রক্তদানের যোগ্যতা
এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এবিএম ইউনূস বলেন, “যাদের ওজন অন্তত ৪৫ কেজি, বয়স নুন্যতম ১৮, তারা স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারেন। প্রতি ৪ মাস অন্তর রক্ত দেওয়া যায়। এতে শরীরের ক্ষতি হয় না। তবে রক্ত দেওয়ার আগে চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন রক্ত নেওয়া যাবে কি না। ”
উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ জানার উপায়
ধরা যাক একজন মানুষের ওজন ৫০ কেজি।
তার শরীরে কতটুকু উদ্বৃত্ত রক্ত আছে তা বের করা খুবই সহজ।
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রতি কেজিতে সাধারণত ৭৬ মি.লি. রক্ত থাকে। এর মধ্যে শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজন হয় ৫০ মি.লি.। অবশিষ্ট ২৬ মি.লি. থাকে উদ্বৃত্ত হিসেবে। শরীরের কোথাও কেটে রক্ত বের হলে তা উদ্বৃত্ত থেকে পূরণ হয়।
তাহলে একজন ব্যক্তির ওজন ৫০ কেজি হলে তার শরীরে উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ (২৬x৫০)= ১৩০০ মি.লি.।
চাইলে এ উদ্বৃত্ত থেকে কাউকে রক্তদান করে জীবন বাঁচাতে পারেন। একজন মানুষের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয় ৪০০-৪৫০ মি.লি.।
যাদের রক্তের প্রয়োজন হতে পারে
* মাতৃত্বকালীন সময়ে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।
* থেলাসেমিয়া আক্রান্ত রোগিদের প্রতিমাসে রক্ত দিতে হয়।
* কিডনী জটিলতায় ভুগছে এ ধরনের রোগীদের ডায়ালিসিস করতে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।
* ক্যান্সার আক্রান্তদের রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।
* শরীরে অস্ত্রোপচারের সময় রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।
স্বেচ্ছায় রক্তদাতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন।
দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে কাজ করে আসছে এরকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ও কার্যক্রম
সন্ধানী ব্লাড ব্যাংক
১৯৭৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম শুরু করে সন্ধানী। দেশের প্রায় সবগুলো সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সন্ধানীর রক্তদান কার্যক্রম চালু রয়েছে।
যোগাযোগ : সন্ধানী বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ইউনিট। রোড ১৪/এ, বাড়ি ৩৪, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা। ফোন: ০২-৯১২৪৬১৯।
মোবাইল: ০১৫২৩৭১৫৩১। ওয়েবসাইট : www.sandhani.org
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
১৯৮১ সালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করে। ঢাকা শহরের বাইরে ৫টি জেলা শহরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির শাখা রয়েছে। শাখাগুলো হচ্ছে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, দিনাজপুর ও যশোর। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পের মাধ্যমে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রক্ত সংগ্রহ করে থাকে।
কেবলমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্তের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করে তা গ্রহীতার হাতে দেওয়া হয়।
যোগাযোগ : ৭/৫, আওরঙ্গজেব রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা – ১২০৭। ফোন: ০২-৮১২১৪৯৭, ০২-৯১১৬৫৬৩। ৬৮৪-৬৮৬ বড় মগবাজার ঢাকা, বাংলাদেশ জাতীয় সদরদপ্তর।
ফোন- +880-2-9116563, +880181-1458524। ওয়েব সাইট: www.bdrcs.org
বাঁধন ব্লাড ব্যাংক
১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বাঁধন ব্লাড ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে। বাঁধনের রক্তদাতারা প্রায় সবাই শিক্ষার্থী। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে বাঁধন কাজ করে যাচ্ছে।
যোগাযোগ : বাঁধন, টি.এস.সি (নিচতলা), (জোনাল অফিস), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ফোন- ০২-৮৬২৯০৪২ (সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত)। ওয়েবসাইট www.badhan.org
শাখা : দেশের প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বাঁধনের শাখা রয়েছে। বাঁধনে প্রক্রিয়াকৃত কোনো রক্ত পাওয়া যায় না। ডোনার সরাসরি রোগিকে রক্ত দিয়ে থাকেন।
খোলা-বন্ধের সময়সূচী : বাঁধনের অফিস সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টায় পর্যন্ত খোলা থাকে।
জরুরি প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রাবাসে যোগাযোগ করতে পারেন।
কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কেন্দ্র
যোগাযোগ : কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের শাখা বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই রয়েছে। তবে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছায় রক্তদান প্রধান অফিস শান্তিনগর এলাকায়।
যেটি ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের পাশেই অবস্থিত।
৩১/ভি, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সড়ক, (পুরাতন শান্তিনগর), ঢাকা - ১২১৭। (ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের পূর্ব পাশে)। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৩৫১৯৬৯। মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪০১০৮৬৯।
ওয়েব সাইট: www.quantammethod.org.bd
সুবিধাসমূহ : এখানে প্রক্রিয়াকৃত প্রায় সব ধরনের রক্ত পাওয়া যায়। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত রক্তের ৫টি টেস্ট করা হয়। এগুলো হচ্ছে— ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি/সি, সিফিলিস, গনোরিয়া এবং এইডস।
থেলাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। অন্তত ৫০০ রোগিকে প্রতিমাসে নিয়মিত কোনো প্রসেসিং খরচ ছাড়াই রক্ত দিয়ে থাকে কোয়ান্টাম।
এছাড়া আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের বিনামূল্যে রক্তের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে ডোনারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করা হয়।
রক্তদাতাদের রক্তের ৫টি টেস্টের রিপোর্ট বিনামূল্যে দেওয়া হয়। রক্তে এইডস, ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি/সি, সিফিলিস ও গনোরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া গেলে সঙ্গেসঙ্গে তা নষ্ট করে ফেলা হয়। আর তা রক্তদাতাকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
রক্তসংগ্রহ প্রক্রিয়া : ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে নিয়মিত বিভিন্ন স্থানে ব্লাড ক্যাম্পের আয়োজন করে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, ক্লাব, সমবায় সমিতি, গ্রুপ অফ কোম্পানিসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে ব্লাড ক্যাম্পের আয়োজন করে থাকে। মাসে গড় সংগ্রহ ৭ হাজার ইউনিট।
পুলিশ ব্লাড ব্যাংক
রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়।
পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ ছাড়াও যে কোনো ব্যক্তি এই ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিতে পারেন। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের বিনাখরচে রক্ত দেওয়া হয়।
সুবিধাসমূহ : এখানে প্রক্রিয়াকৃত প্রায় সব ধরনের রক্ত পাওয়া যায়। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত রক্তের ৫টি টেস্ট করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি/সি, সিফিলিস, গনোরিয়া এবং এইডস।
এছাড়া আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের বিনামূল্যে রক্তের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে ডোনারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করা হয়।
যোগাযোগ : কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ, ঢাকা। ফোন: ৯৩৬২৫৭৩। মোবাইল ০১৭১৩-৩৯৮৩৮৬।
ডিএমপি ২৪২৫। ওয়েবসাইট: www.policebloodbank.gov.bd
লায়ন্স ব্লাড ব্যাংক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম ও আশপাশের কারও রক্তের প্রয়োজন মেটাতে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করে। এখান থেকে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে রক্ত দেওয়া হয়। তবে যারা ক্রসমেচিং ও প্রসেসিং খরচ দিতে সক্ষম তাদের কাছ থেকে খরচ নেওয়া হয়।
যোগাযোগ : চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন(সিএলএফ)।
জাকির হোসেন রোড, নাসিরাবাদ
লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম। ফোন: ০১৫৫৪৩১৬০৯৫।
খোলা-বন্ধের সময়সূচী : সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
রক্তদান করার ইচ্ছা থাকলেও তথ্যের অভাবে অনেকে রক্ত দিতে পারেন না। যারা স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে চান তারা যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত ঠিকানায়।
এছাড়া ১লা বৈশাখ, একুশে বইমেলা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাসহ বিভিন্ন সময় এসব প্রতিষ্ঠান মাসব্যাপী ব্লাড ক্যাম্পের আয়োজন করে থাকে।
মনে রাখুন
* জরুরি রক্তের প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসক/মেডিকেল অফিসার স্বাক্ষরিত রিকুইজিশন পেপার সঙ্গে আনুন।
* রক্তদাতা হলে ডোনারকার্ড যত্ন করে রাখুন।
* স্ক্রিনিং ছাড়া রক্ত দেবেন না, রক্ত নেবেন না। এমনকি প্রিয়জনের রক্ত হলেও না।
* মাদকাশক্ত বা সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত নেবেন না। কারণ এ রক্তে থাকতে পারে প্রাণঘাতি ব্যাধি হেপাটাইটিস বি বা সি, এইডসসহ নানান প্রকার সংক্রামক ব্যাধি।
* প্রতিবার রক্তদানের পরবর্তী কয়েকদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।