আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতি ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে

বাংলাদেশের প্রধান দৈনিক প্রথম আলো (বা পড়ুন পেহলী রোশনী) বদলে যাও, বদলে যাও বদলে দাও শ্লোগান দেশের অন্যান্য কর্পোরেট মিডিয়া হাউসের ঘোষিত শ্লোগানগুলোর মতো না। এরা রীতিমতো হাতেকলমে এসবের নজির আমাদের সাথে হাজির করে। এদের বেতনভুকেরা রিকনসিলিয়েশন তত্ত্ব খাড়া করে মেহেরজান সিনেমার পক্ষে জান লড়ে দেয়, জামাত বান্ধব বুদ্ধিজীবি পুল দিয়ে জামাতি এ্যাজেন্ডা পুশ করে, পেট্রোল বোমার জন্য দুই দলের ঘাড়ে সমান দোষ চাপিয়ে দেয়, বা বিনোদন পাতায় বিদ্যা বালানের পর্দাপুষিদার ব্যবস্থা করে দেয়া - এই সবই এই বদলে যাও, বদলে দাও শ্লোগানটা যে নিছক শ্লোগানই নয় সেটার প্রমান রাখে। সম্প্রতি খারাপ কাজে ছাত্রলীগ/আওয়ামী লীগ বাদে বাকি সবাইকে দুর্বৃত্ত নাম দেয়া এদের আরেকটা প্রাক্টিস।
গতকাল এই বদলে যাবার নতুন প্রমান রেখেছে প্রথম আলো।

প্রথম পাতায় ঢাউস বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে একটি। বিজ্ঞাপনটি দেখি একবার চলুন।

BBS Cables-এর এই বিজ্ঞাপনে আমরা জানছি তারা একটি সেলস সেন্টার খুলছে নোয়াখালিতে। নোয়াখালি জায়গাটাকে তারা পরিচিত করিয়ে দিচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের জন্মস্থান হিসেবে। কেবলের বিজ্ঞাপনে তারের ছবির বদলে বড় করে বীরশ্রেষ্ঠের ছবি ব্যবহার করায় জনসাধারণের সংবেদনশীল অংশ বীরশ্রেষ্ঠদের বিজ্ঞাপনের হাতিয়ার বানিয়ে বিবিএস ব্যবসা করছে এরকম আপত্তি তুলতে পারেন।

এধরণের আপত্তি প্রায়ই উঠতে দেখা যায়। আমি তাদের সাথে পুরোপুরি একমত না। এরকম সবকিছুতে কড়াকড়ি করতে গেলে বাংলাদেশের পতাকাও বিজ্ঞাপনে নিষিদ্ধ করতে হয়।
আমার আপত্তির জায়গাটা বিজ্ঞাপনে যে ছবিটা ব্যবহার করেছে সেটা নিয়ে। বিবিএসের বিজ্ঞাপনে বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের ছবির জায়গায় বসানো হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের ছবি।


ঘটনা এখানেই শেষ না। বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের নামটাও পুর্নাঙ্গ করে লিখতে পারেনি বিবিএসের কর্তাব্যক্তিরা। মোহাম্মদ কাটা পড়েছে সেখান থেকে। আমরা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান লিখি না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখি।

শ্রদ্ধাভাজনদের পদবী নাম ঠিকঠাক করে লেখাটা খুব বেসিক আচরণ যেটা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি সকলের কাছ থেকে।
এহেন বিজ্ঞাপন ছাপানোর দায় বিবিএসের সাথে প্রথম আলোর ওপরও বর্তায়। কেউ হয়তো ভাবতে পারে অসাবধানবশত এই বিজ্ঞাপন তাড়াহুড়োর মধ্যে ছাপাখানায় চলে গিয়েছে। এখানে স্মরণ রাখা যেতে পারে প্রথম আলোতে প্রকাশের অন্তত তিনদিন আগে বিজ্ঞাপন জমা দিতে হয়। তিনদিনে প্রথম পাতার জন্য জমা হওয়া এই ঢাউস বিজ্ঞাপনের এতো বড় ভুল চোখে পড়লো না?
বিজ্ঞাপনের ভুলটা যে আসলেই ভুল সেটা ক্রসচেক করতে গুগল করলাম।

সেখানে আরেক বিড়ম্বনা। ইংরেজি উইকিতে নামের মোহাম্মদ অংশটা বাদ গেছে। আর গুগল সার্চের সার্চ রেজাল্টের ডানদিকেই দেখাচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রবের ছবি! গুগলের একটা অফিস ঢাকাতে আছে বটে। তারা কী কাজ করে আমার কাছে পরিস্কার না। তাদের নিউজে Dhakaর বানান Dacca লেখা হয়।

তাদের প্রধান কর্তাব্যক্তিকে অবহিত করা হলেও সেটা সংশোধন হয়নি।
রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর এরকম দায়সারা উপস্থাপন কেন হতে পারে সেগুলোর আসলে অনেকগুলো সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করা যায়। এর মধ্যে একটা কারণ হতে পারে যেকোন দায়সারা কাজ করে পার পেয়ে যাবার একটা সংস্কৃতির মধ্যে আমরা বাস করি। কোন সমালোচনা গায়ে না লাগানোর মতো দুর্বিনীত সংস্কৃতির অবসান হোক এটাই কাম্য।


সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.