আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশও মানছে না যমুনা গ্রুপ

দীর্ঘ ১১ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ওরফে বাবুল। তথ্যমতে, গাজীপুরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ৪৫টি পরিবারকে ১৪ বিঘা জমি দিয়েছিল শফিপুর বন বিভাগ। ওই জমিতে অন্ধের টেক পল্লী গড়ে তোলেন স্থানীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। কিন্তু ২০০১ সালে বাবুল তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দখল করেন সেই জমি। সেখানে বাবুল গড়ে তোলেন মদের (হান্টার) কারখানা।

ওই জমি অন্ধদের ফিরিয়ে দিতে ২০০২ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সে নির্দেশের কোনো তোয়াক্কাই করেননি বাবুল।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র সচিব, ভূমি সচিব ও গাজীপুর জেলা প্রশাসককে দেওয়া ওই নির্দেশনাপত্রে বলা হয়েছিল, যমুনা গ্রুপের মালিকের নির্যাতন থেকে রক্ষা ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণসহ অন্ধের টেক খাসজমিতে বন্দোবস্তের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। একই বছর ২৫ অক্টোবর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালের ২ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে গাজীপুর জেলা প্রশাসককে অন্ধদের ওই জমি সেখানকার অন্ধ কল্যাণ সমিতির অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এরপর ২০০৩ সালের ২ নভেম্বর গাজীপুর জেলা প্রশাসককে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অন্ধদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. নুরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'অন্ধদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। এসব নিরীহ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জমি উদ্ধার করতে দ্রুত যমুনা গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ' যমুনা গ্রুপের কাছ থেকে এ জমি উদ্ধারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও তিনি জানান। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই।

' তবে কালিয়াকৈর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিনাত জাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'অন্ধদের যেসব জমি যুমনা গ্রুপ দখল করেছে, এর উদ্ধারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। '

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শফিপুর অন্ধ কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. সাহাজ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'গাজীপুরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ৪৫টি পরিবারকে ১৪ বিঘা জমি দিয়েছিল শফিপুর বন বিভাগ। ওই জমিতে অন্ধের টেক পল্লী গড়ে তুলেছিলাম আমরা স্থানীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। কিন্তু সেই জমিতেই কুনজর পড়ে কুখ্যাত মদ ব্যবসায়ী যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ওরফে বাবুলের। ২০০১ সালে একদিন হঠাৎ করে বাবুল তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে আমাদের ভিটেমাটি ছাড়া করে।

সেখান থেকে আমাদের ?উচ্ছেদ করে কুখ্যাত বাবুল গড়ে তোলেন মদের (হান্টার) কারখানা। বসতবাড়ি হারিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে যাযাবর জীবন কাটাচ্ছি। ওই সময় বাবুলের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গুপ্তহত্যার শিকার হন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী (অন্ধ) সেলিম, বারেক ও সাফাজ উদ্দিন। এই তিন অন্ধকে খুনের দায়ে বাবুলের ফাঁসি দাবি করেন তিনি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাজ উদ্দিন আরও বলেন, 'আমাদের মতো অন্ধরাও বাবুলের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পায়নি।

আমরা সবাই এখন ছিন্নমূল জীবন যাপন করছি। কেউ ফুটপাতে, কেউবা গাছতলায় নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। অনেকবার বলেও জমি ফেরত পাইনি। পাইনি আমাদের সংগঠনের সদস্যদের হত্যার বিচার। ' অশ্রু ঝরঝর চোখ আর কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'একদিন ট্রাকচাপা দিয়ে আমাদের মারতে এসেছিল বাবুলের সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন।

সেদিন কোনোরকমে পালিয়ে বেঁচেছি। আমরা দুই চোখে কিছুই দেখতে পাই না। আর সেই অন্ধের সম্পদ কেড়ে নিয়েছেন বাবুল। তার ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। ' গাজীপুর সমাজকল্যাণ পুনর্বাসন সোসাইটির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, 'আমরা অন্ধ কল্যাণ সমিতি গঠন করেছিলাম ১৯৮৫ সালে।

সমিতিটি সমাজসেবা অধিদফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। আমরা বাড়ি করার জন্য জমি চাইলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আমাদের ওই জায়গাটি দিয়েছিলেন। সেখানে আমরা বাড়ি করে বসবাস করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। কিন্তু বাবুলের সন্ত্রাসীরা আমাদের উচ্ছেদ করেছে। ' একই তথ্য দেন প্রতিবন্ধী আব্বাস উদ্দিন।

খুলনা জেলার খালিশপুরের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন ভিক্ষা করতে করতে গাজীপুরে এসেছিলেন। তিল তিল করে টাকা জমিয়ে অন্ধের টেক পল্লীতে ঘর তুলেছিলেন। কিন্তু তার ঘরটিও ভেঙে দিয়েছে বাবুলের সন্ত্রাসীরা। আব্বাস উদ্দিন ঘর হারিয়ে এখন থাকেন এরশাদনগরে। জীবন চলে ভিক্ষাবৃত্তি করে।

জন্মান্ধ মোসলেম তালুকদারও ঘর তুলেছিলেন অন্ধের টেকে। এ রকম ৪০টি পরিবার ঠাঁই করে নিয়েছিল সেখানে। কিন্তু বাবুলের থাবায় সব ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সবকিছু হারিয়ে তারা আবারও পথের ভিখারি সেজেছেন।

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.