টার্গেট ছিল ডিজিটাল জিহাদ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে জিহাদে অংশ নিয়ে শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার পরিকল্পনা ছিল আল-কায়েদা প্রধান আয়মান-আল-জাওয়াহিরির কথিত অডিও বার্তা ইন্টারনেটে প্রচারকারী মো. রাসেল বিন সাত্তার খানের। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান মুফতি জসীম উদ্দীন রাহমানির আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পেট্রলবোমা তৈরির মতো জিহাদের ভয়ঙ্কর কৌশলগুলো তার পেজে আপলোড করেছিল রাসেল। তিনটি ই-মেইল, তিনটি ফেসবুক আইডি, পাঁচটি ওয়েবসাইট ও একটি ওয়েব পেজের মাধ্যমে নিয়মিত রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় অংশ নিত সে। দেশের বর্তমান শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে ইরানের রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়েও ই-মেইল করেছিল রাসেল।
টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রাসেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানায়, অনলাইন জিহাদের কৌশল হিসেবে শুধু নিজের নামে নয়, ভক্ত-অনুসারী বাড়াতে রাসেল নিজের নামের পরিবর্তে মহিলাদের নামে ওয়েব পেজ খুলে নিয়মিত প্রচারণা চালাত। ফেসবুকে Sumaiya Jahan Mou নামে একটি পেজের মাধ্যমে সে মাঝে-মধ্যেই উগ্রপন্থি বিভিন্ন বার্তা আপলোড করত। ফেসবুকে তার নিজের তৈরি করা 'আমার দেশভাবনা' নামের একটি পেজ ব্লগস্পট ও ওয়ার্ডপ্রেসে amardeshvabna.blogspot.com, amardeshvabna.wordpress.com নামে দুটি এবং banglaghor.wapka.mobi নামে আরও একটি ওয়েবসাইটে নিয়মিত উসকানিমূলক প্রচারণার সুবাদে বাঁশের কেল্লা ভার্সন-২, দৃষ্টিভঙ্গি, my understanding about islam, গণতন্ত্র নিপাত যাক-খিলাফত মুক্তি পাক নামক উগ্রবাদী পেজগুলোতে অ্যাডমিন হিসেবে নিযুক্ত হয় রাসেল। একই সঙ্গে dawahilallah নামে ফেসবুক গ্রুপের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করত সে।
রাসেল জানায়, rasel bin sattar khan (id-krasel73), ব্লগার মুহাম্মদ রাসেল (id-blogger rasel) ও গেদীর বাপ নামে তিনটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার। এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বর্তমানে তার প্রায় পাঁচ হাজারের মতো ফ্রেন্ড রয়েছে। তৈরিকৃত ওয়েব পেজগুলোর মাধ্যমে রাসেল জুমার খুতবা, ফুরকান মিডিয়া, মারকাযুল উলুম, ইসলামের আলো প্রভৃতি ওয়েব পেজের সঙ্গে লিঙ্ক তৈরি করে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাসেল জানিয়েছে, krasel73@yahoo.com, krasel73@gmail.com, kdurjoy73@yahoo.com নামে তার তিনটি ই-মেইল অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ২০১০ সালে সে সর্বপ্রথম ফেসবুক ও ই-মেইলে আইডি খোলে।
ওয়েব পেজগুলোতে ইসলাম ও শরিয়াভিত্তিক এবং গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী কোনো লেখা বা ছবি পোস্ট করলে প্রচুর লাইক ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাওয়া যায়। নিয়মিতভাবে সে ইসলামের আলো, বাঁশের কেল্লা, সালাউদ্দিনের ঘোড়া, iier (জসিম উদ্দিন রাহমানীর পেজ), দৃষ্টিভঙ্গি, যদি রাত পোহালে শোনা যেত শেখ হাসিনা মরে গেছে, দ্য মেসেজ অব ইসলাম, ইসলাম-ই-রাজনীতি, শিবির সংবাদ, জিহাদের ঝাণ্ডা আমরা চিরদিন উঁচু রাখব, বাগদাদ থেকে বাংলা জিহাদ আর জিহাদ, ও I am muslim, I love islam, We are Jihadi পেজ ভিজিট করত। বিতর্কিত পোস্ট ও ছবিগুলোর লিঙ্ক সে তার ওয়েব পেজে দিয়ে দিত।
যাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ : বাঁশের কেল্লা, সালাউদ্দিনের ঘোড়া, ইসলামের আলো প্রভৃতি পেজে ভক্ত হওয়ার কারণে যুক্তরাজ্য প্রবাসী শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ (যুক্তরাজ্যভিত্তিক শেখ নিউজ.কম-এর পরিচালক), শাহীন আহম্মেদ নাসির (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, যুক্তরাজ্য বিএনপি), পারভেজ মলি্লক (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুক্তরাজ্য বিএনপি), মাহিদুর রহমান (আন্তর্জাতিক সম্পাদক, যুক্তরাজ্য বিএনপি), ব্যারিস্টার সায়েমের (সদস্য-বাংলাওয়াচ, লন্ডন) সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। একই সঙ্গে সোহাগ (জিনিয়াস পাপী পেজের নির্মাতা, যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লার অন্যতম নিয়ন্ত্রক), শিহাব (মুসলিম বাংলা ব্লগের নির্মাতা), তারেক, ইসলামী জান্নাত, জিনিয়া, ওসমান, নাহিদ, পাবেল, জুলফিকার, তৌহিদ, ফারাবী শফিউলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল রাসেলের।
রাসেলের ই-মেইল এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। জাওয়াহিরির বক্তব্য প্রচার সম্পর্কে রাসেল জানায়, গত বছর ৩০ নভেম্বর ২০১৩ krasel73@yahoo.com ই-মেইল খোলার পরই সে দেখতে পায় আল-কায়েদা প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরির বাংলাদেশ নিয়ে অডিও টেপ সংক্রান্ত ক্লিপটি dawahilallah.wordpress.comথেকে তার ইনবক্স জমা হয়েছে। ওই দিনই সে ক্লিপটি ডাউনলোড করে তার মূল পেজ 'আমার দেশভাবনা'র সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। টেপটিতে হেফাজতে ইসলামের ৫ মে'র কর্মসূচির কথা বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে জেলখানার সঙ্গে তুলনা করা হয়।
এর আগে গত বছরের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে ৭ মে রাসেল বিভিন্ন লেখা ও ১৪টি ছবি সংযুক্ত করে ইরানের প্রেসিডেন্টের কাছে (dr-ahmadinejad¦president.ir) ঠিকানায় মেইল করে।
অনলাইনে জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকার মোহাম্মদপুরের মুয়ালি্লয়া ট্রেনিং সেন্টার থেকে আরবি ভাষায় লিখন ও পঠনে ২০ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে রাসেল। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে সে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক বিভিন্ন বই সংগ্রহ করে। সে নিজেও System vs Human habit নামে একটি বই লেখার পরিকল্পনা করেছিল। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, আপাতত অনলাইনের মাধ্যমেই জিহাদি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল রাসেল।
তবে সুবিধাজনক পরিস্থিতি পেলেই সে তার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসত। প্রসঙ্গত, ইন্টারনেটের জিহাদোলজি ওয়েবসাইটে প্রচারিত 'বাংলাদেশ : ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অব সাইলেন্স' শীর্ষক ২৯ মিনিটের একটি অডিও বার্তা ১৫ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দাদের নজরে আসার তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মাঝিপাড়া থেকে রাসেলকে গ্রেফতার করে র্যাব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।