জানলাম-'' যিনি বীর্যবান , গুনবান, চরিত্রবান , কান্তিমান , বিদ্বান , ধর্মজ্ঞ , কৃতজ্ঞ , সত্যবাদী , দৃঢ়ব্রত , প্রিয়দর্শন , ইন্দ্রিয়জয়ী , ক্রোধজয়ী , সর্বহিতকারী , পরোন্নতি-সহনশীল এবং লৌকিক ব্যবহারে দক্ষ - তিনিই আদর্শ পুরুষ । "
সাহিত্যের কোন বয়স নেই, যেমন নেই সাহিত্যিকের আর পাঠকের।
যখন “রবিনসন ক্রশো” পড়ছেন তখন আপনি খুব ছোট । হয়ত আপনি নিজেই ক্রশো অথবা তার কোন বন্ধু। সমুদ্র যাত্রায় গিয়ে ক্রশো অজানা দ্বীপে যেয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।
আপনার যেন মনে হচ্ছে সেটা রবিনসন নয় সে তো আপনি নিজেই। একের পর এক কাহিনির বিচিত্রতা আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে বাস্তবতা ছাপিয়ে কল্পনার এক বর্নিল জগতে। বইয়ের পৃষ্ঠা উলটে যাচ্ছে একের পর এক আর ক্রমশ বড় হয়ে উঠছেন আপনি বিরুদ্ধ প্রতিকুল অবস্থায় একাকী নির্জন সেই দ্বীপে। অথবা ধরুন “গালিভার্স ট্রাভেলস” এর গালিভার হয়ে দেশে দেশে ঘুরছেন। কখনো লিলিপুটদের দেশে আবার কখনো বা লাপুতা দ্বীপের বিজন অরন্যে।
এভাবেই হারিয়ে যায় লেখক কল্পনার জগতে নতুন নতুন সৃষ্টিতে। গড়ে তোলে কল্পনার রাজ্য। ভুলে যায় তার বয়স, কাল, সীমাবদ্ধতাময় পারিপার্শ্বিকতা। সৃষ্টি করে তোলে নতুন আলোকে নতুন পৃথিবী। নিতান্ত এই কাল্পনিক পৃথিবী পাঠককেও কল্পনায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
সময়োত্তীর্ন করে, যেকোন বয়সের আপনাকে দেয় একেবারে তারুন্যের অনুভুতি। আপনার যেন এক স্বপ্নময় জগত তৈরি হয়ে যায়।
এই অভিযাত্রিক হৃদয় আবার যখন “আন্না কারেনিনা” তে ডুবে যায় তখন চোখের সামনে প্রতিভাত হয় প্রেম পুর্ববর্তী, সময়কালীন ও পরবর্তী জীবনের বিভিন্ন অঙ্ক। এক নিমিষেই পাঠক হয়ে ওঠেন কতগুলো জীবনের উত্থান-পতনের একেবারে অবিচ্ছেদ্য অংশ। একদিকে দাম্পত্য কলহ অন্যদিকে অনাবিল প্রেমের উপাখ্যান আপনাকে নিয়ে যায় বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে।
স্বল্প সময়েই অনেকখানি বড়ো হয়ে ওঠেন আপনি। “শ্রীকান্তে” তেমনি দেখা যায় চারিত্রিক সংযম আর মনুষ্যত্ববোধের শিক্ষা। প্রতিকুলতার মধ্যেও একটা ভালোবাসার আশ্রয় খুজে নেওয়ার একান্ত চেষ্টা। কখনো অজানা গন্তব্যে শ্রীকান্তের হারিয়া যাওয়া আবার কখনো সেই হারানো ঠিকানাকেই আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করে ফেরা অবিরাম। কখনো সামাজিকতা, ধর্ম, কুসংস্কারের অন্তর্দ্বন্দ্ব আবার কখনো শুদ্ধ প্রেমের চির আকাংখিত সুধারস।
আপনি হারিয়ে যাবেন। বাস্তব জীবনের দুঃখ, বেদনা আর কোলাহলের উর্ধে নিয়ে যাবে এইসব বইয়ের শুষ্ক পাতাগুলো। হাসবেন, কাঁদবেন আবার ভালোও বাসবেন ।
“পথের দাবী”তে খুজে পাবেন জীবনের সম্পুর্ন ভিন্ন একটি রুপ। পরিচিত হবেন সব্যসাচীর সাথে।
মনে হবে আপনি এখন যুবক। রক্তে আপনার সূর্যের তেজ; আপনি নির্ভয় মানুষের কল্যান সাধনই আপনার ব্রত। যেন মনে হবে সত্যিই তো এমন মানুষ সংখ্যায় কম হলেও এখনো হারিয়ে যায় নি যারা অন্য মানুষের ব্যথায় ব্যথিত হন। মানুষের অধিকার আদায়ে তাদেরকে একটু সুখ দিতে যাদের প্রানে এতটুকু কার্পন্য নেই। হাসিমুখে যারা নিজেকে উৎসর্গ করতেও পিছপা হন না।
উত্তরাধিকারসুত্রে প্রাপ্ত স্বার্থপরতার এই যুগে এমন মহৎ প্রানের মানুষের চিন্তা-চেতনা আর কাজ আপনার মস্তিষ্কে এক ভিন্ন অনুরননের জন্ম দেবে। আপনার মনুষ্যত্ববোধকে শাণিত করবে।
মনের মধ্যে জন্ম নেবে নতুন নতুন বোধ, চমকে উঠবেন নিমেষেই মনে হবে সত্যিই তো, জীবন তো এমনই । হ্যা সত্যিই তাই , যখন “কড়ি দিয়ে কিনলাম” পড়বেন, মনে হবে নতুন করে ভাবনা চিন্তা করার অবকাশ আছে জীবন নিয়ে। যা জীবন দিয়ে শিখতে হয়, জানতে হয়, উপলব্ধি করতে হয়; তার অনেকখানি জেনে ফেলবেন বইয়ে ছাপানো প্রত্যেকটি অক্ষর, শব্দ আর বাক্যের সুনিপুন গাথুনিতে।
সহজ সরল কথাগুলো যেন প্রাণ ছুঁয়ে যাবে। আর পাঠ শেষে সুবিবেচক মানুষ মাত্রেই স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, কড়ি দিয়ে সব কেনা যায় না। জীবনে যা কিছু সুন্দর, যা কিছু শুভ, যেসকল সম্পর্ক মধুর তার কোন অর্থমূল্য নেই। অর্থের অভাব জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে সত্য কিন্তু তার প্রাচুর্য্যেই যে সকল সুখ আর সমৃদ্ধি লুকানো- এই ভ্রম ঘুচে যাবে নিমেষেই।
সব ভালো উপন্যাস, গল্প সৃষ্টি হয় মানুষকে তার আমি'র সাথে পরিচিত করে তোলার জন্য।
চারপাশ সম্বন্ধে সচেতন করার জন্য। চারপাশের মানুষকে আরো একটু জানার জন্য, আরো একটু ভালোবাসার জন্য।
এই যান্ত্রিকতার মধ্যে এখন আর সময় মেলে না 'জুল ভার্নে'র সাথে অথবা 'আর্থার কোনান ডায়ালে'র বা "শরতে'র সাথে একটেবিলে বসে চা খেতে। মুজতবা আলীর সাথে আর এখন দেখা হয় না... তারাশংকর, টলস্টয় আর গোর্কিরা আমার টেবিলে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ আর জীবনান্দের আবেদন দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
সামাজিক গনমাধ্যমের নেশায় ভুলে যাই যে, সবার আগে তাদেরকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মাধ্যমে নিজেকে ভালোবাসতে শেখা উচিত। নিজস্ব জগতে ডুবে যাওয়া উচিত। উন্নত আর শুভ চিন্তাধারার সাথে নিজেকে যুক্ত করা উচিত। ভুলে যাই যে আমার ‘আমি’র সাথে আমার একটা গভীর যোগসুত্র স্থাপন ছাড়া বেঁচে থাকাটা এক ধরনের অন্যায়। আর নিঃসন্দেহে টেক্সট বই পড়ে তা কখনো হয়নি আর কোনদিন হবেও না।
কেন ভুলে যাই যে, সময়ের আবর্তনে সবাই ছেড়ে চলে যাবে। যে আজ সবচেয়ে আপন বন্ধু বা ভালোবাসার মানুষ হিসেবে কাছে টানছে। তার চাওয়ার অপূর্নতায় সেও একদিন ছুড়ে ফেলে দেবে; ভীষন একাকী করে দেবে আমাকে। কিন্তু আমি তো আমাকে ছুড়ে দিতে পারবো না কখনো। নিজের প্রতি যখন মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস থাকে না তখন তার আর কি ই বা অবশিষ্ট থাকে।
পৃথিবীতে সেই অসহায়ত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার কোন মুল্য নেই। আবার জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়াও কাপুরুষত্ব। তাই নিজের প্রয়োজনেই নিজেকে ভালোবাসতে হয়; নিজের মনের সাথে গভীর একটা মিতালী করে নিতে হয়। কখনো হতে হয় আত্মনিমগ্নতায় বিভোর আবার কখনো অকৃত্রিম হাসিতে প্রাণচঞ্চল। আর তাই হারিয়ে যেতে হয় সাহিত্যে বয়সের সীমানা পেরিয়ে; সকল সীমাবদ্ধতাকে পিছনে ফেলে নতুন আরো পরিচ্ছন্ন আনন্দের উৎসমুখ লক্ষ্য করে।
সাহিত্যে সঞ্চারিত দুঃখ, বেদনা, প্রেম, ভালোলাগা আমাদের চলার পথের প্রেরনা হোক, উদ্দীপক হোক। ভালোলাগা দুঃখ আর বেদনার মাধুরী আমাদের সামনে এক মহাদিগন্ত খুলে দিয়ে যাক। আমরা আকন্ঠ ডুবে যাই, নিমগ্ন হই; আত্মিক প্রশান্তিতে প্রশান্ত হয়ে উঠুক আমাদের মন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।