তখন তিনি রেড ডেভিলদের একজন। জয় করলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ক্লাব বিশ্বকাপ। কেবল শিরোপাই নয়, সেবার গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৭-০৮ মৌসুমে করেছিলেন ৪৯ ম্যাচে ৪২ গোল। লিওনেল মেসির আগমন ঘটলেও তখনো এত বড় তারকা হয়ে উঠেননি এ আর্জেন্টাইন।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাঁধেই বর্তেছিল জিদান-রোনালদিনহোদের উত্তরাধিকার। পর্তুগিজ তারকা মাত্র ২৩ বছরেই জয় করেছিলেন ব্যালন ডি'অর এবং ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার। তবে সেখানেই শেষ। এরপর ফুটবল দুনিয়া জড়িয়ে গেল লিওনেল মেসির মায়াজালে। টানা চারটি বছর পুরো ফুটবল বিশ্ব আচ্ছন্ন হয়ে থাকল মেসিতে।
মাঝে মধ্যে রোনালদোর আলোতেও ম্লান করেছে ভক্তরা। তবে বিদূ্যৎ চমকের মতোই এ আলো ছিল ক্ষণস্থায়ী। অবশেষে পাঁচ বছরের অপেক্ষার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সেই পুরনো স্থানে দেখল ফুটবল দুনিয়া। যেখানে তিনি শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয়বারের মতো জয় করলেন ব্যালন ডি'অর।
হলেন ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার।
'এমন কোনো শব্দ নেই, যা দিয়ে আমার মনের অবস্থা প্রকাশ করতে পারি। ' পাঁচ বছরের অপেক্ষার অবসান হওয়ার পর এভাবেই বলতে লাগলেন আবেগে আপ্লুত রোনালদো। আনন্দাশ্রু তখনো চিক চিক করছিল তার চোখে। রোনালদো বললেন সতীর্থদের কথা।
পরিবারের সমর্থনের কথা। বললেন ভক্তদের কথাও। 'আমি আমার সতীর্থদের ধন্যবাদ দিই। আমার পরিবারকে এবং যারা আমাকে জানে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এই পুরস্কার জয় করার জন্য অনেক কিছুই কোরবানি দিতে হয়েছে আমাকে।
' রোনালদো অনেকটা বদলে গেছেন। সেই পুরনো প্রেক্ষাপটে রোনালদোকে দেখা গেল না। সোমবার তার চোখের অশ্রু যেন নতুন রোনালদোকেই উপস্থাপন করছিল ফুটবল ভক্তদের সামনে। গত বছরে রিয়াল মাদ্রিদ কোনো শিরোপা জয় করেনি। কিন্তু একজন ফুটবলারকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য যা করার প্রয়োজন, তার সবই করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
২০১৩ সালে করেছেন ৬৯টি গোল। এর মধ্যে ছয়টা হ্যাটট্রিকও করেছেন তিনি। বিপরীতে লিওনেল মেসি করেছেন মাত্র ৪৫ গোল! তবে মেসির অর্জনের তালিকায় ছিল স্প্যানিশ লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপও। এ কারণেই হয়ত রোনালদো মেসি ও রিবেরিকেও যোগ্য দাবিদারই বললেন। 'নিঃসন্দেহে আমি এই পুরস্কারের দাবিদার ছিলাম।
তবে মেসি এবং রিবেরিও এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। '
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এর আগেও ব্যালন ডি'অর জয় করেছেন। তবে দ্বিতীয় এই ট্রফিটাই রোনালদোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ! কেন? 'এবারের ব্যালন ডি'অর আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে আমার মা এবং ছেলে উপস্থিত। ' ট্রফিটা পাওয়ার পর সবার আগে ছেলের হাতেই তুলে দিয়েছিলেন রোনালদো।
মা এবং বোনের উপস্থিতিও ছিল রোনালদোর জন্য বিশেষ কিছু। কিছুদিন আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ইউসেবিও। রোনালদোর তাত্তি্বক গুরু। ফিফা ব্যালন ডি'অরের পুরস্কার হাতে বললেন, 'আমি ইউসেবিও এবং নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতি আরও একবার সম্মান জানাতে চাই। ' রোনালদো হারিয়ে দিয়েছেন মেসিকে।
কতটা ব্যবধানে? ২৭.৯৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন রোনালদো। মেসি ২৪.৭২ শতাংশ এবং রিবেরি ২৩.৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। গতবার মেসি ৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে জয় করেছিলেন ফিফা ব্যালন ডি'অর। রোনালদো পেয়েছিলেন ২৩.৬৮ শতাংশ। পরাজয়ের পর গতবারের বিজয়ী মেসি তার টুইটারে লিখেছেন, 'আমি জয় পেলে খুশি হতাম তবে এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
জয়ের ধারা ধরে রাখার জন্যই খেলব। ' মেসি কি রোনালদোকে আগামী ব্যালন ডি'অরের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন!
রোনালদোর পাশাপাশি গত সোমবার ফিফা ব্যালন ডি'অর গালায় বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলারের পুরস্কার জয় করেছেন জার্মানির গোলরক্ষক নাদিন অ্যাঙ্গেরার। তিনি ব্রাজিলের মার্তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাবি ওয়েমব্যাখকে হারিয়েছেন। বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার জয় করেছেন বায়ার্ন মিউনিখের হেইঙ্কেস। তিনি হারিয়েছেন বুরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ক্লপ এবং আলেঙ্ ফার্গুসনকে।
বর্ষসেরা মহিলা কোচ হয়েছেন জার্মানির সিলভিয়া নেইড। তিনি স্বদেশি রালফ কেলারম্যান এবং সুইডেনের পিয়া সানডেজকে হারিয়েছেন। এছাড়া ফিফা পুসকাস ট্রফি জিতেছেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। পেলেকে দেওয়া হয়েছে সম্মানসূচক ফিফা ব্যালন ডি'অর।
ফিফা ব্যালন ডি'অর গালা
ফিফা ব্যালন ডি'অর
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (রিয়াল মাদ্রিদ/পর্তুগাল)
ফিফা বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলার
নাদিন অ্যাঙ্গেরার (ফ্র্যাঙ্কফুর্ট/জার্মানি)
সম্মানসূচক ব্যালন ডি'অর
পেলে (ব্রাজিল)
ফিফা পুসকাস ট্রফি
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (পিএসজি/সুইডেন)
বর্ষসেরা কোচ
হাপ হেইঙ্কেস (বায়ার্ন মিউনিখ)
বর্ষ সেরা মহিলা কোচ
সিলভিয়া নেইড (জার্মানি)
ফিফা ফেয়ার প্লে ট্রফি
আফগানিস্তান ফুটবল ফেডারেশন
ফিফা ওয়ার্ল্ড একাদশ
ম্যানুয়েল নিউয়ার, দানি আলভেস, থিয়াগো সিলভা, সার্জিও রামোস, ফিলিপ লাম, ফ্র্যাঙ্ক রিবেরি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি হার্নান্দেজ, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ও লিওনেল মেসি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।