অবশেষে টাইটানিককে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের ঘনিয়ে ওঠা রহস্যের সমাধান হলো। জানা গেল স্রেফ সম্পত্তির জন্য পাঁচ দশক ধরে দুনিয়ার সামনে মিথ্যাচার করেছেন হেলেন ক্রেমার। নিজেকে অ্যালিসন পরিবারের একজন দাবি করেন ক্রেমার। তিনি জানিয়েছিলেন, টাইটানিকডুবিতে পরিবারের সবাই যখন মারা যান, তখন তার বয়স দুই বছর। কিন্তু অ্যালিসন পরিবার এ দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করে।
শুরু হয় সম্পত্তি নিয়ে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব যা ক্রেমারের মৃত্যুর পরেও থামেনি। শেষে ডিএনএ পরীক্ষায় ধরা পড়লো, অ্যালিসন পরিবারের সঙ্গে ক্রেমারের কোনও যোগসূত্র নেই৷ ক্রেমারের দাবিকে বলা হচ্ছিল 'লাস্ট গ্রেট মিসট্রি অফ দ্য টাইটানিক'।
১৯১২ সালে টাইটানিক তলিয়ে যাওয়ার ২৮ বছর পর ক্রেমারের দাবিতে বিতর্কের সূত্রপাত। ১৯৪০ সালে রেডিও-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হেলেন ক্রেমার দাবি করেন, তার আসল নাম লোরেন অ্যালিসন। হাডসন অ্যালিসন নামে যে বিত্তশালী শিল্পপতি টাইটানিকে সপরিবারে সফর করছিলেন, সেই পরিবারের মেয়ে হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন হেলেন।
টাইটানিকডুবির পর অ্যালিসন পরিবারের মর্মান্তিক পরিণতি প্রকাশ্যে আসে। হিমবাহে জাহাজ ধাক্কা খাওয়ার পর হাডসন ও বেসি অ্যালিসনের সাত মাসের ছেলে ট্রেভরকে লাইফবোটে তুলে দেন এক পরিচারিকা। কিন্ত্ত হাডসন বা তার স্ত্রীর কাছে সে খবর ছিল না। দু'বছরের লোরেনকে (আসল ) নিয়ে তারা গোটা জাহাজ তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়ান। শেষপর্যন্ত তিনজনেরই সলিল সমাধি হয় বলে জানা যায়৷এরপর কঠিন অসুখে ১৯২৯ সালে মারা যায় ট্রেভর।
১৯৪০ সালে ক্রেমারের উদয়। অ্যালিসন পরিবারের একমাত্র জীবিত উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে মরিয়া হয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, একেবারে শেষ মুহূর্তে তাকে এক ব্যক্তি উদ্ধার করে লাইফবোটে তোলেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকেই তিনি বাবা হিসেবে জানতেন। কিন্ত্ত পরে সত্যিটা তার সামনে আসে।
স্বাভাবিকভাবেই অ্যালিসনদের পক্ষ থেকে সে দাবি নস্যাৎ করা হয়েছে একাধিক বার। যদিও হেলেন ক্রেমার সব অবস্থাতেই নিজেরর দাবিতে অটল ছিলেন।
১৯৯২ সালে ক্রেমার মারা যান। ভাবা হয়েছিল, এবার বুঝি টাইটানিককে জড়িয়ে শেষ রহস্যে যবনিকা পড়ল। কিন্তু তা হয়নি।
আসরে নামেন ক্রেমারের নাতনি ডেব্রিনা উডস। তিনি দাবি করেন, দাদীর স্যুটকেস থেকে এমন কিছু কাগজ তিনি পেয়েছেন যা অ্যালিসন পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে তার দাদীর দাবির সত্যতা দেয়। ডেব্রিনা বলেন, দাদী মারা গিয়েছেন। বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকার এবার তিনি। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিজের দাবি তুলে ধরেন ডেব্রিনা।
এমনকি একটি বই লেখার পরিকল্পনাও করে ফেলেন। অ্যালিসন পরিবারের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টাও করেন। কিন্ত্ত তাদের আইনজীবীরা বাধা দেন। বিতর্কের নিষ্পত্তিতে শুরু হয় 'লোরেন অ্যালিসন আইডেনটিফিকেশন প্রজেক্ট'। নেতৃত্বে টাইটানিক গবেষক তথা ফরেন্সিক বিজ্ঞানী ট্রেসি উস্ট।
তিনিই ডিএনএ পরীক্ষার কথা বলেন। ডেব্রিনা তাতে রাজি না হলেও এগিয়ে আসেন তার সৎবোন ডিন জেনিংস৷ ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণ হয়, অ্যালিসন পরিবারের সঙ্গে ক্রেমার বা তার উত্তরসূরিদের কোনও সম্পর্ক নেই।
হাডসন অ্যালিসনের ভাই পার্সির নাতি ডেভিডের বক্তব্য, ক্রেমারদের দাবি আমরা কোনোদিন মেনে নেইনি। কিন্ত্ত তাদের দাবি আমাদের চাপে রেখেছিল। আমাদের পূর্বসূরিদের যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।