আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপি নেতারা কে কোথায়

গ্রেফতার ও মামলার খড়গ নিয়ে এখনো ফেরারি বিএনপি। চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত রাজপথের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা দিলেও কারাগারের বাইরে থাকা দলের নেতারা এখনো প্রকাশ্যে আসছেন না। নির্বাচনের পূর্বাপর নানা সহিংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দলের প্রভাবশালী প্রায় অর্ধশত নেতা এখনো জেলে অন্তরীণ। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার তিনটি মামলায় জামিন নিয়ে দীর্ঘদিন পর নয়াপল্টন কার্যালয়ে আসেন হুলিয়ার কারণে এতদিন আড়ালে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ইতোমধ্যে কয়েকজন নেতা জামিন পেলেও গতকাল পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান।

তবে প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপ-সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি হলে শীঘ্রই আটক নেতারা মুক্তি পেতে পারেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, অবৈধ সরকার হলেও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপ চান তিনি। তবে সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করতে দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়ার এং সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান বেগম জিয়া। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ দলের লক্ষাধিক নেতা-কর্মী এখনো বিভিন্ন মামলার আসামি। এসব মামলায় বিএনপির অর্ধশত কেন্দ্রীয় নেতা কারাগারে।

সব মামলায় অসংখ্য অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে। কাউকে আটক করা মাত্রই ওইসব মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। তৃণমূলে বিশেষ করে জেলা পর্যায়ের প্রথম সারির নেতারা হয় কারাগারে নয়তো হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্দগোপনে রয়েছেন।

সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মোট ২৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি, তারেক রহমানের ১৪, কোকোর ৫ এবং তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে একটি।

বেগম খালেদা জিয়া পাঁচটি মামলার সবকটিতে জামিনে রয়েছেন। তবে এর মধ্যে চারটি মামলাই হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা ১৪ মামলার মধ্যে চারটি স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে একটি মামলায় ইতোমধ্যে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। অর্থ পাচারের আরেক মামলায় কোকোর ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জোবায়দা রহমানের মামলাটিও স্থগিত রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গত পাঁচ বছরের শাসনামলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২টি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৫টি ও কোকোর বিরুদ্ধে ২টি মামলা হয়। বাকি মামলাগুলো বিগত এক-এগারো পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে করা। তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে চিকিৎসাধীন ও আরাফাত রহমান কোকো ব্যাংককে অবস্থান করছেন। নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মীর মোহাম্মাদ নাছির উদ্দিন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান হাসান প্রমুখ।

এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আবদুস সালাম পিন্টু, পিলখানা বিডিআর হত্যাযজ্ঞ মামলায় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। প্রায় তিন বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলম। জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ডিসেম্বর বাংলামোটরে পুলিশের গাড়িতে ককটেল হামলার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা করা হয়। অবশ্য এ তিনটি মামলায় জামিন নিয়ে দীর্ঘ ৫৭ দিন পর তিনি প্রকাশ্যে এসেছেন।

বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়েও বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলীর মায়ের জানাজা অনুষ্ঠানেও অংশ নেন তিনি। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মামলায় তিনি চারবার গ্রেফতার হন। প্রথম মেয়াদে দুই মাস, দ্বিতীয়বার দেড় মাস ও তৃতীয়বার এক মাস কারাগারে কাটাতে হয়েছে তাকে।

আরেকবার ডিবি অফিস থেকে ছাড়া পান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মইন খান, বেগম সারোয়ারী রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও সতর্কভাবে চলাফেরা করেন তারা। স্থায়ী কমিটির সদস্য এম শামসুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম খান শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কারাগারে রয়েছেন। বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়ে এখনো আড়ালে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, বরকতউল্লাহ বুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সরোয়ার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নাদিম মোস্তফা, জয়নুল আবদিন ফারুক, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আ ন ম এহসানুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবীর খোকন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, ডেমরার সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, সব যুগ্ম-আহ্বায়কসহ সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।

এ ছাড়া রাজধানীর সব থানা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও আত্দগোপনে রয়েছেন। নেতা-কর্মীদের মামলায় লড়ছেন বিএনপির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, নেতাদের বিরুদ্ধে যেভাবে নিত্যনতুন মামলা দায়ের হচ্ছে তাতে লড়তে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা আইনিভাবে লড়ে যাচ্ছি। তবে এসব মিথ্যা মামলায় সরকার নেতা-কর্মীদের বেশি দিন আটকে রাখতে পারবে না বলেও জানান তিনি।

সেলিমা রহমান জামিনে মুক্ত : আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান গতকাল দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-৩ থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এ সময় কারাফটকে তার স্বামীসহ পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাকে বরণ করে নেন।

জেলসুপার আমজাদ হোসেন জানান, রমনা থানার একটি মামলায় ৭ জানুয়ারি সেলিমা রহমানকে গ্রেফতারের পর গত ৮ জানুয়ারি তাকে কারাগারে আনা হয়। এখানে তিনি মহিলা কারাগারে ছিলেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে তিনি জামিন লাভ করেন।

পরে সেলিমা রহমানের জামিনের কাগজপত্র কারাগারে এলে যাচাই-বাছাই শেষে শুক্রবার (গতকাল) বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.