আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশিয়ান সিটির উত্তরা প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা

রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান ও বড়ুয়া মৌজায় অবস্থিত আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ গতকাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ রায় দেন। এ রায়ের ফলে আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া অবস্থানগত ছাড়পত্র ও এর নবায়ন, মন্ত্রণালয় থেকে জরিমানা কমানোর সিদ্ধান্ত এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দেওয়া অনুমোদন অবৈধ বলে ঘোষিত হলো। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি করায় আসিয়ান সিটিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে বলা হয়েছে।

রায়ের পর রিটকারীদের আইনজীবী ইকবাল কবির লিটন বলেন, আশিয়ান সিটি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে মাটি ভরাট, প্লট বিক্রি ও যে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারসহ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।

ইকবাল কবির জানান, যে এলাকার মধ্যে এই প্রকল্প সেই এলাকা একটি প্লাবনভূমি ও জলাশয়। বিদ্যমান খাল ভরাট করে এ প্রকল্প কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। রাজউক যে অনুমোদন দিয়েছে, তা যথাযথ আইন অনুসরণ না করে দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে হাইকোর্ট যে রুল জারি করেছেন তার সমর্থনে দুজন বিচারপতি রায় দিয়েছেন।

আর একজন বিচারপতি রুল খারিজ করে রায় দিয়েছেন। ফলে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান মৌজায় অবস্থিত আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্প অবৈধ হয়ে গেল। এতে প্রমাণিত হয়েছে, আশিয়ান সিটির প্রকল্পে অননুমোদিত জমি ছিল। আদালতে আবেদনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট ইকবাল কবির লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায়, আশিয়ান সিটির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ব্লাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ, নিজেরা করি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন নামের এ আটটি সংগঠন ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর এ রিট করে। রিটে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান মৌজায় অবস্থিত আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে দেওয়া রাজউকের অনুমোদন এবং পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া আশিয়ান সিটির অবস্থানগত ছাড়পত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, আশিয়ান সিটি ৪৩ দশমিক ১১ একর জমির জন্য অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে ২৩০ দশমিক ৪৬ একর জমিতে। তারা যে জমি ভরাট করেছে সেটা নিম্ন জলাভূমি।

জলাভূমি ভরাটের জন্য তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২ জানুয়ারি আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পে মাটি ভরাট, প্লট বিক্রি ও যে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে দেওয়া রাজউকের অনুমোদন এবং পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া আশিয়ান সিটির অবস্থানগত ছাড়পত্রও স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া পরিবেশের ক্ষতি করায় আশিয়ান সিটিকে পরিবেশ অধিদফতরের করা ৫০ লাখ টাকার জরিমানা কমিয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আদেশও স্থগিত করেন আদালত। এসবের পাশাপাশি আশিয়ান সিটির অনুমোদন সংক্রান্ত সব কাগজপত্র আদালতে জমা দিতে আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি যতগুলো প্লট বরাদ্দ দিয়েছে তার একটি তালিকাও দিতে বলা হয়। এ ছাড়া আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া অবস্থানগত ছাড়পত্র ও এর নবায়ন, মন্ত্রণালয় থেকে জরিমানা কমানোর সিদ্ধান্ত এবং রাজউকের দেওয়া অনুমোদন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে আদালত রুল জারি করেন। এ ছাড়া আশিয়ান সিটি যেসব এলাকার উন্নয়ন করেছে, সেসব এলাকাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং অননুমোদিত সব প্রকল্প ভরাট কার্যক্রম, বিজ্ঞাপন প্রদান, প্লট বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। চার সপ্তাহের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত, ভূমি, পরিবেশ, স্বরাষ্ট্র এবং তথ্য সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ন ও বাস্তবায়ন) এবং আশিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আশিয়ান সিটি চেম্বার বিচারপতির কাছে আবেদন করে।

কিন্তু চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশের ওপরে স্থগিতাদেশ না দিয়ে বিষয়টি আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন। আপিল বিভাগ এ বিষয়ে জারি করা রুল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। পরে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রুলের ওপর শুনানি হয়। একপর্যায়ে রিট আবেদনকারীপক্ষ মামলাটি হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে স্থানান্তরের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করে। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন।

বেঞ্চ শুনানি শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।