আমার কিছু বলার নাই।
আমার সবচেয়ে আপন ও কাছের দুইটি বন্ধু হচ্ছে আমার মোবাইল সেট আর ল্যাপটপ। এরা কখনো আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেনা। সবাই যখন আমাকে ছেড়ে চলে যায়,এই বন্ধু দুইটি তখনও আমার পাশে পরে থাকে। কোন আপন জনকে ফোন দিলে যখন আমি শুনি,“‘দোস্ত’,একটু Busy আছি রে।
”আমার এই কাছের দুইটি বন্ধু তখন যেন নীরব ভাষায় বলে,“সমস্যা কি বন্ধু,আমরা তো আছিই। ”এ জীবনে অনেক বন্ধু জুটেছে,আবার হারিয়েও গেছে। আমি কাউকেই তেমন একটা মিস করিনা। কিন্তু একটা বন্ধুকে মিস করি,সেটা হলো আমার বাইসাইকেল। তিন বছর আগে সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
আমি এখনও সেই সাইকেলটাকে মিস করি,খুব মিস করি। অনেকে ঠাট্টা করে বলতে পারে “আহা,জড় পদার্থের প্রতি ভালবাসা!”আসলেই,আমি কিছু জড় পদার্থের প্রতি মমতা পোষন করি। যখন থেকে আমি আমার কাছের মানুষগুলোকে চিনতে শিখেছি,তখন থেকেই আমি বুঝতে শিখেছি যে,এই জড় পদার্থগুলো অবশ্যই আমার কাছের মানুষদের মতো স্বার্থপর আর বিশ্বাসঘাতক নয়।
এই লেখটা যখন লিখছি,আমি বুঝতে পারছি যে আমি খুবই নষ্টালজিক মুডে আছি। কিন্তু তবুও এ জগতের সকল নির্মম বাস্তবতা আমি অনুভব করতে পারছি।
আমি শুধু এটাই বলতে চাই,ভদ্রলোকের বেশে যারা অভদ্র,আপনজনের মুখোশে যারা স্বার্থের লোভে শত্রু,বিশ্বাসের ভেতরে থেকেও যারা বিশ্বাস ঘাতকতা করতে অভ্যস্ত,অন্তত তাদের চেয়ে জড় পদার্থগুলো শতগুনে ভালো(Better)। আমি অন্যদেরকে সাহায্য করতে ভালবাসি। এখনও সুযোগ ও সাধ্যের ভেতরে থাকলে আমি যে কাউকেই সাহায্য করতে চেষ্টা করি। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে প্রায় প্রতিবারই লক্ষ্য করি,সাহায্যপ্রাপ্ত লোকটি সামনে কৃত্রিম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেও আড়ালে গিয়ে আমার সহায়তার মাঝে খুঁত ধরতে চেষ্টা করে,আমারই সমালোচনা করা শুরু করে। কিন্তু তবুও আমি মানুষকে সাহায্য করি।
আমার এই প্রবণতা হয় কোন মানসিক অসুখ নাহয় উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত অবধারিত ভাগ্য। উত্তরাধিকার সুত্রে কথাটা এ জন্যেই বললাম,কারণ জন্মের পর থেকেই দেখছি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকেই অকৃত্রিম ভাবে সাহায্য করেন আমার বাবা। কিন্তু আমার জানা মতে এতসব উপকারের কোন নূন্যতম প্রতিদানও পাননি আমার বাবা। উল্টো উপকার ভোগীদের কাছ থেকে পেয়েছেন তীব্র আঘাত আর প্রচন্ড অপমান। আবার সেইসব অকৃতজ্ঞ কুলাঙ্গাররাই যখন বিপদে পড়ে ফের আমার বাবার দ্বারস্থ হয়,আমার বাবা তখন তাদেরকে সহানুভূতির সুরে বলেন “আহহা!এত চিন্তা করছো কেন?আমি আছি না??”অথবা কেউ বলল, “ভাই,আমি খুবই বিপদে পড়েছি।
আমাকে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। ”আমার বাবা তখন অবাক হয়ে বলেন, “সে কি?মনে হচ্ছে তুমি বড় ধরনের বিপদে আছ। এক কাজ কর,তুমি বরং ২০ হাজার টাকাই নাও। যখন পার তখন ফেরত দিও। ”তারপর এদের কাছ থেকে আবারও সেই পুরনো প্রতিদান.........।
গভীর দুঃখে আমি যখন বাবাকে জিজ্ঞেস করি, “তবুও তুমি কেন এদের পাশে দাঁড়াও বাবা?”আমার বাবা তখন জগতের পবিত্রতম হাসি হেসে বলেন, “তুই এসব বুঝবি না রে বোকা। সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দারাবি,মানুষকে সাহায্য করবি। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।