রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান মৌজায় অবস্থিত আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে দেওয়া রাজউকের অনুমোদন অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বৃহত্তর বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট ইকবাল কবির লিটন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায়।
গত বছর ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান মৌজায় অবস্থিত আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে দেওয়া রাজউকের অনুমোদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া আসিয়ান সিটির অবস্থানগত ছাড়পত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে।
এ আবেদনে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ২ জানুয়ারি এক আদেশে আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পে মাটি ভরাট, প্লট বিক্রি ও যে কোনও ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে দেওয়া রাজউকের অনুমোদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া আশিয়ান সিটির অবস্থানগত ছাড়পত্রও স্থগিত করা হয়।
এছাড়া পরিবেশের ক্ষতি করায় আশিয়ান সিটিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের করা ৫০ লাখ টাকার জরিমানা কমিয়ে ৫ লাখ টাকা করা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আদেশও স্থগিত করা হয়।
এসবের পাশাপাশি আশিয়ান সিটির অনুমোদন সংক্রান্ত সব কাগজপত্র আদালতে জমা দিতে আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ পর্যন্ত তারা কতগুলো প্লট বরাদ্দ দিয়েছে তার একটি তালিকাও দিতে বলা হয়।
হাইকোর্ট আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া অবস্থানগত ছাড়পত্র ও এর নবায়ন মন্ত্রণালয় থেকে জরিমানা কমানোর সিদ্ধান্ত এবং রাজউকের দেওয়া অনুমোদন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
এছাড়া আশিয়ান সিটি কর্তৃক উন্নয়নকৃত এলাকাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং অনুনোমোদিত সকল প্রকল্প ভরাট কার্যক্রম, বিজ্ঞাপন প্রদান, প্লট বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত, ভূমি, পরিবেশ, স্বরাষ্ট্র ও তথ্য সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ন ও বাস্তবায়ন) এবং আসিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
পরে হাইকোটের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আশিয়ান সিটি চেম্বার বিচারপতির কাছে আবেদন করেন। কিন্তু চেম্বার বিচারপতি স্থগিতাদেশ না দিয়ে আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন।
আপিল বিভাগ এ বিষয়ে জারি করা রুল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে বলেন।
এরপর হাইকোর্টের জারি করা ওই রুলের ওপর শুনানি হয় বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। গত বছরের ২৮ মে এই বেঞ্চে শুনানির সময় স্থান সংকুলানের অভাবে আদালতক্ষ থেকে আইনজীবী ছাড়া অন্যদের বের করে দেওয়া হয়। এ কারণে রিট আবেদনকারী আসকের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, এসো নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবিরসহ বেশ কয়েকজনকে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে হয়।
এ ঘটনার পরদিন ২৯ মে রিট আবেদনকারীপক্ষ মামলাটি হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে স্থানান্তরের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছেন।
পরে প্রধান বিচারপতি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন। আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী ইকবাল কবির লিটন।
২০১২ সালে আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম আ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ব্লাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ, নিজেরা করি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ ৮টি সংগঠন।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।