আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাষা দিবসে মুখরিত একুশে বইমেলা

ভাষার জন্য সংগ্রামের এই পুরো মাসজুড়ে মেলা চললেও একুশে ফেব্রুয়ারিতে যেন ভাষার চেতনায় উজ্জীবিত জনতার স্রোত নেমেছে মেলায়।

সাদাকালো রঙের বৈচিত্র্যময় পোশাকে নারী-পুরুষ ও শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে নানা বয়সী মানুষের সম্মিলন যেন তৈরি করেছে সাদাকালোর এক বিশাল ক্যানভাস। সে ক্যানভাসে ছিল লাল আর হলুদ রঙের প্রাণের বর্ণমালা।

ছুটির দিনে মেলায় অনেকে এসেছেন দল বেঁধে, অনেকে এসেছেন সন্তানসহ সপরিবারে।

রাজধানী রামপুরা থেকে মেলায় এসেছেন মিলি রহমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রত্যেক ছুটির দিনই বই মেলায় আসি। কিন্তু একুশ ফ্রেবুয়ারিতে না আসলে অপূর্ণতা থেকে যায়। মেলার পূর্ণতা যেন ২১ ফেব্রুয়ারি। ”

স্টলে স্টলে ঘুরে পছন্দের লেখকের বই সংগ্রহ করেছেন বইপ্রেমীরা। মেলার ভেতরেই শুধু নয়, জনস্রোত ছড়িয়ে যায় আশেপাশের সকল এলাকায়।

শাহবাগ মোড় থেকে পাশাপাশি দুটি লাইন এসে থামে মেলার দুই প্রবেশমুখ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় একুশের বইমেলা। সকাল থেকে আনাগোনা থাকলেও জনস্রোত তৈরি হয় দুপরের পর। মানুষের ভীড় সামলাতে একাডেমি ফটকের ‘আর্চওয়ে’ একরকম তুলে দিতে বাধ্য হন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ধানমন্ডির বাসিন্দা ইমন কায়সার বললেন, “২১ ফেব্রুয়ারিতে বই মেলায় আসাটা আমার পরিবারের একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রচুর ভীড় ঠেলে হলেও আসি বাংলা একাডেমিতে। ”

দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিলো উপচে পড়া ভিড়। অনেকেই প্রথমে একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে ছুটে যান মেলার উদ্যান অংশে, যেখানে নতুন বইয়ের পসরা সাজিয়েছে বসেছেন প্রকাশকরা।

তবে ভিড়ের মধ্যে বিক্রিও বেড়ে যাওয়ায় সন্তুষ্ট প্রকাশকরা।

উৎস প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম বলেন, “সকালের দিকে ভিড় অনেক কম ছিলো।

তবে সময় যত গড়িয়েছে ভিড় ততই বেড়েছে। বিক্রিও খুব ভালো হচ্ছে। ”

একই সুর জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সাল আরেফীন দীপনের কণ্ঠেও।

তিনি বলেন, “অনেকেই একুশের প্রভাতফেরীতে ছিলেন। তারা শহীদদের উদ্দেশ্যে পুস্পার্ঘ্য নিবেদন করে ছুটে এসেছেন মেলায়।

ফলে দুপুরের পর থেকেই মূলত মেলা স্বরূপ ফিরে পেয়েছে। ভিড়ের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও বাড়ছে। ”

এদিকে বই বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে মেলার মূল প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমি চত্বরে বিকেলে ‘বাঙালি সংস্কৃতিতে মানবতাবাদ’ শীর্ষক ‘অমর একুশে স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠিত হয়।

স্মারক বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদ বলেন, “বাঙালি সংস্কৃতি মূলত সমন্বয়ধর্মী সংস্কৃতি। বহুবিধ এবং বিচিত্র উপাদানের সমন্বয়ের ফলে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সৃষ্টি হয়েছে।

“বাংলাদেশে (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ ও স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ) সুপ্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন নরগোষ্ঠী এসে বসবাস করতে শুরু করেছে। এই সকল নরগোষ্ঠী সঙ্গে নিয়ে এসেছে তাদের নিজস্ব বিচিত্র সাংস্কৃতিক উপাদান।

“এসব বহিরাগত উপাদান বা উপকরণের সঙ্গে দেশজ উপাদানের সংমিশ্রণ ও সমন্বয় হয়েছে এবং এর ফলেই বাংলার সাংস্কৃতিক রূপান্তর ঘটেছে যুগে যুগে। ”

তিনি বলেন, “সমন্বয়ধর্মী সংস্কৃতির এই দেশে মানবতাবাদ আজ এক নয়া অপশক্তি ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের রাহুগ্রাসে হুমকির সম্মুখীন, যা শুধু বাঙালির সমন্বয়ধর্মী মানবতাবাদী সংস্কৃতিই নয় বরং একইসঙ্গে গোটা বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বকেও ধ্বংস করতে উদ্যত। ”

এর বিরুদ্ধে সকল বিবেকবান বাঙালিকে উদার মানবিকতার চেতনায় রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

মেলায় অমর একুশেতে এসেছে নতুন ২৫৩টি নতুন বই।

একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, মেলার ২১তম দিনে গল্প ৩৪, উপন্যাস ৪৭, প্রবন্ধ ১৩, কবিতা ৫৮, গবেষণা ৩, ছড়া ৭, শিশুসাহিত্য ১০, জীবনী ৬, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ১১, নাটক ১, বিজ্ঞান ৮, ভ্রমণ ৭, ইতিহাস ২, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ৫, রম্য/ধাঁধা ৪, ধর্মীয় ১, অনুবাদ ২, অভিধান ১, সায়েন্স ফিকশন ৩ এবং অন্যান্য বিষয়ে মোট ২৯টি নতুন বই এসেছে।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.