একজন বড় ভাইয়ের গল্প:
চলতি পথে হঠাৎ সেদিন গণিত স্যারের সাথে দেখা, আমায় দেখে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরলেন, যেমন ধরেছিলেন একদিন ছোটবেলায় স্কুলে গণিত ক্লাসে ।
বড় বোনের দুই ক্লাস নিচে ছিলাম আমি । টানাটানির সংসারে বড় বোনের পুরানো পড়ালেখার সরঞ্জামাদি আমার কপালে জুটতো । গণিত হোমওয়ার্কে সবাই যখন পুরো পৃষ্টা ভরে বড় বৃত্ত আকতো, আমি তখন ছোট্ট একটি বৃত্ত একে গণিত স্যারের মুখোমুখি হতাম ।
- বলি, এত কার্পণ্য করিস্ কেন ? বৃত্তটা আরো বড় করে আঁকা যায় না? পরের ক্লাসে বৃত্ত বড় করে আনবি ।
- জি স্যার ।
দিন যায়, আমার বৃত্ত আর বড় হয় না ।
প্রতি ক্লাসে একি সাইজের ছোট্ট বৃত্ত নিয়ে হাজির হই । একদিন স্যার রাগ করে আমায় ডেকে খাতা ছুঁড়ে মারলেন । সারা ক্লাসে তখন হাসাহাসি আর আমি স্যারের পাশে দাড়িয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে কাঁদছি ।
স্যারের তখন নরম গলায় বললেন,
- তোর কম্পাস টা নিয়ে আয়, আমি এঁকে দেখিয়ে দেই ।
আমি মৃদু পায়ে কম্পাস নিয়ে এসে স্যারের হাতে দেই । স্যার কম্পাসটা দেখে যা বোঝার বুঝে গেলেন, চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে ডান হাতে আমায় বুকে টেনে বাম হাতে প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখের জল লুকোচ্ছেন । সারা ক্লাসে তখন পিনপতন নীরবতা ।
বড় বোনের ব্যবহার করা ঢিলা নড়বড়ে কম্পাসটা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছিল ।
বৃত্ত আঁকতে গিয়ে ব্যাস ঠিক রাখা যেত না । তাই সুতো দিয়ে বেঁধে কম্পাসটা ফিক্সড করে দিয়েছিলাম যা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সাইজের ছোট্ট একটা বৃত্ত আঁকা যায়। কম্পাসটা দিয়ে এর চেয়ে বড় বৃত্ত আকা যেত না। এক নজর দেখেই স্যার বুঝেছিলেন দারিদ্র আমায় খাতা ভরে ইচ্ছে খুশি বড় বৃত্ত আঁকতে দেয়নি ।
সেই বড় ভাই এখন এখন একজন আর্কিটেক্ট !!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।