যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে প্রধানমন্ত্রীর বাধা কোথায়? এখানে পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রয়োজনটা কী? কে চায় না যুদ্ধাপরাধের বিচার? বিপক্ষকে ঘায়েল করতে জামায়াত, বিএনপি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, গণতন্ত্র রক্ষা, যুদ্ধাপরাধের বিচার_ সব কিছুকে একসঙ্গে সামনে এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের সঙ্গে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কী সম্পর্ক? দেশের সব মানুষ কি মূর্খ হয়ে গেল? আমাদের মাথায় কি কিছু নেই? বুধবার বাংলাভিশনের টকশো 'ফ্রন্টলাইন'-এ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব এ কথা বলেন। মতিউর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
আ স ম রব বলেন, বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার জন্য বলা হচ্ছে। অথচ এ নির্বাচনের আগেই দুই জায়গায় জামায়াত নেতাদের আওয়ামী লীগে যোগদান করানো হয়েছে।
ক্ষমতা ছাড়া এ দুই দলের (আওয়ামী লীগ-বিএনপি) আদর্শ কোথায়? মানুষ, দেশ, অর্থনীতি এর কোনো কিছু নিয়ে তাদের ভাবনা কী আছে? বিরোধী দল থাকা অবস্থায় তারা সংসদে যায়নি। এখন তো বিরোধী দলই নেই। এরশাদের দলের নেতা সরকারে থেকে বিরোধিতা করতে গেলে তো তার সদস্যপদই চলে যাবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কোথায়? এখানে বিগত ৪৩ বছরে গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। ভবিষ্যতেও গণতন্ত্রচর্চা হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বরং গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য যা দরকার তা-ই চলছে। নির্বাচন গণতন্ত্র নয়। এটা একটা চর্চা যা কাজের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়। তিনি বলেন, সবাই আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার কথা বলছে। অথচ বিএনপি একটু এগোলেই এমনভাবে খোঁচা মারা হয় যাতে সে আর সামনের দিকে না এগোয়।
প্রতিটি বক্তৃতায় জামায়াত-বিএনপি। বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতকে ছাড়া জনসভা করেছে। এরপর বিভিন্ন জন বলা শুরু করেছেন এ সরকার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। সারা পৃথিবী চাচ্ছে ভোটারবিহীন এ নির্বাচন বাদ দিয়ে নতুন একটা নির্বাচন হোক। তাতে পাত্তাই দেওয়া হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জেএসডি সভাপতি বলেন, জামায়াতকে নিয়ে তো আপনিই খেলছেন। প্রথম পাঁচ বছর কান্নাকাটি করে ক্ষমতায় থাকলেন যে আপনার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে। এরপর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলে আরও পাঁচ বছর নিয়ে গেলেন। এরপর এলেন যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে। এর পরে কী? আ স ম আবদুর রব বলেন, এ দেশে ব্রিটিশ আমল থেকে নির্বাচন চলে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ব্রিটিশ আমলে শুরু। আর জাতীয় নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে কোনো প্রার্থী নেই! এটা কি মরুভূমি? নির্বাচন বোঝে বা দেশ চালানোর নূ্যনতম যোগ্যতা আছে এবং নির্বাচন করতে চায় এমন মানুষের কি অভাব? আমার এলাকায় খুব খারাপ একজন লোক চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে ভয়ে আর কেউ দাঁড়ায়নি। পরে সমাজের লোকজন মিলে চাঁদা তুলে একজন ভিক্ষুককে দাঁড় করিয়ে দেয়। ওই ভিক্ষুকের কাছে সে পরাজিত হয়েছে।
এই ভিক্ষুক জিতে যাওয়া মানেই 'না' ভোট। প্রত্যাখ্যান। প্রায় অর্ধশত কেন্দ্রে কেউ ভোট দিতে যায়নি। সেখানে আওয়ামী লীগের ভোটগুলো গেল কোথায়? ওই কেন্দ্রগুলোয় যাওয়া-আসার পথে কেউ আহত-নিহত হয়েছেন এমন কোনো সংবাদও তো শুনিনি। তাহলে আওয়ামী লীগের ভোটাররা গেল না কেন?
তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় ছিলেন বা যে কোনোভাবে হোক এখনো ক্ষমতায় আছেন তারা কোনো ভুলভ্রান্তি করেছেন তা স্বীকার করতে চাচ্ছেন না।
তারা যেভাবে কৌতুক, হাসাহাসি, মন্তব্য করছেন তাতে মনে হচ্ছে একাই যথেষ্ট। এ দেশে যে ১৬ কোটি মানুষ আছে, তারা যে দেশের জন্য ভাবে, তাদেরও যে মতামতের প্রয়োজন আছে এটা মনেই করছেন না। কোনো জাতির জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি খুব ভয়ঙ্কর। একটা পত্রিকায় দেখলাম পাঁচ বছরে ২ হাজার ৯৭ জন কোটিপতি হয়েছেন এ দেশে। রাজনীতি কোনো পেশা নয়, এটা একটা ব্রত যে আমি মানুষের কল্যাণের জন্য আমার জীবনটা উৎসর্গ করতে রাজি আছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।