১৯৮৪ সালের ৩ থেকে ৮ জুন চালানো বিতর্কিত সেই অভিযানে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়ে মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উপস্থাপিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণেই’ সে সময় ইন্দিরা গান্ধীর সরকারকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখনকার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার।
খলিস্তান আন্দোলনের নেতা জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়াল ও তার সঙ্গীদের স্বর্ণমন্দির থেকে উৎখাত করতে চালানো ওই অভিযানে ব্যাপক প্রাণহানী ঘটে। ওই ঘটনা বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করে, ভারতেও বিতর্কের মুখে পড়ে তখনকার কংগ্রেস সরকার।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি ব্রিটেনের সরকারি মহাফেজখানা থেকে প্রকাশিত দুটি নথির বরাত দিয়ে লেবার পার্টির এমপি টম ওয়াটসন অভিযোগ তোলেন ‘অপারেশন ব্লু স্টার’-এর আগে ইন্দিরা ব্রিটেনের সাহায্য চান এবং থ্যাচার তাতে সম্মতিও দেন।
ওই নথি অনুযায়ী, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাদের পরামর্শ দিতে সে সময় ভারতেও এসেছিলেন ব্রিটেনের কমান্ডো বাহিনী ‘স্পেশাল এয়ার সার্ভিস’- এর এক কর্মকর্তা।
থ্যাচার ভারতে হেলিকপ্টার বিক্রির জন্যই সে সময় ইন্দিরাকে এই সাহায্য করেছিলেন বলেও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অভিযোগ ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে গত মাসের শুরুতে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ মঙ্গলবার সেই প্রতিবেদনই পার্লামেন্টে তোলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের অনুরোধে ব্রিটেন সে সময় ‘শুধু পরামর্শই’ দিয়েছিল। তবে সে অনুযায়ী কাজ করেনি ভারত।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী সে সময় ভারতে আসা এসএএস কর্মকর্তা পরামর্শ দিয়েছিলেন, খালিস্থানি বিচ্ছিন্নতবাদীদের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হলে তবেই সামরিক অভিযানের কথা ভাবা উচিৎ।
তার পরামর্শ ছিল, স্বর্ণ মন্দিরে সরাসরি সেনা অভিযানে না গিয়ে হেলিকপ্টার নিয়ে আকস্মিক আক্রমণে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চমকে দিতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকি কমে আসবে।
ওই চেষ্টায় কাজ না হলে তবেই সরাসরি সেনা অভিযানের পক্ষে মত দেয়া হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে দাবি করেছেন হেগ।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে তিনি বলেছেন, ওই কর্মকর্তা ফিরে যাওয়ার পর পুরোপুরি নিজেদের পরিকল্পনায় শিখ স্বর্ণমন্দিরে অভিযান চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী।
হেলিকপ্টার ব্যবহার না করে তারা টাংক নিয়ে সরাসরি হানা দেয় এবং জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়াল ও তার সহযোগীরা ছাড়ও প্রায় পাঁচশ সাধারণ মানুষ নিহত হয়।
হেগ প্রতিবেদনে বলেছেন, অপারেশন ব্লু স্টারের সঙ্গে হেলিকপ্টার বা অস্ত্র বিক্রির কোনো যোগাযোগ তারা খুঁজে পাননি। ওই অভিযানের জন্য ভারতীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ বা কোনো উপকরণও ব্রিটেন দেয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৮৪ সালের ওই অভিযানে শিখ উপাসনালয় স্বর্ণমন্দির দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদের তৎপরতা আরো গতি পায়। ওই বছরই নিজের শিখ দেহরক্ষীর হাতে নিহত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
স্বর্ণমন্দিরে অভিযান ইন্দিরাহত্যায় ভূমিকা রেখেছিল বলেই অনেকে মনে করেন।
এদিকে ভারতে নির্বাচনের তিন মাস আগে ব্রিটিশ সরকারের এই স্বীকারোক্তি ত্রিশ বছরের পুরনো এক ক্ষতকে নতুন করে উস্কে দিয়েছে, যা কংগ্রেসবিরোধীদের হাতে সমালোচনার নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত কংগ্রেস বা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।