আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নক্সী কাঁথার মাঠ - আট

(আট) বিয়ের কুটুম এসেছে আজ সাজুর মায়ের বাড়ি, কাছারী ঘর গুম্-গুমা-গুম্ , লোক হয়েছে ভারি | গোয়াল-ঘরে ঝেড়ে পুছে বিছান দিল পাতি ; বসল গাঁয়ের মোল্লা মোড়ল গল্প-গানে মাতি | কেতাব পড়ার উঠল তুফান ; ---চম্পা কালু গাজী, মামুদ হানিফ সোনবান ও জয়গুন বিবি আজি ; সবাই মিলে ফিরছে যেন হাত ধরাধর করি | কেতাব পড়ার সুরে সুরে চরণ ধরি ধরি | পড়ে কেতাব গাঁয়ের মোড়ল নাচিয়ে ঘন দাড়ি, পড়ে কেতাব গাঁয়ের মোল্লা মাঠ-ফাটা ডাক ছাড়ি | কৌতুহলী গাঁয়ের লোকে শুনছে পেতে কান, জুমজুমেরি পানি যেন করছে তারা পান! দেখছে কখন মনের সুখে মামুদ হানিফ যায়, লাল ঘোড়া তার উড়ছে যেন লাল পাখিটির প্রায় | কাতার কাতার সৈন্য কাটে যেমন কলার বাগ, মেষের পালে পড়ছে যেন সুন্দর-বুনো বাঘ ! স্বপ্ন দেখে, জয়গুন বিবি পালঙ্কেতে শুয়ে ; মেঘের বরণ চুলগুলি তার পড়ছে এসে ভূঁয়ে ; আকাশেরি চাঁদ সূরুজে মুখ দেখে পায় লাজ, সেই কনেরে চোখের কাছে দেখছে চাষী আজ | দেখছে চোখে কারবালাতে ইমাম হোসেন মরে, রক্ত যাহার জমছে আজো সন্ধ্যা মেঘের গোরে ; কারবালারি ময়দানে সে ব্যথার উপাখ্যান ; সারা গাঁয়ের চোখের জলে করিয়া গেল সান | উঠান পরে হল্লা-করে পাড়ার ছেলে মেয়ে, রঙিন বসন উড়ছে তাদের নধর তনু ছেয়ে | কানা-ঘুষা করত যারা রূপার স্বভাব নিয়ে, ঘোর কলিকাল দেখে যাদের কানত সদা হিয়ে ; তারাই এখন বিয়ের কাজে ফিরছে সবার আগে, ভাভা গড়ার সকল কাজেই তাদের সমান লাগে | বউ-ঝিরা সব রান্না-বাড়ায় ব্যস্ত সকল ক্ষণ ; সারা বাড়ি আনন্দ আজ খুশী সবার মন | বাহিরে আজ এই যে আমোদ দেখছে জনে জনে ; ইহার চেয়ে দ্বিগুণ আমোদ উঠছে রূপার মনে | ফুল পাগড়ী মাথায় তাহার "জোড়া জামা" গায়, তেল-কুচ্-কাচ্ কালো রঙে ঝলক্ দিয়ে যায় | বউ-ঝিরা সব ঘরের বেড়ার খানিক করে ফাঁক, নতুন দুলার রূপ দেখি আজ চক্ষে মারে তাক | এমন সময় শোর উঠিল--- "বিয়ের যোগাড় কর, জলদী করে দুলার মুখে পান শরবত ধর |" সাজুর মামা খটকা লাগায়, "বিয়ের কিছু গৌণ, সাদার পাতা আনেনি তাই বেজার সবার মন |" রূপার মামা লম্ফে দাঁড়ায় দম্ভে চলে বাড়ি ; সেরেক পাঁচেক সাদার পাতা আনল তাড়াতাড়ি | কনের খালু উঠিয়া বলে "সিঁদুর হল ঊনা!" রূপার খালু আনিয়া দিল যা লাগে তার দুনা! কনের চাচার মন উঠে না, "খাটো হয়েছে শাড়ী |" রূপার চাচা দিল তখন "ইংরাজী বোল ছাড়ি"| "কিরে বেটা বকিস নাকি?" কনের চাচা হাঁকে, জালির কলার পাতার মত গা কাঁপে তার রাগে | "কোথায় গেলি ছদন চাচা, ছমির শেখের নাতি, দেখিয়ে দেই দুলার চাচার কতই বুকের ছাতি! বেরো বেটা নওশা নিয়ে, দিব না আজ বিয়া ;" বলতে যেন আগুন ছোটে চোখ দুটি তার দিয়া | বরপক্ষের লোকগুলি সব আর যে বরের চাচা, পালিয়ে যেতে খুঁজছে যেন রশুই ঘরের মাচা | মোড়ল এসে কনের চাচায় অনেক করে বলে, থামিয়ে তারে বিয়ের কথা পাতেন কুতূহলে | কনের চাচা বসল বরের চাচার কাছে, কে বলে ঝড় এদের মাঝে হয়েছে যে পাছে! মোল্লা তখন কলমা পড়ায় সাক্ষী-উকিল ডাকি, বিয়ে রূপার হয়ে গেল, ক্ষীর-ভোজনী বাকি! তার মাঝেতে এমন তেমন হয়নি কিছু গোল, কেবল একটি বিষয় নিয়ে উঠল হাসির রোল | এয়োরা সব ক্ষীর ছোঁয়ায়ে কনের ঠোঁটের কাছে ; সে ক্ষীর আবার ধরল যখন রূপার ঠোঁটের পাছে ; রূপা তখন ফেলল খেয়ে ঠোঁট ছোঁয়া সেই ক্ষীর, হাসির তুফান উঠল নেড়ে মেয়ের দলের ভীড় | ভাবল রূপাই---অমন ঠোঁটে যে ক্ষীর গেছে ছুঁয়ে, দোজখ যাবে না খেয়ে তা ফেলবে যে জন ভূঁয়ে |

সোর্স: http://www.bangla-kobita.com     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।