আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পূর্ণ ক্ষতিপূরণ ‘পাননি’ রানা প্লাজার শ্রমিকরা

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)এক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি উঠে এসেছে।

রোববার এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য শিল্প মালিকদের গড়িমসিকে দায়ী করেন।

হাই কোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে অভিযোগের মুখে থাকা বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন, তারা নিহত শ্রমিকদের সন্তানদের দায়িত্ব নেবেন।

গত বছরের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১১শ’র বেশি শ্রমিক, আহত হন দুই হাজারের বেশি। এছাড়াও খোঁজ মেলেনি অনেকের।

ধসে পড়ার ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কাজ চলছিল।

দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম ওই ভবন ধসের পর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে নানা ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। আদালতও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা দেয়।   

ভবন ধসের পর নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও বাস্তবায়নের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সিপিডির দ্বিতীয় মূল্যায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. কে জি মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, ভবন ধসের পর ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৪০ জন প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ৭৭৭ জন এক লাখ এবং ৮৪৩ জন ২০ হাজার করে টাকা স্বল্পমেয়াদি ক্ষতিপূরণ হিসেবে পেয়েছেন।

“ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে যে ১০০ কোটি টাকা জমা হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ৭২০ টাকা খরচ করা হয়েছে। বাকি টাকা এখনো অব্যবহৃত রয়েছে,” বলেন তিনি।

রানা প্লাজা ধসের পর উচ্চ আদালতের একটি সুয়োমটো রুলের ভিত্তিতে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণে গত অগাস্টে একটি সাবকমিটি করা হয়, যার প্রধান হন অধ্যাপক আকাশ।

তিনি বলেন, এ কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হলেও এখনো বিজিএমইএর স্বাক্ষরের জন্য তা দাখিল করা সম্ভব হয়নি।

“যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের সমমানের চাকরির ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। উদ্ধারকর্মীদের মধ্যে অনেকে আহত হয়েছেন, কিন্তু কোনো তালিকা না থাকায় তাদের ব্যাপারে কোনো সুপারিশ দেয়া সম্ভব হয়নি। ”

ওই কমিটি স্থায়ী পঙ্গু এবং মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে প্রায় ১৫ লাখ, একটি অঙ্গহানি হয়েছে এমন শ্রমিককে ৭ লাখ এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের প্রত্যেককে দেড় লাখ করে টাকা দেয়ার সুপারিশ করেছিল।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার। আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য টিপু মুন্সি, বিজিএমইএ সভাপতি আতকুল ইসলাম, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার, রানা প্লাজার উদ্ধারকর্মী খোয়াব আলী, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহমদ খান প্রমুখ।

বিজিএমইএ সভাপতি রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের ৩০০ সন্তানের লেখাপড়াসহ সব দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন।

“আমরা এ পর্যন্ত ৩০ জন এতিম পেয়েছি। আরো ২৭০ এতিমের দায়িত্ব আমরা নিতে পারব। ”

ওই ধসের পর ভবিষ্যতে পোশাক শিল্পে দুর্ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় শ্রমিকদের অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

সেইসঙ্গে আতিকুল বলেন, “গার্মেন্ট শিল্পে রাজনীতি ঢুকে গেছে।

একটি অংশ চায় যে কোনো উপায়ে এদেশের পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করতে, যেন এ শিল্প অন্য কোথাও চলে যায়।

“অ্যাকোর্ড এবং অ্যালায়েন্সের যে রিকোয়ারমেন্ট তা মেনে চলতে গেলে পোশাক শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। এ শিল্প যদি এদেশ থেকে চলে যায় আমরা যাব কোথায়? এতগুলো শ্রমিক, এদের কী হবে?”

তার এই বক্তব্যের মঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন, “মালিকরা সব সময়ই বলে থাকেন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো এগুলো মালিকদের মিথ্যাচার। এখনো এরকম কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ”

ইউরোপীয় ক্রেতাদের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘অ্যাকোর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ এবং আমেরিকার ক্রেতাদের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘বাংলাদেশ সেফটি অ্যালায়েন্স’ গঠন করা হয়।

‘অ্যাকোর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ নামে চুক্তিটি সংক্ষেপে ‘অ্যাকোর্ড’ নামে পরিচিত। এ চুক্তিতে এ পর্যন্ত ৮৪টি প্রতিষ্ঠান স্বাক্ষর করেছে।

অন্যদিকে উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড ওয়ালমার্ট ও গ্যাপসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠান জোটবদ্ধ হয়েছে। ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি ইনিশিয়েটিভ’ সংক্ষেপে ‘অ্যালায়েন্স’ নামে পরিচিত।

‘অ্যাকোর্ড’ এবং ‘অ্যালোয়েন্স’র এক হাজার ৭৫০টি কারখানা পরিদর্শনের কথা রয়েছে।

সালমার আত্মহত্যার তদন্ত চায় বিজিএমইএ

রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিক সালমা বেগমের আত্মহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে  সালমা আত্মহত্যা করেছেন বলে গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে, তা সত্য নয় বলেও রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে সংগঠনটি।

গত শুক্রবার তুরাগ থানাধীন বামনারটেক এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে সালমা বেগমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।   

সালমার স্বামী বাবুর বরাত দিয়ে ওইদিন তুরাগ থানার এস আই কামাল হোসেন জানান, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সালমা মাথায় আঘাত পেয়েছিল। তার মাথায় প্রায়ই প্রচণ্ড যন্ত্রণা হত।

 

বাবুর ধারণা, মাথার যন্ত্রণা সইতে না পেরেই সালমা ঘরের আঁড়ায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।

গত ২৪ এপ্রিল সাভার বাজারের রানা প্লাজা ধসে পড়ার দুই-তিনদিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে সালমাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল।

বিজিএমইএ দাবি করেছে, আহত সালমা যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে পারে,  সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাকে পর্যাপ্ত অর্থ দেয়া হয়। পাশাপাশি তাকে বিজিএমইএও সহায়তা দিয়েছে।

সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সিআরপিতে সালমাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার কাজ বিজিএমইএ তদারকি করে বলেও দাবি করা হয়েছে।

বিজিএমইএ আরো বলেছে, সালমার জীবনকে সহজ করার জন্য সংগঠনের উদ্যোগে গত বছরের অগাস্টে তার ৮ বছর বয়সী ছেলে রাকিবের দায়িত্ব নেয় ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (ওরকা)।

“বিজিএমইএর তত্ত্বাবধানে  ওরকা’র চট্টগ্রাম হোমসে রাকিবকে পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত তার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ”


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.