আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যের আড়ালে



রহস্য

চার নম্বর গলিটায় ঢুকতেই কারেন্ট চলে গেল। মুহূর্তেই যেন ধুপ করে নেমে এলো একরাশ অন্ধকার। দুপাশে দুটো বড় বড় বিল্ডিং। মাঝখান দিয়ে একটা বহুদিনের রোগীর হাড় শিরশিরে রাস্তাটায় দিয়ে অনুমানের উপর মুখস্থ হাটা ধরলাম আমি। কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।

চোখের কাছে হাতটা এনে কিছুক্ষণ নাড়ালাম। নাহ! হাতের যেন অস্তিত্বই নেই। তীব্র অন্ধকারে যেন হারিয়েই গিয়েছি।
পকেটে মোবাইল অফ হয়ে পড়ে আছে। চার্জ নেই।

রিমির সাথে দু ঘণ্টা একটানা কথা বলেছি অফিস ফেরত। আর সে ধকলেই বেচারার এই অবস্থা।

ঘরে ফিরতেই বাবা বললেন , রোজ এত দেড়ি করিস কেন ? অবস্থা ভাল না। কখন কি হয়।
মাও সুর ফেলান।

দুজন নাকি মারা গেছে আজ। মার্ডার । একজনের মাথা পাওয়া যায়নি। মাথাবিহিন লাশ! সেটাকেই কবর দিয়েছে।
: এ লোকটার কাছেও পাওয়া গেছে ।


গম্ভীর মুখে বলেন বাবা ।
: কি ?
: চিঠি ।
: চিঠি !
: যারা গত তিনদিনে মরেছে সবাই পেয়েছে। একই চিঠি। রাতের বেলা ঘরে ফিরে ব্যাগ খোলতেই পেয়েছে।


আমার হাসি পায় শুনে ।
খেতে বসে প্রতিদিন শুনি এসব খবর।
মনে মনে ভাবি টিভি মিডিয়ার খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নেই। গুজব টুজুব ছড়িয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা।
রুমে ঢুকে মোবাইলটা চার্জে লাগালাম প্রথম।

চার্জ হচ্ছেনা। বাতির সুইচটা চেপে দেখলাম। কারেন্ট এখনও আসেনি। লোডশেডিং প্রচণ্ড চালাচ্ছে। রাতের বেলা প্রায়ই ঘণ্টার উপর ঘণ্টা চলে এ জ্বালাতন ।

অন্ধকারেই বিছানা হাতরে শুয়ে পড়লাম। মাথায় অনেক ভাবনা। রিমিকে কাল কিছু একটা উপহার দিতে হবে। প্রথম বেতন পাচ্ছি। ইচ্ছে ছিল পুরো টাকাটায় মায়ের হাতে তুলে দেব।

কিন্তু রিমিকে উপহারটা নি দিলেই নয়। পড়ালেখা শেষ করে তিনবছর বেকার ছিলাম। প্রথম বছরটা বাবা হাতখরচ দিত। দ্বিতীয় বছরে গেল সেটা বন্ধ হয়ে। সে দুটো বছর , দুর্বিসহ দুটি বছরে রিমি ছিল আঠার মত।

ছোট একটা কিন্ডার গার্টেনে আটশো টাকা মাইনের চাকরি করে মাস শেষে চারশো টাকা গুজে দিত আমার মানিব্যাগে।

বেতন পেয়েছি। অফিস থেকে বেরোনোর সময় একাউন্টস থেকে নিয়ে নিয়েছি। আট হাজার টাকা কড়কড়ে নোট। মনটা খুব হালকা লাগছে।

ইচ্ছে করছে ঐযে ট্রাফিক পুলিশটা তার ঐ উঁচু খাম্বাটায় উঠে নাচি কিছুক্ষণ । রাত নটা । আজকেও বাড়ি ফিরতে দেড়ি হবে। রিমিদের বাড়ি যেতে হবে প্রথম। এক তোড়া ফুল আর একটা উপহার কিনেছি ওর জন্ ।

তিন হাজার টাকায় কিনেছি উপহারটা।
বড় রাস্তাটা পেরিয়ে গলিটায় ঢুকতেই ধুপ করে অন্ধকার নেমে এলো। লোডশেডিং । তাতে কি মোবাইলের আলো জ্বাললাম। দু কদম এগোতেই হঠাত্ ..
কালো অন্ধকারটা কেমন সাদা হয়ে গেল।

ফকফকে তকতকে চারদিক। একবার মনে হল আকাশে ভাসছি । পরক্ষনেই ,না স্থির যেন। চোখদুটো ঝাপসা । তারপর দুটো ঝাপটায় আবার সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল।

কারেন্ট এসেছে মনে হয়। সামনে মাটিতে কাত হয়ে পড়ে আছে একটা লাশ। একপাশে একটা ফুলের তোড়া। কারও পা লেগে ফুলগুলো থেবরে গিয়েছে। লাশটার হাতে একটা তিন হাজার টাকা মূল্যের উপহার ! পকেটে একটা খাম।

আর .. আর একটা চিঠি । লাশটার মাথা নেই।

আড়ালে

: শফিক ঠিকমত কাজটা করেছিস?
: হ্যাঁ । উবু হয়ে ফুল কিনছিল। সেসময় শার্টের পকেটে গুজে দিয়েছি চিঠিটা।


: সাবাস ব্যাটা ! এবার পজিশন নিয়ে দাড়িয়ে থাক। মনে রাখবি অন্ধকারেই কাজটা সারতে হবে। এক কুপে ।
: ব্যাপারনা ! মাথাটা চাইতো ?
: হুম । পকেটের টাকাটাও ।


: চিন্তা করোনা। আতঙ্কটা গেড়ে দিয়েছি । এবার শুধু কাজ । সবগুলো টার্গেট যখন সফল হয়েছে , এটাও হবে ।
কালো কাপড় পড়া লোকটা শুধু একটু হাসে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।