শুক্রবার শুরু হওয়া এই রোড মার্চ সন্ধ্যায় বগুড়ায় তিন দফা বোমা হামলার মুখে পড়ে। শনিবার দিনাজপুরে ঢোকার পথে হয় আরেক দফা হামলা।
তবে এই হামলার মধ্যেই বিপুল সংখ্যক মানুষের সাড়া নিয়ে চলছে রোড মার্চ। আগের দিনের মতো শনিবার বিভিন্ন স্থানে পথসভাগুলো স্থানীয়দের ব্যাপক অংশগ্রহণে পরিণত হয় জনসভায়।
তিন দিনের রোডমার্চের দ্বিতীয় দিনে সকাল সাড়ে ৮টায় বগুড়া থেকে বের হয় জগরণকর্মীরা।
সাড়ে ৯টার দিকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দিনের প্রথম পথসভায় বক্তব্য রাখেন ইমরান, যেখানে মঞ্চ করে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলো স্থানীয় গণজারগণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
নিরাপত্তা ও সময় বাঁচাতে গাড়িতে থেকেই দ্বিতীয় দিনের পথসভাগুলোকে ইমরানের বক্তব্য দেয়ার কথা থাকলেও স্থানীয়দের চাপে তাকে গাড়ি থেকে নিচে নামতে হয়।
স্থানীয়দের দাবির মুখে স্লোগান ধরতে হয় লাকি আক্তারকেও, যিনি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলন শুরুর পর ‘স্লোগানকন্যা’ হিসেবে পরিচিত।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রোডমার্চ গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে পৌঁছালে শত শত মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে জাগরণকর্মীদের স্বাগত জানায়।
পলাশবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে নেমে জাগরণকর্মীরা উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান।
সেখানেই হাজারো মানুষ ভবিষ্যতে পলাশবাড়ীকে যে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা থেকে রক্ষার অঙ্গীকার করেন।
সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর জামায়াত-শিবিরের জ্বালিয়ে দেয়া দুটি বাড়ি পরিদর্শন করেন ইমরানসহ জাগরণমঞ্চের নেতৃবৃন্দ।
পলাশবাড়ীর পর ১২টার দিকে রোডমার্চ রংপুরের পীরগঞ্জে এসে পৌঁছায়। সেখানে পথসভার কথা থাকলেও স্থানীয়রা আগে থেকেই পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চ করে অপেক্ষা করছিলেন।
সেখানে পৌঁছার পর রাস্তা থেকে গাড়ি বহরকে স্বাগত জানিয়ে স্কুল মাঠে নিয়ে যায় স্থানীয়রা।
সেখানেও হাজার হাজার ছাত্র-যুবক-জনতার অংশগ্রহণে জনসভা হয়।
পথসভার পরবর্তী নির্ধারিত স্থান মিঠাপুকুর শাপলা চত্বরে রাস্তার পাশেই মঞ্চ করে অপেক্ষায় ছিলেন সেখানকার মানুষ। সেখানেও গাড়ি থেকে নেমে পথসভায় বক্তব্য দিতে হয় জাগরণমঞ্চের নেতাদের।
এই পথ সভায় মানুষের বিপুল পরিমাণ উপস্থিতিতে সেখানে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন হয়।
মিঠাপুকুরের এ পথসভায় ইমরান বলেন, “জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়স্থল পাকিস্তান।
তারা পাকিস্তানের হয়ে এদেশ ব্যবসা করতে এসেছে।
“ব্যবসা করে মুনাফা লুটে আবার আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, মানুষ হত্যা করে, ধর্ষণ করে। এরা এই দেশের শত্রু, এদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। ”
এরপর গণজাগরণমঞ্চের বহর এগিয়ে চলে রংপুরের দিকে, যেখানে শহরের উপকণ্ঠে মোটর সাইকেল বহর নিয়ে স্বাগত জানানো হয় গাড়িবহরকে।
গাড়িবহর যায় মঞ্চের মুখপাত্র ইমরানের এক সময়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রংপুর মেডিকেল কলেজেও।
সেখানেও বিপুল পরিমাণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্বাগত জানায় রোডমার্চকে।
পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টারে দুপুরের খাবার খেয়ে গাড়িবহর যায় রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে সমাবেশ হয়।
গণজাগরণ মঞ্চের দ্বিতীয় এই রোডমার্চের শুরু থেকে দুএকটি ব্যতিক্রম বাদে প্রতিটি পথসভাতেই রোডমার্চে উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে বেড়েছে।
দিনভর কোনো অঘটন না ঘটলেও সন্ধ্যার পর দিনাজপুরের রানীর বন্দর উপজেলার দশ মাইল এলাকায় রোডমার্চের গাড়ি লক্ষ করে একটি হাতবোমা হামলা হয়।
তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
আগের দিন আগের দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে বগুড়ার শেরপুরের শেরুয়া বটতলা, বনানী বাইপাস ও শাহজাহানপুরের পটকি ব্রিজ এলাকায় হাতবোমা হামলায় পড়েছিলেন গণজাগরণের কর্মীরা, যাতে আহত হন পাঁচজন।
গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার পর তা প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে এর আগে যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়া অভিমুখে রোডমার্চ করে গণজাগরণ মঞ্চ, যাতেও স্থানীয়দের ব্যাপক সাড়া মিলেছিল।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।