যত মত, তত পথ
আজকের প্রবাদ বাক্যটি হল অকাল কুষ্মাণ্ড
অকাল কুষ্মাণ্ড – অপদার্থ বা নির্গুণ বেক্তি বিশেষ ।
উৎপত্তি স্থল ঃ “মহাভারত”
এবার আসি মূল গল্পটি নিয়ে আপনাদের সামনে ,
মহাভারত এ সাম্রাট বিচিত্রবীর্যর দুই পুত্র ছিলেন। ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু , ধৃতরাষ্ট্র বড় ভাই তাই সেই সময়কার নিয়ম অনুসারে ধৃতরাষ্ট্র হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসেন আর ছোট ভাই পাণ্ডু তার দুই পত্নী কুন্তী ও মাদ্রীকে নিয়ে দেশ বিদেশে ভ্রমন করে এবং বনে বনে শিকার করে দিন কাটাতে লাগলেন।
এদিকে ধৃতরাষ্ট্র সিংহাসনে বসে সুখে রাজত্ব করতে লাগলেন । তার স্ত্রী গান্ধারী ব্যাসদেবকে সেবা করে খুব খুশি করেছিলেন এবং মহাবলবান শত পুত্রের জননী হবার বর পান ।
কিছু কাল পড়ে তিনি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন কিন্তু নিদিষ্ট সময় চলে যাবার পরও তিনি সন্তানের জন্ম দিতে না পাড়াতে চিন্তিত হয়ে পড়লেন । এদিকে সেই সময় পাণ্ডু পত্নী কুন্তির একটি পুত্রসন্তান জন্ম নেয় অর্থাৎ যুধিস্থিরএর জন্ম হল । কুন্তির পুত্র সন্তান এর করণে গান্ধারী খুবই বিচলিত হয়ে পড়লেন । কারণ তার ছেলের তো আগে জন্মাবার কথা আর তা না হলে তো নিয়ম অনুসারে হস্তিনার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী সে হতে পারবে না । এই ভেবে হিংসায় কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি , ভাবলেন তার সন্তানদের মৃত্যুই এর চেয়ে ভাল , এই ভাবনা থেকে তিনি লোহার গদা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করলেন নিজের সন্তানদের মেরে ফেলার জন্য ।
এর ফলে তার সন্তান প্রসব হয়ে গেল কিন্তু একি- হাত, পা ,মাথা কিছুই নেই যেন একটি কুষ্মাণ্ড ! – এমনই এক মাংসপিণ্ড প্রসব করলেন তিনি । এই কুষ্মাণ্ডের আকারের সন্তানকে ফেলে দিতে বললেন তিনি দাসীদের ।
ব্যাসদেব জানতে পেরে এসে গান্ধারীর হিংসার জ্বালায় এমন অনৈতিক কাজ করার জন্য খুব নিন্দা করলেন । গান্ধারীও তখন ব্যাসদেব কে বললেন “ আপনিও তো অধর্মের কাজ করেছেন – আপনিও তো আমায় বর দিয়েছিলেন আমার শত পুত্র হবে” ।
ব্যাস দেব বললেন – আমি যখন কথা দিয়েছি তখন তার নড়চড় হবে না ।
তুমি আমার কথামত কাজ কর তবে এই মাংস পিণ্ড থেকেই তোমার শত পুত্র লাভ হবে।
ব্যাসদেবের আদেশে ঐ মাংস পিণ্ডটি জল দিয়ে সিঞ্চন করাতে শত শত হয়ে গেলে সেটি । তখন গান্ধারী একশতটি ঘিয়ের হাঁড়িতে মাংসপিণ্ড গুলি রেখে দিলেন ব্যাসদেবের কথামত । কিছুকাল পরে আপনিই একশত মাংস পিণ্ড থেকে দুর্যোধন , দুঃশাসন ইত্যাদি একশত ছেলের জন্ম হল ।
এই শতপুত্র জন্মের সময় দুর্যোধন জন্মের সঙ্গে সঙ্গে গর্জন করে ওঠে ।
এই গর্জন শুনে শেয়াল , কাক ইত্যাদি দলে দলে ডাকতে আরম্ভ করে দিল । এই অমঙ্গল চিহ্ন দেখে ধৃতরাষ্ট্র( তিনি জন্মান্ধ ছিলেন) পিতামহ ভীষ্ম ও বিদুর কে উদ্দেশ্য করে বললেন ,- আমার পুত্রদের জন্মের সাথে সাথে এতো অমঙ্গল চিহ্ন দেখে আমি উদ্ভিগ্ন হয়েছি । এখন আমি কি করব বলে দিন । পরম ধার্মিক বিদুর বললেন , - এ পুত্র তোমার অধার্মিক হবে , এর থেকে তুমি অনেক দুঃখ পাবে , তোমার বংশের অমঙ্গল হবে, অতএব এই পুত্রকে তোমার ত্যাগ করা ছাড়া উপায় দেখছি না ।
কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র স্নেহে অন্ধ হয়ে দুর্যোধন কে ত্যাগ করতে পারলেন না ।
বড় হয়ে দুর্যোধন অধার্মিক ও অশিষ্ট হয়েছিলেন । তাই অপদার্থ বা নির্গুণ লোককে “অকাল কুষ্মাণ্ড” বলে সবাই জানে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।