আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একুশ নিয়ে যে প্রশ্নগুলো তোলা জরুরি।

নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।

‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি/ সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি। ’ এ শুধু গানের পঙ্ক্তি নয়, বরং এই পঙ্ক্তির ভেতরেই জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের পরম সত্য লুকিয়ে আছে!
মানব সভ্যতার বিবর্তনের আলোকে ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে, বঙ্গ নামক এই ভূ-খণ্ডে, আমরা খুঁজে পাব শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির এক সুবিশাল ইতিহাস-ঐতিহ্য। এই অতীতমুখিতাকে আপাতত একপাশে সরিয়ে রেখে বলা যায়, বিশ্বে আমরাই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য লড়াই করে রক্ত ঝরিয়ে, জীবন দিয়ে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। যার ধারাবাহিকতায় আজ আমরা বাংলাদেশ নামে একটা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন ভূখণ্ডও পেয়েছি।

দেরিতে হলেও বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের ভাষার সংগ্রামকে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি এখন শুধু আমাদের নয়, বিশ্বমানব জাতির সম্পদ। বিশ্বের যে কোনো নিপীড়িত জাতি আমাদের ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস থেকে সংগ্রহ করতে পারে মুক্তিসংগ্রামের রসদ।
আবার সে সাথে একথাও সত্য, একুশ
বাঙালি জাতির মন, মনন, সংস্কৃতিতে যেভাবে জড়িয়ে আছে, এটা অন্য কোনো জাতির পক্ষে ঠিক আমাদের মতো করে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। আমাদের নিজস্ব একটা ব্যাপার আছে।

যেভাবে ফেব্রুয়ারি এলেই আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যকল্পের মতো ভেসে ওঠে, ভাষার গান, নাটক, নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরি, আর মাস জুড়ে বইমেলা ও নতুন বইয়ের সোঁদা গন্ধ। একই সাথে আমাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় কতগুলো প্রশ্নের, আচ্ছা জাতি হিসেবে আমাদের এত লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস, সেই আলোকে বিশ্বে আজ আমাদের অবস্থানটা কোথায়? বিশ্বে কয়েক হাজার ভাষার মধ্যে আমাদের বাংলাভাষার অবস্থান সপ্তম। কিন্তু জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান কততম? যখন ভাবতে বসি ঠিক হিসাব মিলাতে পারি না।
আমরা যখন আমাদের ভাষাসংগ্রাম থেকে অন্য জাতিকে মুক্তি সংগ্রামের রসদ সংগ্রহের কথা বলি, তখনই মনে পড়ে, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও এদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্রজাতিসত্ত্বাকে নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। এখনও এই দেশে ৬ কোটি মানুষ আছে যাদের সামনে বাংলাদেশ লিখে দিলেও তারা পড়তে পারবে না।

কিংবা অন্যরা যখন চন্দ্র-অভিযান সেরে ফেলেছে অধশতক আগে, আমরা তখনও লড়াই করছি শতভাগ স্যানিটেশন সুবিধার জন্য। কেন এমন হলো? যে ভাষাসংগ্রাম জাতিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার শিক্ষা দিয়েছে, সে জাতির মাথার ওপর আজ কেন সাম্প্রদায়িকতার বিষধর সর্প শঙ্খচুড়ার মতো ফণাতুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রশ্নগুলো এড়িয়ে আমাদের সামনে এগোনোর কোনো উপায় নেই।
মনে রাখতে হবে জাতি সমৃদ্ধ হলেই ভাষা সমৃদ্ধ হয়। জাতির অর্থনৈতিক রাজনৈতিক মুক্তির প্রশ্নের সাথে ভাষার মুক্তির প্রশ্নটা এক ও অভিন্ন।


লেখক : গল্পকার
0

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।