আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবা নিহত ‘বন্দুকযুদ্ধে’, মেয়ে পরীক্ষা হলে

বাবাকে হারানোর শোক চেপেই মঙ্গলবার পরীক্ষা কেন্দ্রে যায় শান্তা। তার বাবা সংগ্রাম চৌধুরী (৪৫), যিনি সোমবার দুপুরে র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

সংগ্রামকে র‌্যাব ‘অপহরণকারী’ বললেও তা মানতে প্রবল আপত্তি তার পরিবারের। ১৬ বছরের শান্তার দাবি, তার ‘নিরাপরাধ’ বাবাকে ধরে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে র‌্যাব।

শান্তার কথা প্রত্যাখ্যান করে র‌্যাব অবশ্য তাদের আগের বক্তব্যেই অটল।

“স্বজনরা অনেক কথাই বলতে পারে, তবে আমাদের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি হয়েছে,” মঙ্গলবারও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক খন্দকার গোলাম সারোয়ার।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর কদমতলীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণ হারান সংগ্রাম। স্ত্রী সালমা চৌধুরী এবং তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে জুরাইনের আলমবাগে থাকতেন তিনি।

সংগ্রাম নিহত হন কদমতলীতে ওয়াসিম নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে। ওয়াসিমও ওই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন বলে র‌্যাবের দাবি।

তবে তার পরিবারেরও অভিযোগ, ধরে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে ওয়াসিমকে।

র‌্যাব কর্মকর্তা সারোয়ারের দাবি, ওয়াসিম অপহরণকারী চক্রের নেতা, আর সংগ্রাম তার সহযোগী।

সংগ্রাম কী করতেন- জানতে চাইলে তার স্ত্রী সালমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,এলাকায় জেনারেটরের ব্যবসা করতেন।

বাবার অস্বাভাবিক মৃত্যুর একদিন পর পরীক্ষায় বসতে শান্তার সায় ছিল না বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তার খালা আমেনা বেগম।

এক রকম জোর করেই তাকে পরীক্ষা কেন্দ্র মুরাদপুর হাই স্কুলে নিয়ে যান বলে জানান তিনি।

জুরাইনের আশরাফ মাস্টার স্কুলের শিক্ষার্থী শান্তার এদিন ছিল ব্যবসায় পরিচিতি পরীক্ষা।

“জীবনের এমন মর্মান্তিক ঘটনার পরও আমি আমার পরীক্ষা দিতে গেছি। কী লিখেছি, জানিনা। হাত চলতে চায়নি পরীক্ষার হলে,” বলে এই তরুণী।

পরীক্ষার পর আলমবাগের বাড়িতে শান্তাসহ তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

“বাবাকে র‌্যাব হত্যা করেছে কেন? তার কী দোষ ছিল,” প্রশ্ন এখন শান্তার।

“যদি বাবা দোষীই হয়, তার বিচার হতে পারত। দোষী প্রমাণ হলে যদি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিত, তবুও তো বাবাকে জীবিত পেতাম, এখন...,” কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে তার।

র‌্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, ওয়াসিমের বাড়িতে কয়েকজনকে আটকে রাখা হয়েছে জানতে পেরে সেখানে অভিযান চালায় তারা। সিঁড়ি দিয়ে গুলি চালাতে চালাতে নামার সময় গুলিবিদ্ধ হন ওয়াসিম।

পাইপ বেয়ে নামার সময় গুলিবিদ্ধ হন সংগ্রাম।

তবে র‌্যাবের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে সালমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিসের ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ধরে নিয়ে র‌্যাব হত্যা করেছে দুজনকেই। ”

ঢাকার কদমতলীতে র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত সংগ্রাম চৌধুরী।

তিনি জানান, ওয়াসিম তার স্বামীর বন্ধু। ওই বাড়িতে তার আসা-যাওয়া রয়েছে।

সংগ্রামের বড় ভাই প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ঘটনার সময় সংগ্রাম ওই বাড়ির ষষ্ঠ তলায় ছিলেন। পাইপ বেয়ে নিচে নামার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

ওয়াসিমের স্ত্রী সোনিয়া বেগম জানান, অভিযানের সময় যে ১০-১২ জন বাড়িতে ঢুকেছিলেন তাদের গায়ে র‌্যাবের পোশাক ছিল না।

প্রিন্স মাহমুদ বলেন, “পায়ে গুলি লাগলে পাশের একটি টিনশেড ঘরের ওপর পড়েন সংগ্রাম। পরে নিচে নেমে রিকশায় করে হাসপাতালে যাওয়ার সময় র‌্যাব তাকে ধরে আনে।

এরপর ওয়াসিমের বাড়ির সামনে নিয়ে তাকে গুলি করে। ”

গুলিবিদ্ধ সংগ্রাম ও ওয়াসিমকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

র‌্যাববের দাবি, সংগ্রামসহ তাদের আরো সঙ্গী পাইপ বেয়ে নিচে নেমে পালানোর সময় র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তখন র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালালে সংগ্রাম আহত হন।

র‌্যাব জানায়, ‘বন্দুকযুদ্ধের’ পর ওয়াসিমের ওই বাড়ির চিলেকোঠায় আটকে থাকা অবস্থায় আকতার (৪৮), জাহাঙ্গীর (২৬), রানা (২৬) ও জনি (২৭) নামে চারজনকে উদ্ধার করা হয়।

তবে ওয়াসিমের স্ত্রী সোনিয়ার দাবি, এই চারজনই তার ব্যবসায়ী স্বামীর কর্মচারী ছিলেন।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.