আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রিটিশ ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রস্তাব

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। গতকাল রাতে দুই পার্লামেন্টেই বাংলাদেশ বিষয়ে উত্থাপিত প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিতর্কের বিস্তারিত জানা সম্ভব না হলেও প্রস্তাবের বিষয়গুলো জানা গেছে। উভয় প্রস্তাবেই বাংলাদেশের দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে ৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটেও একই ধরনের একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়, যাতে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংলাপ শুরুর আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষকে আলোচনায় বসার তাগিদ দিতে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব তোলা হয়। চার্লস ট্যানক, পাওয়েল রবার্ট কোয়ালের তোলা এ প্রস্তাবের ওপরই গত রাতে আলোচনা হয়। এ প্রস্তাবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট ও সহিংসতার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে গত এক বছরে তিন শতাধিক প্রাণহানি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, গত বছরের শুরু থেকে সহিংসতা ও প্রাণহানির অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে বিরোধী দল ও 'জঙ্গিদের' কারণে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কর্মীরাও বিরোধী দলের সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক সূত্র ধরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তাব এবং পরে তা প্রত্যাহার করার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে এতে। প্রস্তাবকারীরা বলেছেন, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরিতে ইইউর পক্ষ থেকে সব দলের প্রতি বারবার আহ্বান জানানো হলেও তা না হওয়ায় বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে, যাতে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। ৫ জানুয়ারির ভোটে কমসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি ও অর্ধেকের বেশি আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন থাকার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সাতটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এগুলো হলো_ ১. নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিশেষ করে নারী-শিশু, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করতে হবে। ২. সংঘাত-সহিংসতা বন্ধ করে সংকট উত্তরণের পথ বের করতে বাংলাদেশে সব পক্ষকে কার্যকর আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো।

৩. সব পক্ষকে এমন একটি সমঝোতায় পেঁৗছানোর আহ্বান জানাতে হবে, যাতে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পথ তৈরি হয়; স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয় এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থকেই সবার আগে স্থান দেওয়া যায়। ৪. ক্ষমতার বাইরে থাকা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতার ও কারাবন্দী রাখার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে এবং গুরুতর সহিংসতার ঘটনায় বিরোধী দলের (গত সংসদের) জড়িত থাকার কঠোর নিন্দা জানাতে হবে। ৫. গণগ্রেফতার বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে, যাতে সবাই শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন, জমায়েত হওয়া বা মতপ্রকাশের অধিকার ভোগ করতে পারে। ৬. ঝুঁকিতে থাকা জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তা বাড়াতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে। ৭. বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের সুরক্ষা দিতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা তারা নেয়।

অন্যদিকে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সেও গত রাতে বাংলাদেশের নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এর পাশাপাশি হাউস অব কমন্সে পেশ করা কিছু প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিউ রবার্টসন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে প্রতিশোধের আশঙ্কা এবং ভীতিমুক্ত অংশগ্রহণমূলক নতুন একটি নির্বাচনের জন্য নতুন সরকারসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে। দেশটির স্থিতিশীলতার জন্য সম্প্রতি কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য এবং বিএনপি চেয়ারপারসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যাতে জরুরি ভিত্তিতে ভবিষ্যতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে একযোগে কাজ করার জন্য তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে হাউস অব কমন্সে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অর্ধেকের বেশি আসনে ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় এবং অন্য অধিকাংশ আসনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতো যুক্তরাজ্যও হতাশ হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী অবশ্য তার সহকর্মী ব্যারনেস ওয়ার্সির ৬ জানুয়ারির বিবৃতি উদ্ধৃত করে বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছিল বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী।

সোমবার হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশের নির্বাচন, সহিংসতা ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি বিষয়ে বাংলাদেশবিষয়ক পার্লামেন্টারি গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান অ্যান মেইন সাতটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন। এসব প্রশ্নের লিখিত জবাব দেন হিউ রবার্টসন, যা মঙ্গলবারের কার্যবিবরণীতে নথিভুক্ত হয়। অ্যান মেইন এবং সায়মন ড্যানচুক হাউস অব কমন্সে বেসরকারি সদস্য দিবসে বাংলাদেশের নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতির বিষয়ে বিতর্কের প্রস্তাবক। শিশুদের প্রতি অবহেলা ও ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ে পূর্বনির্ধারিত বিতর্কের বদলে বাংলাদেশ বিষয়ে এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয় পার্লামেন্টের ব্যাকবেঞ্চ বিজনেস কমিটি। পার্লামেন্টে প্রথমে যে প্রশ্নটি উত্থাপন করেন, তাতে তিনি জানতে চান যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শিল্প খাতে বর্তমান অস্থিরতার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মূল্যায়ন কী।

জবাবে হিউ রবার্টসন বলেন, সহিংসতা ও অস্থিরতা বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে এবং অর্থনীতি ও জনগণের জীবনযাত্রার জন্য ক্ষতিকর। নির্বাচনের বৈধতার প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, যুক্তরাজ্য বিশ্বাস করে পূর্ণতাপ্রাপ্ত এবং সচল গণতন্ত্রের প্রকৃত নিদর্শন হচ্ছে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, যেখানে ভোটারদের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটে। সে কারণেই সব রাজনৈতিক দলকে ভবিষ্যতে প্রতিশোধের হুমকি ও ভীতিমুক্ত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে একযোগে কাজ করার জন্য যুক্তরাজ্য আহ্বান জানিয়েছে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.