আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন রিটার্ণস ও অন্যান্য

আমাদের একটা মানুষের সমাজ লাগবে


৫ বছর বয়সে বগুড়া শহর ছেড়ে এসেছিলাম । অনেক ছোটবেলা। স্মৃতিগুলো আনেক অস্পষ্ট, শুধু দু একটা ঘটনা মনে আছে, আমরা তখন থাকতাম মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টে। অনেক বছর পর ১৮ জানুয়ারি প্রায় ২১ বছর পর বগুড়া শহরে প্রত্যাবর্তন করার চেষ্টায় বাসে চড়িতেছিলাম। ছিলাম গনজাগরণ মঞ্চের রোডমার্চের সাথে।

বগুড়া শহরে ঢোকার কিছুক্ষন আগে হঠাত বিকট এক আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে গেল, বুকের মধ্যে প্রচন্ড ধক করে একটা শব্দ স্পষ্ট অনুভব করতে পারলাম। কিছুই বুঝে উঠতে পারতেছিলাম না। চোখের সামনে ধোয়ার স্বর্গরাজ্য ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমার সারা গায়ে কাচের টুকরা ,নিচে কাচ। স্রেফ কপাল গুনে আমার গ্লাসে না লেগে জানালার স্টান্ডে লাগল ককটেলটা ।

কিছু সময় পর দুনিয়ায় ফিরলে দেখলাম এক ককটেলে বাসের দুইখান গ্লাস হাওয়া, পিছনেও একটা গ্লাস নাই । সামনের সিটের ছাত্র মৈত্রীর তানভীর ভাই মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে পড়েছে। তার মাথায় আঘাত লাগছে তবে গুরুতর নয়। আমদের বাস দ্রুত ছুটে চলছিল দ্রুত, সামনে এক পথসভার কাছে গিয়েই থামলাম। আমার কান ভণভণ করছে, সব ধরনের শব্দ দুইটা শুনতেছি মনে হইতেছিল।

রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি চারপাশ দেখছি অপলক নয়নে। এই বগুড়া শহরে প্রান্তে ৫ বছরের ছেলেটা ইয়া বড় হয়ে প্রবেশ করল। এই শহরে আমার ছোট ভাই শামীম জন্মেছিল, সেই বগুড়া শহর ওরে আমি বড় একটা ড্রেনে ফেলে দিয়েছিলাম... ২১ বছর পর সেই শহরে পা রাখলাম আমার চোখে প্রচুর শৈশবের কিছু ভাঙ্গা স্মৃতি ভাসছে। খোকাবাবু ফিরেছে,ককটেলের প্রচন্ড তোপধ্বনি দিয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আবার গাড়ীতে উঠলাম, বসে আছি গাড়ী ছুটছে বেশ এবার সাথে নিরাপত্তাহেতু দুই ভ্যান পুলিশ যুক্ত হয়েছে।

কিছুদুর যেতেই প্রচন্ড শব্দ, আমরা সবাই মাথা নিচু করলাম। এইবার আর একটায় শেষ হলো না, একের পর এক একের পর এক প্রকান্ড আওয়াজে অন্তরাত্মা কেপে উঠার যোগার। সবাই মেঝেতে মাথা একদম নিচু করে বসে পড়েছে, দু একজন তো শুয়ে পড়ার অবস্থা। আমার পাশের সিটে ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি নান্টুদা,তারে আমি বললাম "ভাই এইটা কোন দেশ"? আমরা সবাই ৪০ টা প্রানী বাসের মেঝেতে মাথা নিচু করে বসে আছি, সারা দুনিয়া যেন ভেঙ্গে পড়ছে আমাদের গায়ের উপরে, কিছুই করার নেই আমাদের শুধু চেয়ে থাকা ছাড়া। একটা পেট্রোলবোমা কায়দা মতো মেরে দিলেই কম্ম সারা, কিছুই করতে পারতাম না আমরা।

টানা দু থেকে তিন মিনিট এই ঢিল বৃষ্টি, ককটেল বৃষ্টি চলেছে। যারা একাজ করেছে তাদের একটা ধন্যবাদ দিতে হয়, পেট্রোল তো মারে নাই!!আমাদের ড্রাইভার ভাইকে ধন্যবাদ দিলে ছোট করা হবে তিনি যেভাবে চালালেন সত্যিই প্রশংসাযোগ্য, সামনের পুলিশদের দশা হলো তারাও পালাতে পারলে বাচে।
যেকোন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো, তেমনটা ঘটলে বড় রাজনৈতিক ইস্যু হইত। সরকারী দল আনন্দে জামাত দমনের নামে বিরোধীদের দমনে আরো বল পাইত। একতরফা নির্বাচনের ইস্যুটা আরো হালকা হয়ে যাইত।

এইদেশে কেউ জামাতরে ছিন্নমূল করতে চায়না। সবাই তাদের কাছ থিকা রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। আমরা এই দেশের তরুনরা তাদেরকে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলতে চাই, আমাদের লড়াই থামবে না।

কর্ণেয়া গ্রামের বাড়ী পুড়ে যাওয়া এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বৃদ্ধ বললেন " যুদ্ধ করনু, ৫ বছর বর্ডার পাহাড়া দিনু, মোক ওরা কয় ভারত চলি যা। কয় এইটে কোন কতা বাহে" ।

এইটা কোন কথা নয়, এমন কথা যারা বলে, বলতে চায় তাদেরকেই এদেশে অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলতে চাই আমরা।
বিচার হয়নি কোন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের, পুলিশের কোন একশন নাই। আ.লীগ বিম্পি জামাত জাতীয়পার্টি সবাই এই সব সন্ত্রাসের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস উসকে দিচ্ছে । আমরা ইতিহাস থেকে শিখেছি অগনতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি নতুন নতুন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্মদাতা।

এই দেশ সকল ধর্ম বর্নের মানুষের সম্প্রীতির আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে আমাদের। খোকাবাবুরা ভ্যারাইটিজ কায়দায় প্রত্যাবর্তণ করুক, তাতে বড় হয়ে যাওয়া খোকাবাবুরা ভয়ে থামবে না। লড়াইটা চলবে।
আমরা তরুনদের জাগরণের স্পিরিট এর সাথে আছি, থাকব। পথটা জানি লম্বা....


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।