শহীদের খুন লেগে, কিশোর তোমার দুই হাতে দুই, সূর্য উঠেছে জেগে। -------হাসান হাফিজ
উপররে ছবি বলে দিচ্ছে ২০১২ সাল চলে যাচ্ছে আর ২০১৩ সাল সমাগত। সবাইকে ইংরজি নববর্ষরে আগাম শুভচ্ছো। এখন আমরা "বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা"-এর উপর একটি প্রবন্ধ পাঠ করব।
বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দিন মাস বছর গণনার জন্য ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করি।
মানুষের নাগরিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গই হচ্ছে বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার। বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার হচ্ছে মাস, সপ্তাহ ও দিনে বিভক্ত একটি বrসর ভিত্তিক সারণি; যেখানে দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর একক গুলো ব্যবহৃত হয়। বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার প্রনয়নের ভিত্তি হলো জ্যোতিবিজ্ঞান ভিত্তিক পর্যবেক্ষন লব্দ উপাত্ত থেকে বছর, মাস ও দিনে ‘কাল একক’ নির্ধারণ করা। আবর্তনশীল জ্যোতিষ্ক সমূহ পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য যাদের নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণন ক্রমান্বয়ে দিন, মাস ও বrসরের হিসাব সৃষ্টি করে। সৌরজগতে পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য একে অপরের আবর্তনের ফলে আমরা দিন, মাস ও বছরের হিসাব পাই।
যেমন:
বর্ষপঞ্জি গণনা পদ্ধতি ঃ
গণনা পদ্ধতি অনুসারে পৃথিবীতে প্রধানত তিন শ্রেণীর বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার দেখা যায়। যথা:
১. সৌর ক্যালেন্ডার
২. চান্দ্র ক্যালেন্ডার
৩. নাক্ষত্রিক ক্যালেন্ডার ।
সৌর বrসর ঃ
সূর্যের বার্ষিক গতি অনুযায়ী সৌর বrসর প্রতিষ্ঠিত। সূর্যের পথকে ক্রান্তিবৃত্ত বলা হয়। সূর্যপথের (ক্রান্তিবৃত্তের) কোন এক বিন্দু থেকে সূর্য যাত্রা করে ঐ বিন্দুতে তার প্রত্যাবর্তন কালকে এক সৌর বrসর বা ক্রান্তি ব r সর বলা হয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক পর্যবেক্ষণলব্দ উপাত্ত থেকে পাওয়া তথ্য মতে ক্রান্তি বrসর অর্থাr ঋতুসমূহের বrসরই প্রকৃত বrসর। সূর্যের এই আবর্তন কাল ধ্রব নয়, অতি ধীরে হলেও এই আবর্তন কাল হ্রাস পাচ্ছে। একারণে একটি বিশেষ সময়ের সূর্য পথকে ঐসময়ের প্রমান পথ হিসাবে গণ্য করা হয়। ১৯০০ খৃষ্টাব্দে সূর্য যে পথে প্রদক্ষিণ করেছিল সে পথটিকে ধরা হয় ‘প্রমান ক্রান্তি বrসর’ । প্রমান ক্রান্তি বrসরের সৌর দিবসের সংখ্যা ৩৬৫.২৪২২ যা আগামী ১০০০ বছর নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যাবে।
প্রায় ৩০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে অর্থাr আজ থেকে পাঁচ হাজার বrসর পূর্বে এই দৈর্ঘ্য ছিল ৩৬৫.২৪২৫ সৌরদিবস।
চান্দ্র বrসর ঃ
চন্দ্রের বর্ষ পরিক্রমার ভিত্তিতে এই সন গণনা করা হয়। চান্দ্র মাস হচ্ছে চন্দ্রের সূর্যের দিকের অবস্থান (অমাবস্যা) থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে একই অবস্থানে প্রত্যাবর্তনের সময়। সাধারণত এই মাস ২৯.৩০৫৫ থেকে ২৯.৮১২৫ সৌরদিবসের মধ্যে পরিবর্তিত হয়। চন্দ্রের গড় প্রদক্ষিণ কাল বা চান্দ্র মাসের গড় দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২৯.৫৩০৫৮৮১ সৌর দিবস।
চন্দ্রের হিসাবে ৩৫৪ দিন ৯ ঘন্টায় এক চান্দ্র বrসর । অর্থাr চান্দ্র বrসরের দৈর্ঘ্য ৩৫৪.৩৬৭০৫৭২ সৌরদিবস।
নাক্ষত্রিক বrসর ঃ
একটি স্থির নক্ষত্রের অবস্থার সাপেক্ষে সূর্যের ঐ অবস্থানে প্রত্যাবর্তনের কালকে বলা হয় নাক্ষত্রিক বrসর । রাশিচক্রের ভিতর দিয়ে চন্দ্রের সাতাশটি নক্ষত্র পরিক্রমনের হিসাবে নাক্ষত্রিক বrসর প্রতিষ্ঠিত। একটি নাক্ষত্রিক বrসরের দৈর্ঘ্য ৩৬৫.২৫৬৩ সৌরদিবস।
বর্তমানে সারাবিশ্বে বহুল ব্যবহৃত বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডারের নাম ‘গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার’। যা প্রমান ক্রান্তি বrসরের (৩৬৫.২৪২২ সৌর দিবস বা ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড) হিসাব অনুযায়ী চলে। গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হচ্ছে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সংষ্কারকৃত রূপ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, অঞ্চলে বা প্রতিষ্ঠানে এখনও রয়েছে নানা ধরনের বর্ষপঞ্জি। ‘গ্রেগরিয়ান’ ছাড়াও আছে চার্চ, হিবরু, হিজরি, চীনা প্রভৃতি বর্ষপঞ্জি।
উপমহাদেশে আছে শকাব্দ, বঙ্গাব্দ ও অন্যান্য আঞ্চলিক পঞ্জি। আমাদের বঙ্গাব্দের সঙ্গে সাদৃশ্য মেলে চাকমাদের ‘বিজু’, ত্রিপুরাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’, অসম-এর ‘বিহু’, পূর্ব পাঞ্জাব-এর শিখদের ‘বৈশাখী’ প্রভৃতি পর্ব-পার্বণের। উপমহাদেশের বাইরে শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশে রয়েছে প্রায় একই রকমের বর্ষপঞ্জি।
বঙ্গাব্দ প্রবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে বাংলায় ১৫৭৬ অব্দ থেকে মুগল শাসন। খাজনা আদায়ের সুবিধা হবে (এই চিন্তা থেকে হিজরি সনের পরিবর্তে এ সন চালু করা হয় তখন ফসলের মওসুমের দিকে লক্ষ্য রেখে।
সম্রাট আকবর (১৫৪২- ১৬০৫)-এর এ সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করা হয়েছিল ১৫৮৫ অব্দের ১০ই মার্চ, তবে তা কার্যকর হয় সম্রাটের সিংহাসন আরোহণের স্মারক বর্ষ ১৫৫৬ অব্দ মোতাবেক হিজরি ৯৬৩ চান্দ্র সনকে ৯৬৩ সৌর সনে রূপান্তরের মাধ্যমে। এ রূপান্তরে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন শাহী দরবারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতেহ সিরাজি। এজন্য বঙ্গাব্দ মুগলি বা ফসলি সন হিসেবেও পরিচিত।
উপমহাদেশে পঞ্জিকা ‘পঞ্চাঙ্গ’ নামেও পরিচিত। কারণ, এতে থাকে পাঁচটি অঙ্গ (বার, তিথি, নক্ষত্র, যোগ ও করণ।
এই পঞ্জিকা গণনা পদ্ধতি রচিত হয়েছিল আনুমানিক ১৫০০ পূর্বাব্দে। তখন বছরকে ভাগ করা হয়েছিল ১২ মাসে। সেই মাসগুলোর নাম ছিল (তপঃ, তপস্যা, মধু, মাধব, শুক্র, শুচি, নভস্, নভস্য, ইষ, উর্জ, সহস্, সহস্য। বর্তমান ১২ মাসের নাম রাখা হয়েছে ওই সময়ে উদিত নক্ষত্রগুলোর নাম অনুসারে। যেমন : বিশাখা—বৈশাখ; জ্যেষ্ঠা—জ্যৈষ্ঠ; আষাঢ়া—আষাঢ়; শ্রবণা—শ্রাবণ; ভাদ্রপদা—ভাদ্র; অশ্বিনী—আশ্বিন; কৃত্তিকা—কার্ত্তিক; পুষ্যা—পৌষ (পউষ); মঘা—মাঘ; ফল্গুনী—ফাল্গুন; চিত্রা—চৈত্র।
অগ্রহায়ণ ছিল সেকালে পঞ্জির প্রথম মাস, এজন্য তার নামে রয়ে গেছে সেই পরিচয়।
সূত্র:
১। বাংলা সন
২। বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার ও তার একক সমূহ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।