আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনার সাহায্য চাইছি। আপনার সমর্থন চাইছি। নিজে সচেতন হই,অন্যকে সচেতন করি।

ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা। মুসাফিরের ধূলোমাখা ব্লগ


দেশের প্রতি যদি আপনার এতটুকু ভালোবাসা,মমত্ববোধ থাকে তবে একটু কষ্ট করে লিখাটি পড়ুন, মানুষকে সচেতন করুন। আমরা নিজেরা উদ্যোগি হবোনা, কিন্তু আশা করবো একদিন বাংলাদেশ মালেশিয়া, সিংগাপুর, তাইওয়ান হয়ে যাবে। ইতোমধ্যেই দেখেছেন টুকরো টুকরোভাবে বিভিন্নব্লক বেহাত হয়ে যাচ্ছে। তারপরও যদি আমরা বিবেকবোধ না জাগাই তবে সামনে আরো কঠিন ভয়াবহ সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

নতুন ইস্যু তৈরি হয় আর সাথে সাথেই সবকিছু আমরা ভুলে যাই। সত্যিই ভুলে গেছি সুন্দরবন, ভুলে গেছি জাতির জন্য ভয়ংকর, বিভিষীকাময় এটমবোমা রামপাল প্রকল্প।

দেশের বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা হলো ৭ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।
গতবছরের রিপোর্ট অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমান ৫ হাজার ২২০মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ ঘাটতি হলো প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট।



বর্তমানে বাংলাদেশে যেসকল বিদ্যুৎ প্রকল্প আছে তা শতকরা ১০০ ভাগ উৎপাদন কাজে লাগিয়ে পুরোদমে উৎপাদন করলে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ৭ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। যা মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে।

এখন, দেখা যাক, আসল ঘটনা। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হলেও রামপাল প্রকল্প থেকে প্রথম চার বছরে মানে ২০১৬ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে মাত্র ৬৬০ মেগাওয়াট।

এই ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য ২০১৩ সালের ২০ এপ্রিল সরকার এক মরণচুক্তি স্বাক্ষর করে ভারতের থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশানের সাথে।


প্রকল্পটি খুলনার বাগেরহাট জেলার রামপাল নামক উপজেলায় অবস্থিত। এবং সবচেয়ে ভয়াবহতম ব্যাপার হলো এটি ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্লড হ্যারিটেজে হিসাবে ঘোষিত আমাদের প্রাকৃতিক সুরক্ষা কবচ সুন্দরবন থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে।

এই ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য স্বাধীন,সার্বভৌম বাংলাদেশ কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মূখীন হতে পারে তার ছোট একটা পরিসংখ্যান।


কৃষিজ ক্ষতিঃ
১) ৯৫ শতাংশ কৃষি এবং জলজ ভূমির উপর প্রকল্পটি হবে। যেখানে ধান,শস্য এবং চিংড়ি উৎপাদন করা হয়।


বছরে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হবে মোট ৬৩,৬৩৮ টন।
৩০ বছরে ক্ষতি হবে প্রায় উনিশ লক্ষ নয় হাজার ১ শত চল্লিশ টন।

২) অন্যান্য শস্য উৎপাদন ব্যাহত হবে বছরে ১৪০৪৬১ টন।
৩০ বছরে ক্ষতি হবে প্রায় ৪২লক্ষ ১৩ হাজার ৮ শত ৩০ টন।

৩) খাল, নদী ও জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় মৎস্য উৎপাদন কমবে বছরে প্রায় ৫৭৮৭ মেট্রিক টন
৩০ বছরে যার পরিমাণ গড়পরতা হিসাবে প্রায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬শত ১০ মেট্রিকটন।



প্রাকৃতিক ক্ষতিঃ
১) নৌযান চলাচল, বর্জ্যনিঃসরণ, তেল নিঃসরণ, শব্দদূষণের ফলে রয়েল বেংগল টাইগার, চিত্রাহরিণ, ডলফিন সহ বিশাল বিস্তৃত ম্যানগ্রোভের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
২) তেল ও কয়লা পুড়িয়ে প্রচুর পরিমানে কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাস, নাইট্রোজেরন অক্সাইড গ্যাস ইত্যাদি বাতাসে মিশে গিয়ে পুরো সুন্দরবন অন্চল, বাগের হাট, খুলনা, রামপাল সহ বিস্তৃণ এলাকায় পরিবেশের ওপর ভয়ঙকর রকমের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

৩) এতদঅন্চলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যেতে পারে এবং এসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

৪) যে আইলা এবং সিডর থেকে প্রাকৃতিক প্রাচীর হিসাবে প্রতিরক্ষা তৈরী করে সুন্দরবন আমাদের বাঁচিয়েছিলো সময়ের পরিক্রমায় সে সুন্দরবন বিলীন হয়ে যেতে পারে।

৫) প্রায় ৩৬ কোটি গাছ বিনাশ হয়ে যেতে পারে।



আর্থিক ক্ষতিঃ
১) মোট ব্যয়ের ১৫ শতাংশ দিবে ভারত, ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ আর বাকী ৭০ শতাংশ লোন, কর্য বা ধার করতে হবে বিদেশী ৃণদাতা সংস্থার কাছ থেকে। যার পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই বিশাল পরিমান লোনের সুদ এক পয়সাও ভারত মিটাবেনা। পুরোটাই বাংলাদেশের জনগণকে বহন করতে হবে।

২) ১৫ শতাংশ দিয়ে ভারত মুনাফা নিবে ৫০শতাংশ।

এবং ১ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করবেনা। যেটাকে বলা হচ্ছে ১৫ বছর ট্যাক্স হলিডে।

৩) দেশী সংস্থা থেকে প্রতি ইউনিটে কিনতে হয়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সা।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে কিনতে হবে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা করে।
প্রতি ইউনিটে বেশী দিতে হবে ৫ টাকারও বেশী।


অর্থাৎ ৩০ বছরে মোট সরাসরি আর্থিক ক্ষতি হবে ১ হাজার ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

মানবিক ক্ষতিঃ
১) প্রায় ৭ হাজার পরিবার সরাসরি উচ্ছেদ হবে। প্রায় ১ হাজার পরিবারের কর্মসংস্থান হবে।
২) সুন্দরবন, এর পার্শ্ববর্তী নদী জলাশয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রায় আড়াইলক্ষ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। অদূর ভবিষ্যতে এ বিশালজনগোষ্টী কর্মহীন হয়ে পড়বে।

যার প্রভাব পড়বে পুরো দেশের ওপর।
৩) পরিবেশগত বিপর্যয় এবং রাসায়নিক বিষক্রিয়ার ফলে ব্যাপক জনগোষ্ঠী সহ নবজাত শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে।

সবচেয়ে ভয়ঙকর কিছু ফ্যাক্ট দেখেন-
১) পৃথিবীর কোথাও শস্য, আবাদীভূমি, বনভূমি'র ১৫-২০ কিলোমিটারের মধ্যে এরকম প্রকল্প হতে পারবেনা।
২) এমনকি স্বয়ং ভারতেও এই আইন আছে।
৩)এই কোম্পানিটি পরিবেশবাদী আন্দোলনের মুখে ভারতেও এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।


৪) ভারতীয় পরিবেশ মন্ত্রনালয় যেখানে বলে সুন্দর বনের মাঝে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হলে সুন্দরবনের ধ্বংস হয়ে যাবে ২০/৩০ বছরের মধ্যে সেখানে বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রনালয় সেই প্রজেক্ট পাস করে ।
৫) মাঝে মাঝে বিশাল অংকের টাকা বরাদ্ধ দিয়ে যে ভাংগাচোরা যুদ্ধ বিমান কেনা হয়, এ যুদ্দযান দিয়ে বাংলাদেশ যুদ্ধ করবে কার সাথে। ফেলানিতো কাটা তারেই ঝুলে থাকে।
৬)যুদ্ধবিমান কেনার পিছনে যেটাকা বরাদ্ধ করা হয় তা দিয়ে দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ কারখানাগুলোর আরো উন্নয়ন সাধন করে পুরোদমে কাজে লাগানো যায়।

অথচ আমরা এমনি হতভাগ্য জাতি যে আমাদের মাটিকেই এ প্রকল্পের জন্য নির্ধারণ করা হলো।

কিন্তু এটা কোনোভাবেই আমরা হতে দিবোনা।

আমাদের অঙীকারঃ
১) যে সুন্দরবন এতোদিন আমাদের বাঁচিয়েছে সে সুন্দরবনকে আমরা বাঁচাবো।
২) যদি পাওয়ার প্লান্ট তৈরি করতেই হয়, তবে সুন্দরবনকে বাদ দিয়ে। পাওয়ার প্লান্টের বিকল্প হতে পারে কিন্তু সুন্দরবনের বিকল্প হতে পারেনা।
৩) বিশ্বব্যাপি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে এর বিরুদ্দে রুখে দাঁড়াতে হবে।

সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের না। পুরো পৃথিবীর ।
৪) দেশে এবং দেশের বাইরে যারা দেশপ্রেমিক আইনবিদ আছেন, তারা কোর্টে রিট করতে পারেন, কেন এ প্রকল্প বাদ দেয়া হবেনা।
৫) মানুষকে সত্যিকারের বিষয়গুলো অবগতকরানো। এবং সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করে তোলা।



মাকে তুমি বিকিয়ে দিয়ে,
মায়ের আঁচল পুড়িয়ে দিয়ে,
কেমন আলো চাও তুমি?

পুড়বে আমার দেশ,
আমি নিজেই হবো নিঃশেষ,
চিতায় জ্বলবে আমার জন্মভূমি ।

ভাবছেন যেটা আলো ,
সেটা আলো নয় ভাই,
এযে আলেয়ার হাতছানি।

হরিণের চিরহরিৎ শয্যায়
দেখি দাঁতাল শুয়োরের সংগম
আর শুনি লুটেরাদের শীৎকারের হর্ষধবনি।

তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া
NTPC’s coal-based project in MP turned down- দি হিন্দু অনলাইন জার্নাল
পাওয়ার ডেভলপমেন্ট বোর্ড থেকে প্রকাশিত ডাটা
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ।
একাধিক ব্লগ।


অনুগ্রহ করে আপনিও আমাদের সহযাত্রী হোন,আপনাকে আমাদের খুবই দরকার
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.