মোমার্ত
শুরুর কথা
ছয় সপ্তাহের ট্রেনিং-এ মুন যখন দিল্লী উড়ে গেল সবচেয়ে খুশি হলাম আমি। যাক দিল্লীতে আরেকটা সফরের অজুহাত পাওয়া গেল। দুজনে ঠিক করলাম ট্রেনিং-এর পঞ্চম সপ্তাহে আমি দিল্লী যাব, সুযোগমত ঘুরবো এবং ফিরে আসার সময় ওর বাড়তি জিনিসপত্র নিয়ে আসবো। সে মতে একা একা বাসে ঢাকা থেকে কলকাতা, সেখান থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লী। একা ভ্রমণ করার একটা আলাদা মজা আছে।
বিপুল স্বাধীনতা, কোন বাড়তি দায়িত্ব নাই, নির্ভার হয়ে ইচ্ছে হল থামলাম ইচ্ছে হলো চললাম। তো এই করে আগের দিন কলকাতা শেয়ালদা ষ্টেশন থেকে বিকাল ৪:৫০ টায় রাজধানী এক্সপ্রেসে রওনা দিয়ে পরের দিন নির্ধারিত সময় সকাল ১০:২০ টার স্থলে ঠিক ১০:৪৫ টায় নিউ দিল্লী রেলষ্টেশনে ঢুকলাম। এর আগে দুবার এসেছি এখানে। ষ্টেশন থেকে বের হয়ে প্রথম কাজ হল উল্টোদিকে পাহাড়গঞ্জের একটা লস্যির দোকানের লস্যি খাওয়া। এত সুস্বাদু লস্যি কোথাও খাই নাই।
প্রথমবার দিল্লী এসে এই ছোট্ট দোকানটার খোঁজ পেয়েছিলাম।
মুনদের হোস্টেল ছিল কোরলবাগ বলে একটা জায়গায়। মধ্যমমানের হোটেল ও বিভিন্ন সেরা ব্র্যান্ডের শপিংমলের জন্য বিখ্যাত। দিল্লী মেট্রো সার্ভিসের একটা ষ্টেশন কোরলবাগের পাশ ঘেঁষে থাকাতে ওখান থেকে শহরের অন্যান্য জায়গার যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ সুবিধাজনক। সোম থেকে শুক্র সকাল ৯টা-৩টা টানা ক্লাস, শনি-রবি বন্ধ।
ট্রেনিং ক্লাস বাদ দিয়ে কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কাজেই দিল্লীর বাইরে বেড়াতে হলে উইকএন্ডের ঐ ২দিনই ভরসা। ভ্রমণে ট্রেন সবসময়ই আমাদের প্রথম পছন্দ। কিন্তু বিশাল ভারতের কোথাও ট্রেনে বেড়ানোর পক্ষে ২দিন খুবই অপ্রতুল সময়। দুজনে ভেবে ভেবে কিছুই ঠিক করতে পারি না, অথচ দ্রুত শনিবার কাছিয়ে আসছে।
আগ্রা, জয়পুর কিংবা আজমীর - ১ দিনেই ঘুরে আসা যায় দিল্লি থেকে। কিন্তু সবগুলো জায়গাতেই আগে গেছি দেখে বাতিল করে দিলাম। অবশেষে ঠিক করলাম রেলষ্টেশনে গিয়ে নতুন যে যায়গার টিকেট পাবো সেখানেই যাব। সিদ্ধান্ত নেয়া হতেই বেশ একটা এ্যাডভেঞ্চার ভাব চলে আসলো।
নিউ দিল্লী ষ্টেশনের দোতলায় বিদেশীদের জন্য টিকেট কাটার একটা হলরুম আছে।
সারি সারি টেবিলে কম্পিউটার নিয়ে বসে আছেন রেলওয়ে অফিসাররা। সবগুলোর সামনেই বিদেশীদের ছোট ছোট লাইন। ভারতে যে কোন রেল রুটেই টিকেটের প্রচুর চাহিদা, ক্ষেত্রবিশেষে ৬ সপ্তাহ আগে থেকে টিকেট বুক করতে হয়। তবে আশার কথা, বিদেশীদের জন্য বিভিন্ন গন্তব্যের কিছু না কিছু টিকেট সংরক্ষিত থাকে। ভারতীয় ও আমাদের গায়ের রং এক হলেও সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে আমরা বিদেশী কোটার সুবিধা নিতে বৃহস্পতিবার বিকালে হলরুমে গিয়ে ঢুকলাম।
রুমের মাঝে দাঁড়িয়ে দয়ালু চেহারার এক জন টিকেট অফিসার খুঁজছি, যার কাছে বিফল হতে হবে না। শেষমেষ সবচেয়ে ছোট লাইনটার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাদের পালা আসতেই হিন্দীভাষী অফিসারকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম আমরা কি চাই। উনি হড়বড় করে যা বললেন তার সারমর্ম হল আমরা কোথায় যাব সেটা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে, উনি কোন সাজেশন দিতে পারবেন না। আমাদের কথা শুনে পাশ থেকে আরেকজন অফিসার খাঁটি বাংলায় জিজ্ঞেস করলেন, কি বাংগালী নাকি? আহ, কানে মধু বর্ষণ করল কথাটা।
উনিই হাতছানি দিয়ে আমাদের ডেকে নিলেন। পরিচয় হল সুধীরদার সাথে, পরামর্শ দিলেন ভুপাল অথবা অমৃতসর যান ... ২দিনেই বেড়িয়ে আসতে পারবেন। দুই শহর থেকেই দিল্লীতে বাস, ট্রেন বা প্লেনে আসা-যাওয়া করা যায়। কিবোর্ডে অনেকক্ষণ খুটখাট করে বললেন ভুপালের টিকেট নেই, তবে অমৃতসরের একটা স্পেশাল ট্রেনের টিকেট আছে তাও শনিবার রাতের। যেহেতু ডিসেম্বর মাস, টুরিষ্ট সিজন, তাই টিকেটের এই আকাল।
শনিবার সারারাত কমপক্ষে ৮ ঘন্টার জার্নি, পৌঁছুব রোববার ভোরে, সারা দিন অমৃতসর দর্শন এবং ঐদিনই আবার রাতের ফিরতি যাত্রায় দিল্লী। কারণ সোমবার সকাল ৯টায় মুনের ট্রেনিং ক্লাস, মিস করা যাবে না। যা থাকে কপালে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দুটো টিকেট কেটে ফেললাম। এখন যাওয়ার ব্যবস্থাতো হল, আসার? অমৃতসর থেকে ট্রেনের ফিরতি টিকেট পাওয়ার আশা নেই বল্লেই চলে। সুধীরদাই বুদ্ধি দিলেন ভলভো বাস চলে দুই শহরের মধ্যে, টিকেটও সহজলভ্য এবং ট্রেনের তুলনায় সস্তা।
সো নো চিন্তা!
২য় পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।