ভারতে ধর্ষণের কারনে এক তরুণী মারা যাওয়ার পর যেখানে নারীদের সেফটির জন্য শালীন পোশাক পরার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়েছে সেখানে ব্লগে দেখলাম অনেকেই হিজাব বা শালীন পোশাককে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি রোধের উপাদান হিসেবে মানতে নারাজ এমনকি তারা অবাধ খোলামেলা পশ্চিমা পোশাকের পক্ষেই লাগাতার সাফাই গেয়ে চলেছেন। তাদের প্রধান শ্লোগান হচ্ছে
"Do not teach us what to wear, teach your sons not to rape"
এখানে বিতর্ক হচ্ছে হিজাব কিংবা বোরকা পরলে ধর্ষণ কমবে কি কমবে না তা নিয়ে। পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়ে দেয়া যায় , যেসব দেশে অবাধ মেলামেশা বেশি, আঁটসাঁট পোশাক যেমন মিনি স্কার্ট ইত্যাদি পরে থাকে মেয়েরা, সেসব দেশে ধর্ষণের হার হাজার গুন বেশি। ইরানে ধর্ষণের হার অনেক অনেক অনেক কম, কিন্তু আমেরিকায় প্রতি ২ মিনিটে ১ জন নারী ধর্ষিত হয়। দিল্লিতে ১৬ মিনিটে ১ জন এবং ভারতে বছরে ২৬০০০ নারী ধর্ষিত হয় তাদের অবাধ মেলামেশা, বলিউডের কালচারের কারনেই -যেখানে নারীকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়।
তাই পোশাক অবশ্যই একটা নিয়ামক। কিন্তু একমাত্র নয়! শালীন পোশাক ধর্ষণের হার কমায় এটা পরিষ্কার। এবার আশা যাক ইসলাম ধর্ষণ বা নারীর উপর যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে কি কি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছে। ধর্ষকামী মানসিকতা আসে অতিরিক্ত যৌন লালসা থেকে, আবার তা আসে নারীকে শুধুই ভোগ্যপণ্য মনে করলে। নারীকে মানবিক ভাবে না দেখে কেবলি লালসা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ভাবলেই যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে ধর্ষণ পর্যন্ত হতে পারে।
এজন্য নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আগে ঠিক করতে হবে। এজন্য ইসলামে মানুষকে সর্বপ্রকার লালসা, লোভ, পরিহার করে সংযমের শিক্ষা দেয়া হয়, কোরআনে বলা হয়েছে, “ওই ব্যক্তিই সফল যে নিজেকে সংশোধিত করতে পেরেছে” ইসলাম একজন মানুষকে(নারী বা পুরুষ) সব রকমের দুনিয়ার মাত্রাতিরত আকর্ষণ (তা অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতার লোভ, অবাধ ভোগবাদ) থেকে মুক্ত হওয়ার শিক্ষা দেয়। তাই প্রাথমিকভাবেই ইসলামি শিক্ষায় বা নৈতিকতায় গড়ে একজন নারী/পুরুষ আত্মিক ভাবেই সংশোধিত মানব। তার পক্ষে এসব নারী নিপীড়নে জড়িয়ে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। নারী পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ককে অপরাধ মুক্ত রাখার জন্যই কোরআনে অনেক আয়াতেই নারী এবং পুরুষ উভয়কেই নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে নারী/ পুরুশ উভয়েই যেন নিজেদের লজ্জাস্থান এর হেফাজত করে।
তাই প্রথমত আত্মিক এবং নৈতিক মূল্যবোধ, দ্বিতীয়ত পরস্পরের গোপন অঙ্গের হেফাজতের জন্য আল্লাহর নির্দেশ দানই নারীর প্রতি লালসা দূর করার জন্য বড় রক্ষাকবচ। কিন্তু সমাজের সকলেই তো আর ইসলামের এই আত্মিক সংশোধনের মধ্য দিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারে না, তাই লালসা তাড়িত পুরুষের হাত থেকে নারীর হেফাজতের জন্য তৃতীয় রক্ষাকবচ হিসেবে ইসলাম (অন্যান্য ধর্মও ) হিজাব বা শালীন পোশাকের প্রস্তাব করেছে। আবারও বলছি এটা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় রক্ষাকবচ। নারীর গোপন অঙ্গ লালসাগ্রস্ত পশুসুলভ পুরুষের দৃষ্টিতে আসলে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি যে বাড়ে তার জন্য উপরের পরিসংখান দেখুন। কিন্তু ইসলাম এসব নরপশুদের আবার সতর্ক করে দিয়েছে যে তারা যদি ধর্ষণ করে তাহলে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই।
ধর্ষণের জন্য এই কঠোর শাস্তির বিধান হচ্ছে ইসলামের চতুর্থ রক্ষাকবচ। প্রকাসশে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দিলে ধর্ষণের হার যে কমতে কমতে শুন্নে চলে আসে তার উদাহরণ ইরান। অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের সাজিয়া আফরিন তো হিজাব পরাই ছিল, তাকে কেন ধর্ষণের শিকার হতে হল? আমার কথা হচ্ছে আপনি ইসলামের বিধান অনুযায়ী সাজিয়া আফরিনকে নিপীড়নকারী ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন, দেখবেন এই কুকর্ম সমাজে অনেক কমে আসবে। আমরা রাতে দরজা বন্ধ করে ঘুমাই নিরাপত্তার জন্য, চুরি, ডাকাতি থেকে সেইফ থাকার জন্য, এখন আপনি যদি বলেন জোর করেও ডাকাত/চোর ঘরে ঢুকতে পারে, অতএব ঘরের দরজা বন্ধ করাটা চোর প্রতিরোধে কোন কাজেই আসবে না, তাই আপনি ঘরের দরজা খুলেই ঘুমাতে শুরু করবেন, হবে? ঘরের দরজা বন্ধ করা অবশ্যই নিরাপত্তার একটা রক্ষাকবচ, কিন্তু একমাত্র নয়, তেমনি হিজাব পরিধান অবশ্যই নারীর জন্য নিপীড়ন রোধের একটা রক্ষাকবচ, এটাকে অস্বীকার করে নারীদের উন্মত্ত পশুদের হামলার শিকার হওয়ার সবক না দেয়াই ভাল। নারীকে পণ্য হিসেবে এবং ভোগের উপচার হিসেবে তুলে ধরছে এই পুঁজিবাদী কালচার যা বুর্জোয়াদের মুনাফাখোরির একটা বড় অস্ত্র।
আজকের এই কথিত পশ্চিমা আধুনিক বস্তুবাদী জড়বাদী ভোগবাদী সভ্যতা নারীকে বাজারের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করছে সবজায়গায় । সাহিত্তে, খেলায়, নাটক –সিনেমায় (হলিউড, বলিউড এখন পরিণত হয়েছে সেক্স ইন্ডাস্ট্রিতে) নারীকে যেভাবে ভোগের উপকরন হিসেবে তুলে ধরে তাই অনেক পুরুষের লালসা লাগামহীন করার জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞাপনে, মার্কেটে, সিনেমায় নারীকে খোলামেলা আঁটসাঁট পোশাকে উপস্থাপন করে এই আধুনিক ভোগবাদী সমাজ যে কালচার উপহার দিয়েছে তাকে কামুক কালচার না বলে উপায় নেই। আধুনিকতা আর নারীর খোলামেলা পোশাক পরা এখন অনেকের কাছেই সমার্থক। এই ভোগবাদী কালচার হচ্ছে আফিমের মত যা ভোগবাদী পুরুষকে প্রলোভিত করছে নারীর প্রতি সহিংস হতে।
ভারতে বলিউড যে নগ্নতার সংস্কৃতি তৈরি করেছে তার কারনেই একদিকে পুরুষদের বানাচ্ছে ধর্ষক আর নারীকে মিনি স্কার্ট পরে অবাধে চলাফেরার অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে তাকে নিরাপত্তাহীন করে রাখা হচ্ছে। এই পুঁজিবাদী ভোগবাদী কালচারই নারীকে বারবার ভোগ্যপণ্য হিসেবে তুলে ধরে যেন তার একমাত্র কাজ পুরুষের লালসার নিবৃত্তি করা। এই কালচারের অপনোদন ছাড়া নারীর প্রতি ধর্ষকামী এবং নিপীড়নকামী মানসিকতার পরিবর্তন আশা করা হাস্যকর। বলিউড হলিউডের সেক্স ইন্ডাস্ট্রি এর বিরুদ্ধে না বলে, আধুনিক ভোগবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে না বলে যারা হিজাবের আর ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে খোলামেলা পোশাকের পক্ষেই ওকালতি করছেন তারা যে প্রকারন্তরে এই পুঁজিবাদী ভোগবাদী কালচারের আফিমে বুঁদ হয়ে নিজের বিচার বুদ্ধি হারিয়ে এসেছেন তা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
শালীন পোশাক ধর্ষণ এর হার কমায় এটা যারা অস্বীকার করেন তারা নিচের পরিসংখ্যান দেখুন।
http://www.rainn.org/statistics
১) South Africa: এই দেশে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে১১৯৫ জন ধর্ষিত হয়। সেখানে সমাজ বেবস্থা খুব খারাপ। অবাধ যৌনাচার, AIDS এর ছড়াছড়ি, মেয়েদের অর্ধ উলঙ্গ অবস্থা। শিক্ষার দিক থেকে ভাল না।
২) Australia: South Africa এর পর এর অবস্থান।
এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৭৭৭ জন ধর্ষিতহয়। High Standard সমাজ বেবস্থা। শিক্ষা বেবস্থাও অনেক Developed। Morality এর দিক থেকেও so called developed। সেখানে মেয়েদের যে কোন Dress up allowed. কোথাও কোথাও পর্দা নিষিদ্ধ।
3) Canada : এর পরের অবস্থান। এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৭৩৩ জন নারী ধর্ষিত হয়। সেখানের সমাজ বেবস্থা, শিক্ষা বেবস্থা, Morality so called developed। অবশ্যই তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষাদেয় Rape না করার। মেয়েদেরDress up as they wish. কোন বাঁধা নেই।
৪) Zimbabwe: এর পরের অবস্থান । এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৪৫৭ জন নারী ধর্ষিত হয়। সমাজ বেবস্থা, শিক্ষা বেবস্থা, Morality খুবখারাপ। এখানেও মেয়েদের Dress up এ কোন বাঁধা নেই। যাখুশি কাপর পরে।
৫) U.S.A: এর পরের অবস্থান। এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৩০১ জন নারী ধর্ষিত হয়। বাকি অংশআর নাই বললাম। অবশ্যই এখানে মেয়েদের Rape শিক্ষা দেয়া হয় না। মেয়েদের Dress up না ই বলি।
Being Naked isallowed is some states. কোথাও কোথাও পর্দা নিষিদ্ধ।
৬) New Zealand: এর পরের অবস্থান। এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ২১৩ জন ধর্ষিত হয়। শিক্ষা বেবস্থা, সমাজ বেবস্থা, Morality so called developed. নারীদের dress up free. কোথাও কোথাও পর্দা নিষিদ্ধ।
৭) U.K: এর পরের অবস্থান।
এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ১৪২ জন ধর্ষিত হয় বাকি আমার কিছু বলারনাই। সব ই জানা।
এবার আসি শেষের দিকে কারা আছেঃ
১) Saudi Arabia: শেষের দিক থেকে ১ নম্বর। এখানে প্রতি ১০লক্ষ নারীতে ৩ জন ধর্ষিত হয়। শিক্ষা বেবস্থা so called developed না।
শরিয়া আইন এ চলে। মেয়েদের পর্দা না করে এবং একা বাইরে বের হওয়া মানা। বের হতে চাইলে স্বামী, বড় ভাই কাউকে নিএ বের হতে হবে।
২) Azerbaijan: শেষের দিক থেকে ২ নম্বর। ৯৫% মুসলিম।
এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৩জন ধর্ষিত হয়। শিক্ষা বেবস্থা, Morality so called developed না। মেয়েদের পর্দা করে বের হতে হয়।
৩) Yemen: শেষের দিক থেকে ৩ নম্বর। মুসলিম দেশ।
West এর তুলনায় শিক্ষা বেবস্থা, সামাজিক বেবস্থা so called developed না । মেয়েদের পর্দা করে বের হতে হয়।
৪) Indonesia : শেষের দিক থেকে ৪ নম্বর। এখানে প্রতি ১০লক্ষ নারীতে ৫ জন ধর্ষিত হয়. শিক্ষা বেবস্থা, সামাজিক বেবস্থা so called developed না। মেয়েদের পর্দা করতে হয়।
৫) Oman: মুসলিম দেশ। এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ১৮ জন ধর্ষিত হয়। শিক্ষা বেবস্থা, সামাজিক বেবস্থা so called developed না। মেয়েদের পর্দা করতে হয়।
এটা কোন মধ্যযুগীয় তথ্য না।
২১ শতকে যেখানে সভ্য জাতিগুলার তথ্য।
এখন আমাকে বলেন Rape এর Rateকেন ঐ So Called Developed দেশ গুলোতে বেশি। কেন? ওইখানে কি Morality Strong না? (এই পরিসংখ্যান ব্লগার তামিম থেকে সংগৃহীত )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।