আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াত ইসলামির ইতিহাসঃ শুরু থেকেই যার ভণ্ডামি।

আমি বিশ্বাস করি একজন খাঁটি ইমানদার মুসলিম আস্তিক হয়েও রাজাকারদের মানবতাবিরধিদের ফাঁসি চাওয়া যায়। [ যারা সেই স্কুল লাইফে কিশোর কণ্ঠে ছাপা ইসলামিক থ্রিল্লার উপন্যাস পড়ে দেশটাকে একটা স্বপ্নের ইসলামিক সোনার বাংলা করতে চান তাদের জন্য আমার এই লেখা না দোয়া করে তারা দূরে থাকুন] আজকের বাংলাদেশ জামাতে ইসলামি নামের যে দলটা টা কিন্তু ২০০৭ সালের আগে জামায়াত এ ইসলামি বাংলাদেশ নামে পরিচিত ছিল অর্থাৎ এটা জামায়াত কে আগে রেখে বাংলাদেশকে পিছনে রেখেছিল!! যাক আমরা মূল কথায় যাই জামাত একটি তথা কথিত ইসলামিক দল যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪১ সনে বর্তমান পাকিস্তানের লাহরে “ জামাতে ইসলামি হিন্দ” নামে । জামাতিরা যাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ইসলামিক চিন্তাবিদ মনে করে সেই আবুল আলা মউদুদি যার জন্ম ভারতের হায়দারাবাদে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪১ সনের ২৬ আগস্ট ৭৫ জন লোকের উপস্থিতিতে এই দলটি প্রতিষ্ঠা পায়। আমি এই মউদুদির বেক্তি জীবন নিয়া এই পোস্টে কিছু ই বলবনা কিন্তু তিনি যে উপমহাদেশের রাজনিতিতে কি দুর্গন্ধ ছড়াইয়া গিয়াছেন তাই বলব।

প্রথম দিকে তিনি বিভিন্ন ইসলামিক শাসন যেমন খিলাফত, রাজতন্ত্র, অটমান শাসন নিয়া বিস্তর গবেষণা করেন তারপর তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে বর্তমান ইন্ডিয়ান কংগ্রেস হইল শয়তান, এরা ইসলামের শত্রু, মুসলিম লিগ যারা করে এরা মটেও ধর্মের ধারে কাছে নাই, একমাত্র আমরাই প্রকিত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করবও। তার এই রাজনিতি শুরুই হয় বিরধিতার মাধ্যমে, তিনি ও তার দল একটা কল্পিত ইসলামিক রাষ্ট্রের চিন্তা করা শুরু করেন । শুরু থেকেই জামায়েতে হিন্দ উগ্রবাদি রাজনিতির চর্চা করে, দলটি তার জচ্চুরির প্রথম নমুনা প্রদর্শন করে খিলাফাত বাদ দিয়া উগ্র ধরমান্ধতা দিয়া। হজরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর মদিনা সনদকে অনেকেই মানবতার মহান দলিল হিসেবে ধরে রাখেন কেননা এর মধ্যেই প্রথম ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে, সমস্ত ধর্মের কথা বলা হয়েছে, বাড়াবাড়ি না করার কথা বলা হয়েছে, দুঃখজনক যে জামাত মদিনা সনদকে উপেক্ষা করে গনতন্ত ও ধরমতন্ত মিস্রনে শরিয়া আইন দারা চালিত এক কল্পিত রাজ্যের জন্য সংগ্রাম চালাইয়া যায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ব্রিটিশ যখন তার উপনিবেশ চালাতে অক্ষম, উপমহাদেশে তখন জাতিয়তাবাদ তুঙ্গে, জাতিয়তাবাদ যখন সম্ভাব্য রাষ্ট্রের ভিত্তি তখন এই মউদুদি জাতীয়তা বাদিদের বললেন মীরজাফর তিনি এবং তার দল শুরু করলেন পাকিস্তান বিরোধিতা অর্থাৎ সে স্বাধীনতার বিরোধিতা করলেন!! তার এই মত সাধারন মানুষ গ্রহন করলনা এবং উপমহাদেশ স্বাধীন হল।

জামাতিরা স্বাধীন পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা অর্জন করে কিছু কিছু সেচ্ছাসেবামুলক কাজের মাধ্যমে, ভারত থেকে আগত শরণার্থীদের সেবা করে কিছুটা মানুষের কাছে আসে। যখন তারা দেখল সাধারন মানুষ তাদের কথা শুনে না তখন মুসলিম ব্রাদারহুড এর মত হাস্পাতাল, স্কুলসহ কিছু সমাজ সেবা মুলক কাজের মাধ্যমে জনগনের কাছে আসে । পশ্চিম পাকিস্তানে জামাতিদের বড় সাফল্য আসে ১৯৪৮ সনে সংবিধানে ধর্মের প্রাধান্য প্রনয়নের মাধ্যমে। ১৯৫৩ সনে আহমাদেদিয়া দের বিরোধিতা করে কিছুটা দল ভারি করে। মজার ব্যাপার হল শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জামাত সবসময় অন্ন কোন দলের লেজুড় হিসেবে নির্বাচন করেছে, এটি এর প্রয়জনে যখন যার সাথে পেরেছে জোট বেধেছে এবং সুবিধা নিয়েছে শুধু আইয়ুব খানের আমলে একটু চাপে ছিল।

১৯৫৪ সনে মউদুদি লাহোর দাঙ্গা বাধায় এবং জেলে যায় তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হয়া সত্ত্বেও তার অন্ধ অনুসারিদের চাপে সরকার তাকে মুক্ত করতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সনে জামাত পাকিস্তানের সংবিধানের বিরোধিতা শুরু করে। তারা জানে যে তাদের জনগনের কাছে কোন গ্রহণযোগ্যতা নাই তাই তারা পৃথক ভোটের বেবস্থা দাবি করে। ১৯৫৮ সনে জামাত, মুসলিম লিগ এবং নেজামে ইসলামির সাথে জোট বাধে!!! মজার ব্যাপার হল ১৯৬৪ সনে জামাত ফাতিমা জিন্নাহ এর সাথে জোট বাধে। যখন সবাই নারী নেতৃত্ব নিয়া সমালচনা শুরু করে তখন মউদুদি এক অদ্ভুত ফিলসফি দাড় করায় তিনি বলেন যে, একজন পুরুষ যার পুরুষত্ব ছাড়া আর কোন যোগ্যতা নাই আর একজন নারী যার নারীত্ব ছাড়া সব যোগ্যতাই আছে আমাদের কোনটা নেয়া উচিৎ অবশই দ্বিতীয়টা অর্থাৎ নারী!! (মনে হয় মউদুদি তাকে এক পুরুসাঙ্গ আর অণ্ডকোষ বিশিষ্ট পুরুষ ছাড়া নিজেকে কিছুই মনে করেননি!!) মউদুদির অন্ধ বিশ্বাসীরা তার এই কথায় সায় দেয় এবং মহিলা নেত্রিত্তে বিশ্বাসী হয়।

১৯৬৫ সনে পাক ভারত যুদ্ধে জামাতিরা আরবদের সহায়তায় তথাকথিত জিহাদে নামে মুজাহিদ হিসেবে, যদিও যুদ্ধটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। জামাত অবিভক্ত পাকিস্তানে জুলফিকার-ভাসানি যখন সমাজতন্ত্রের রপরেখা প্রনয়নে উদ্যোগী হয় জামাত তা তিব্রভাবে প্রতিহত করার সংকল্প করে । ১৯৭০ সনের নির্বাচনে জামাত কুরআন ও সুন্নাহ এর ভিত্তিতে দেশ চালানোর ইস্তেহার ঘোষণা করে এবং মাত্র ৪টি আসন পায়। মজার ব্যাপার হল জামাত তার সৃষ্টি থেকে কাগজে কলমে যে কথা বলে এবং লেখে চলে তার সম্পূর্ণ উলটা, শুরু থেকেই তারা দাবি আদায়ে আলচনার থেকে ধ্বংসাত্মক কারজকালাপে বেশী পারদর্শী পাকিস্তানের প্রত্যেকটা শাসকের বিরুদ্ধে জামাত এক কল্পিত রাষ্ট্রের ফরমুলা দিয়েছিল। ১৯৭১ সনে যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলমান অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয় তখন পাকিস্তানি সেনাদের সাথে এক কাতারে দাড়ায় মউদুদি ও তার অনুসারিরা এবং মেতে ওঠে ইতিহাসের সবচেয়ে নিরমম ধ্বংসযজ্ঞে।

দুখজনক যে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু অবিবেচক জামাতি পশ্চিমাদের সাথে এক হয়ে নিজ জাতির বিরুদ্ধে ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠে এবং ক্ষেত্রবিশেষে আর্মি দের থেকে বেশী অনাচারে লিপ্ত হয়!! পূর্ব পাকিস্তান যুদ্ধে জয় লাভ করলে সব দেশীয় দোসররা সউদি আরব, লিবিয়া, পাকিস্তানে আশ্রয় গ্রহন করে এবং ১৯৭০ এর শেষ দিকে আবার স্বাধীন বাংলায় এসে রাজনিতি শুরু করে, এক্ষেত্রে তৎকালীন দেশীয় সামরিক এক নায়কের ভুমিকাই প্রধান, পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাধরদের সাথে মিশে সেই দেশে একটি প্রতিষ্ঠিত দল হয় যে দেশের জন্মের বিরোধিতা ই ছিল তাদের অন্যতম দলীয় মতাদর্শ !! লক্ষণীয় বিষয়ঃ ১। তারা কুরানের ভুল ব্যাখ্যা দিয়া নারী নেতৃত্ব জায়েজ করেছে । ২। তারা দলীয় আদর্শে পশ্চিমা পুজিবাদের ঘোর বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও জামাত ই হল একমাত্র বাংলাদেশের পুজিবাদি দল সবাই এটা মোটামুটি জানেন । ৩।

তারা পশ্চিমা সংস্কৃতির বিরোধিতা করে অথচ পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্যতম অবদানহল গনতন্ত্র যার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। ৪। পশ্চিমা বিরোধিতা তাদের মতাদর্শে হলেও ১৯৭৯ সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে জামাত আমেরিকার সাহায্যে মুজাহিদ বাহিনি তৈরি করে, বুঝুন কাকে বলে ভণ্ডামি। ৫। এককভাবে ক্ষমতায় যেতে না পেরে মতাদর্শ বিসর্জন দিয়ে যখন জেভাবে যার সাথে সম্ভব জোট বেধেছে এই জামাতিরা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.