কার, বিএনপি না, জামাত এ ইসলামীই এই মুহুর্তে দেশের প্রধান বিরোধী দল। জামাতীরা যে কর্মসুচী দেয়, বিএনপি তাতে সমর্থন দেয় জোট টিকানোর স্বার্থে। কারণ জোট ভাংলে এদেশ থেকে বিলীন হতে বিএনপি দলটির বেশি সময় লাগবে না।
পরিশিষ্টঃ দেশের এই দুর্যোগময় দিনে প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রীর অবস্থান জাতিকে প্রায় এক দশকের পুরনো একটি বিখ্যাত প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে দিল। বিশিষ্ট খাপো, মাচো, মাপো সাকাচৌ এককালে জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, "কুকুর লেজ নাড়ে, না লেজই কুকুরকে নাড়ায়?"।
আজ আমরা দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে বলতে পারি, "লেজই কুকুরকে নাড়ায়"। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।