আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উচ্চ শিক্ষার্থে কানাডা: চতুর্থ পর্ব [প্রথম অংশ] (ভাল বীজে ভাল ফসল: যেভাবে কনভিন্স করবেন একজন Made in Harvard Professor)

কানাডাতে MS/PhD কোর্সে ভর্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজটি হল অধ্যাপকে রাজী করানো। আপনি যদি কোনভাবে একজন অধ্যাপকে রাজী করাতে পারেন তবে উচ্চ শিক্ষার্থে কানাডা: ২য় পর্ব (কোন ধরনের যোগ্যতা থাকলে কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তীর জন্য বিবেচিত হবেন) পোষ্টে বর্ণিত যোগ্যতার চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা দিয়েই আপনি ভর্তি হয়ে যেতে পারবেন যে কোন কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে। আপনারা কেউ যদি এখনও প্রথম ৩ টী পর্ব না পড়ে থাকেন তবে আমি অনুরোধ করব সেগুলো পূর্বে পড়ে নিতে যাতে করে এই পোষ্টের সবগুলো বিষয় আপনার বোধগম্য হয়। নিচের লিঙ্ক গুলোতে খোঁচা মেরে চলে যেতে পারেন সেই পোষ্টগুলোতে। উচ্চ শিক্ষার্থে কানাডা: ১ম পর্ব (যে তথ্য গুলো প্রথমেই আপনার জানা দরকার) উচ্চ শিক্ষার্থে কানাডা: ২য় পর্ব (কোন ধরনের যোগ্যতা থাকলে কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তীর জন্য বিবেচিত হবেন) উচ্চ শিক্ষার্থে কানাডা: ৩য় পর্ব (শুরুটা কিভাবে ও কখন করবেন???) ################################################### জরুরি ঘোষণা: কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আগামী ফল সেমিস্টারে ভর্তি হতে চান তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস দুটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডিসেম্বর মাসে আপনাকে অধ্যাপক খুঁজতে হবে ও জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখের মধ্যেই ভর্তি দরখাস্তটি আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছাতে হবে। ################################################### উচ্চ শিক্ষার জন্য একজন ছাত্রের যে গুন গুলো থাকা দরকার তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো অফুরন্ত ধৈর্য শক্তি ও সীমাহীন ইচ্ছা শক্তি। আমি আবারও বলব যে উপরোক্ত দুটি গুন আপনার মধ্যে না থাকলে এ পথে পা না বাড়ানোর জন্য। আমি বলিতে চাই যে, ভাই ও ভগিনীরা আপনার জন্য উচ্চ শিক্ষা নহে। আপনি বরং কোন চাকুরীতে যোগ দিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে থাকেন।

**************************************************** এবার আসি পোষ্টের প্রাসঙ্গিক বিষয় বস্তুতে। এই পোষ্টের টাইটেলে লিখেছি যে "ভাল বীজে ভাল ফসল: যেভাবে কনভিন্স করবেন একজন Made in Hervard Professor" **************************************************** উপরে Made in Hervard Professor লিখেছি গ্রাম-বাংলার চিরাচরিত প্রবাদ "নিজের ঢোল নিজে পেটানো" এর সার্থকতা প্রমাণ করিতে। Made in Hervard Professor বলতে আমি আমার নিজের PhD Supervisor কে বুঝিয়েছি। আমি অন্যদের বলতে একটু গর্ববোধ করি যে আমার Supervisor এর জীবনের সকল ডিগ্রী (BSc, MS, and PhD) Harvard University থেকে। আপনাদের কাহারো যদি ইচ্ছে হয় তবে আমাদের গ্রুপের ওয়েবসাইটে ঢু মারতে পারেন (Waterloo Atmosphere-land Interactions Research Group) ।

আমি আমার জীবনে আমার প্রফেসর ব্যতীত অন্য কোন মানুষকে চিনি না যে কিনা তার শিক্ষা জীবনের সকল ডিগ্রী Harvard University থেকে অর্জন করেছে। তাই আমি এই পোষ্টে আমার নিজের গল্পই লিখব যে কিভাবে আমি তাকে রাজী করালাম আমার PhD supervise করার জন্য। সেই সাথে অন্য আরও দুজন বন্ধুর অবিজ্ঞতাও শেয়ার করব আপনাদের সাথে। প্রশ্ন: কিভাবে আমি অধ্যাপক নির্বাচন করব? গবেষণা ভিত্তিক MS/PhD করতে হলে আপনাকে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ: ১) অনার্সে আমরা অনেকগুলো বিষয় পড়ে থাকি। কোন বিষয়েই আমারা খুব গভীর জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পাই না।

কোন বিষয়ে গভীর জ্ঞান আহরনের জন্য আমাদেরকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় যদি না আমারা কেউ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা টমাস আলভা এডিসন এর মত স্বশিক্ষিত মহাজ্ঞানী হয়ে থাকি। ২) আপনি কোন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চান তা ঠিক করুন অনার্স ৪ র্থ বর্ষে অধ্যয়নরত থাকা অবস্হায়। সেটা যদি সম্ভব না হয় অর্থাৎ আপনি যদি ইতোমধ্যেই অনার্স শেষ করে থাকেন ও মাস্টার্স শুরু করে থাকেন তবে আপনার মাস্টার্সের গবেষণার বিষয়-বস্তু এমন ভাবে নির্ধারণ করুন যাতে করে আপনি যদি ভবিষ্যতে PhD করতে করতে চান তবে এই গবেষণাটি যেন আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এতে করে আপনি আপনার পছন্দের বিষয়টির প্রাথমিক বিষয়গুলোতে মোটা-মুটি একটা ধারনা পেয়ে যাবেন। এর ফলে PhD ডিগ্রীতে ভর্তির জন্য অধ্যাপক খুঁজতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।

সেই সাথে কোন অধ্যাপক যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে যে তুমি কি নিয়ে গবেষণা করতে চাও সেটা নিয়ে কিছু চিন্তা করেছ কি না? ৩) আপনি যদি অনার্সে করা গবেষণার বিষয়-বস্তুতে আর আগ্রহ না পান তবে নতুন করে একটি বিষয় নির্বাচন করুন। আপনি যদি ভবিষ্যতে আইনস্টাইন বা নিউটন এর মত কেউ হতে না চান তবে ভবিষ্যতে চাকুরী পেতে সুবিধা হয় সেই বিষয়টির উপর লক্ষ-রেখেই বিষয় নির্বাচন করা উচিত বলে আমি মনেকরি। এইবার আমি আপনাদেরকে স্মার্ট-ফোন কোম্পানি Blackberry এর জনপ্রিয় একটি বিজ্ঞাপনের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই "Do what you love, Love what you do"। এই কথাটি বলার কারণ হলো, পিএইচডি এমন একটা পড়া-লেখা যা উপভোগ না করলে শেষ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। এমন অনেক মানুষ পাওয়া যাবে যে কিনা ৬/৭ বছর পড়া-লেখা করেও PhD ডিগ্রীর অর্জন করতে পারেনি।

অবশেষে MS ডিগ্রী নিয়ে শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটাতে বাধ্য হয়েছে। এবার আমি আমার নিজের জীবনের অবিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। ভবিষ্যতে ভারতের আবুল কালাম আজাদ বা পাকিস্তানের আব্দুল কাদির এর মত পরমাণু বিজ্ঞানী হব এই স্বপ্ন নিয়েই এক সময় পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম। আমেরিকার ৯/১১ এর পরিপ্রেক্ষিতে ও বয়সের বাড়ার সাথে সাথে কিছুটা বাস্তববাদী হলাম। ভেবে দেখলাম যে পরিবর্তিত বিশ্বে একজন মুসলিম শিক্ষার্থী হিসাবে আমেরিকা বা কানাডার মত দেশগুলোতে পরমাণু পদার্থবিদ্যা নিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা আমার জন্য সহজ হবেন না।

তাই অনার্সের চতুর্থ বর্ষে এসে মনস্থির করলাম যে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভবনাময় বিষয় Nanotechnology তে গবেষণা করি। যেই ভাবা সেই কাজ, সেই সময় আমাদের বিভাগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক গোল্ড-মেডেল প্রাপ্ত ও জাপান থেকে PhD & Post Doctoral সদ্য শেষ করে আসা শিক্ষক আব্দুল হান্নান স্যার এর সাথে যোগাযোগ করলাম। স্যার বলল যে আমার গত ৬ সেমিস্টারের রেজাল্ট লিখে তাকে দিতে। ইতোমধ্যে আরও কয়েকজন তার সাথে যোগাযোগ করছে। তাই এখনই সে আমাকে কথা দিতে পারতেছে না।

এখানে আপনাদের বলে রাখি যে আমাদের সময় বুয়েট ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনার্সে Thesis করতে হত না বা সেই সুবিধা ছিল না । সাধারণত তাদেরকে Project করতে হত। হান্নান স্যারকে বেছে নেবার অন্য একটা কারণ ছিল। স্যার বলেছিল যে তার তত্বাবধানে কাজ করতে হলে সেই ছাত্রকে ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে ৬ মাস কাজ করতে হবে। সুতরাং ছাত্রকে সিলেট ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে কাজ করবার মানসিক প্রস্ততি ও সামর্থ্য থাকতে হবে।

মাস শেষে নিশ্চিত মোটা অঙ্কের টিউশনির টাকার লোভ ছেড়ে অনেকের পক্ষেই সিলেট ছাড়া কষ্টকর ছিল। আমার নিজের ক্ষেত্রেও একই অবস্হা ছিল। ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাকে সেই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছিল। Bangladesh Atomic Energy Cnetre এ আমার আর একজন Supervisor ছিল Material Science Division এর ডাঃ দিলিপ কুমার শাহা। আমি এই দুজনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ তাদের চরম সহযোগিতার জন্য।

আমি অনার্স ডিগ্রী শেষ করি ২০০৬ সালে । আপনাদের সবার কম-বেশি মনে থাকার কথা যে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আইলা নামক একটা প্রলয়ন্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে যাতে করে প্রায় ৫০০০ হাজার মানুষ মারা যান ও অর্থনৈতিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড় এর কয়েকদিন পরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৈজ্ঞানিকরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন যে ঐ দিন আমাবস্যা থাকার কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় জোয়ার-ভাটার পানির উচ্চতা বেশি ছিল যার সাথে ঘূর্ণিঝড় যুক্ত হবার কারণে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা অনেক বেশি হয়েছিল সেই সাথে ক্ষয়-ক্ষতি পরিমাণও। পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স ডিগ্রীটা থাকার কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্বন্ধে কিছু সাধারণ ধারনা ছিল সেই থেকেই কিনা নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম যে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হ্যারিকেন ক্যাটরিনা, আইলার চেয়ে কয়েক গুন বেশি শক্তিশালী হলেও মানুষ মারা যায় মাত্র ৫০০!!!! সেখানে বাংলাদেশে কি না তার চেয়ে কয়েকগুন কম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেল ৫০০০ মানুষ!!! এই ঘটনার পরে নিজের উচ্চ শিক্ষার লক্ষ পরিবর্তন করলাম। ঠিক করলাম যে উচ্চ শিক্ষা নিব Atmospheric Physics বা আবহাওয়া পদার্থবিদ্যাতে।

যেই ভাবা সেই কাজ, মাস্টার্স এর থিসিস তত্বাবধান করবার জন্য অধ্যাপক খোজা শুরু করলাম। এখানে বলে রাখি যে বাংলাদেশে শুধুমাত্র বুয়েটের পদার্থবিদ্যা বিভাগে Atmospheric Physics এর উপর গবেষণা হয়ে থাকে ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে শিক্ষক নাই বললেই চলে। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের বিভাগে একজন শিক্ষক পেলাম যে কিনা বুয়েট থকে Atmospheric Physics এ MPhil ডিগ্রী নিয়েছিল যদিও কিন্তু পরবর্তীতে PhD করেছিল Aestrophysics এ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে উনি অল্প কিছুদিন পূর্বে প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় United International University তে মোটা অঙ্কের মাইনে ও ঢাকায় থাকার জন্য ২ বছরের ছুটি নিয়ে সিলেট ছেড়েছেন। কিন্তু আমিও নাছোড় বান্দা, ঠিক আবু ইসহাকের গল্পের জোক এর মত ঢাকায় গিয়ে স্যারের পিছে লেগে থাকলাম প্রায় সপ্তাহ খানেক।

আমার উদ্দেশ্য জানবার পরে নিজের ব্যস্ততা সত্যেও স্যার আর না করতে পারেনি। তবে সেই সাথে এটাও বলেছে যে দেখ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক টাকা বেতন দেয় তাই আমি নিজের দয়িত্ব শেষ করে যতটুকু সাহায্য করতে পারি করব। বাকিটা তোমাকে নিজেই করতে হবে। এর পরের কাহিনী আমার জীবনের লক্ষ পূরণের গল্প। মাস্টার্স গবেষনায় মাঝা-মাঝি সময়ে জাতিসংন্ঘের একটা পূর্ণ বৃত্তির জন্য মনোনীত হই।

যে বৃত্তি কি না সারাবিশ্বে প্রতিবছর দেওয়া হয় মাত্র ১০ জন তরুণকে যাদের বয়স হতে হবে ২৭ বছরের নিচে সেই সাথে বৃত্তি কর্তৃপক্ষকে (ইউনেস্কো) এটাও বুঝাতে হবে যে ঐ ডিগ্রী শেষ করে আপনি দেশে ফিরে যাবেন সেই সাথে সেখানে অর্জিত জ্ঞানকে নিজ দেশের কল্যাণে কিভাবে কাজে লাগাবেন ভবিষ্যতে। এখানে এটাও বলে রাখতে চাই যে ঐ ১০ জনের মধ্যে সমগ্র এশিয়া মহাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৪ জনকে নেওয়া হয়। নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে আপনি বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন সেই বৃত্তি সম্বন্ধে The Abdus Salam International Centre for Theoretical Physic,Trieste, Italy আমাদের ক্লাসের ৯ জন ছিল ৯ দেশের ছাত্র-ছাত্রী (এক টেবিলে সরাবিশ্ব)। বর্তমানে সবাই পিএইচডি গবেষক: এই ছবির ডান দিকের ৪ জন যুক্তরাষ্ট্রে, মাঝের মেয়েটি যুক্তরাজ্যে, পরের দুজন কানাডায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ে, শেষের জন ইতালিতে ও ক্যামেরাম্যান জার্মানিতে। আপনাদের হয়ত আমার জীবনের গল্প শুনতে খুব ভাল লাগবে না সেটা আমি বুঝি কিন্তু এই গল্প বলার করন হল আপনার জীবনেও এমনই একটি গল্প লিখতে হবে PhD admission এর জন্য যেটাকে বলে Statement of Purpose।

অধ্যাপকরা এই জিনসটিকে ভর্তির সময় অনেক মূল্য দিয়ে থাকেন যেহেতু বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের কাছে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের ফলাফলগুলো প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। অধ্যাপকরা বুঝতে চান যে কেন আপনি তার সাথে কাজ করতে চান। কারণ অনেক সময় কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্র সরকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গবেষণা করবার জন্য অধ্যাপক দের টাকা-পয়সা দিয়ে থাকে। আপনি যদি উপরে উল্লেখিত আমার চলার পথটি অনুসরণ করে থাকেন (আমার জীবনের গল্পটি নয়) তবে MS/PhD অধ্যয়নের জন্য অধ্যাপক পেতে আপনাকে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। উপরে জানালাম যে কিভাবে সময়োপোযোগী সিদ্ধান্ত নেবার কারণে আমি United Nations এর পূর্ণ বৃত্তি পেয়েছিলাম যার ফলে আমাকে VISA Processing ফিস এর টাকাটা পর্যন্ত দিতে হয় নাই ইতালিয়ান এম্বাসিকে সেই সাথে বিমান ভাড়ার ব্যবস্হাও তারাই করেছিল।

এবারে বলি কিভাবে কানাডার University of Waterloo এলাম PhD করতে। আমি ইতোমধ্যেই বলেছি যে আমার লক্ষ ছিল নির্দিষ্ট। অর্থাৎ, আমি কোন বিষয় নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করতে চাই। তাই ইতালিতে অধ্যয়নরত অবস্হায় পিএইচডি গবেষণা তত্বাবধান করার জন্য অধ্যাপক খুঁজতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় নাই। তবে কতটুকু কষ্ট করেছি সেটাও একটু জানিয়ে দিতে চাই আপনাদেরকে।

আমি প্রায় ৫০ জন অধ্যাপককে মেইল করেছিলাম মানে সোজা বাংলায় চিঠি লিখেছিলাম। এর মধ্যে মাত্র ১২ জন আমার পিএইচডি তত্বাবধান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল ও শেষ পর্যন্ত ৫ টা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিশ্চয়তা পেয়েছিলাম (২ টা আমেরিকান (জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়, হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়) , ২ টা কানাডিয়ান (ওয়ারটারলু , যেখানে বর্তমানে আছি ও ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়) ও ১ টা জার্মানির (Technical University of Munich))। এবারে বলব কিভাবে আমি উপরোক্ত ৫ জন অধ্যাপককে রাজি করিয়েছিলাম দুইটি পদ্ধতি অবলম্বন করে। দুইজনের সাথে সরাসরি কথা বলে আর ৩ জনকে মেইল করে। একটা কথা আপনাকে সবসময় মনে রাখতে হবে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার তেন্ডুলকার ও শূন্য রানে আউট হয়ে যায় কিন্তু নিজের দিনে ৯/১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে আবুল হাসান কিংবা মোহাম্মদ রফিক ও সেঞ্চুরি করে।

সুতরাং যেখানে যতটুকু সুযোগ পান না কেন সেটঈ আপনাকে ভালভাবে কাজে লাগাতে হবে। উপরে ইতোমধ্যেই জেনেছেন যে আমি ৫০ জন অধ্যাপককে মেইল করেছিলাম তাদের মধ্যে মাত্র ১২ জনের সাথে ২ বারের অধিক মেইল আদান-প্রদান হয়েছিল। সুতরাং উচ্চ শিক্ষার্থে পা বাড়ালে আপনার মাথার মধ্যে প্রথমেই ঢুকাতে হবে যে পরাজয়ে ডরেনা বীর। সুতরাং "লেগে রাহো মুন্না ভাই" ছবির মুন্না ভাই হতে পারে আপনার গুরু অথবা রাজা রবার্ট ব্রুস। **************************************************** চলুন তাহলে শুরু করে দেই অধ্যাপক খোজা **************************************************** আবারও আপনাদেরকে বলতে চাই আপনার যদি জানা থাকে যে আপনি কি নিয়ে গবেষণা করতে চান তবে PhD তত্বাবধানের জন্য অধ্যাপক খুঁজতে আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না।

যেভাবে আমি খুঁজে নিয়েছিলাম নিম্নক্ত ৫ জন অধ্যাপককে। যেহেতু আমি International Centre for Theoretical Physics (ICTP) তে Post Graduate Diploma করতেছিলাম Earth System Physics এর উপরে তাই আমার ইচ্ছে ছিল আমি PhD করব Atmospheric Physics / Earth System Physics/ Environmental Science এর উপরে। প্রথম কাজ: প্রথমেই আমি ঠিক করেছিলাম যে কোন কোন দেশে PhD করতে যেতে চাই। দ্বিতীয় কাজ: আমি যেই দেশে যেতে চাই সেই দেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে PhD করব Atmospheric Physics / Earth System Physics/ Environmental Science এর উপরে PhD করার সুযোগ আছে। তৃতীয় কাজ: আমি খুঁজে পেলাম যে আমার কাঙ্ক্ষিত দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে Atmospheric Physics / Earth System Physics/ Environmental Science বিভাগ আছে যেখানে PhD করার সুযোগ আছে।

এবার আমার দায়িত্ব হলো সেই বিভাগে সকল অধ্যাপকের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা। ১) আপনাকে প্রথমেই যে তথ্যটা জানতে হবে সেটা হলো উনি কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেছে। ২) এর পরে আপনাকে দেখতে হবে গত ২/৩ বছর উনি কয়টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন ও সেগুলোর টাইটেল কি ? সেই বিষয় গুলো সম্বন্ধে আপনার সামান্যতম জনা আছে কি না? ৩) এর পরে আপনাকে দেখতে হবে সেই অধ্যাপক কোন গ্রাজুয়েট ছাত্র খুজতেছে কি না? এই বিষয়টা প্রায় সময় অধ্যাপকদের পরিচিতি অংশের কাছা-কাছি থাকে। যেমন Randall Martin অধ্যাপকটির তার ওয়েব পেজের শুরুর দিকে লিখে রেখেছেন Accepting Graduate Students and Post-Docs. উপরোক্ত ২ টি শর্ত যদি আপনার পছন্দের সাথে মিলে যায় সেই সাথে দেখে থাকেন যে এই অধ্যাপক ছাত্র খুজতেছে তাহলে আপনি এবার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তাকে একটি মেইল করার জন্য। আমি উপরোক্ত ৩ টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিম্নক্ত ৫ জন অধ্যাপকে ঘায়েল করেছিলাম।

============================================= জার্মান অধ্যাপককে যেভাবে বশে আনলাম ============================================= ইতালিতে অধ্যয়নরত অবস্হায় সেখানে একটা অন্তর্জাতিক কনফারেন্স চলিতেছিল। আমার পড়া-লেখার ব্যস্ত সময়ের মাঝেও সেই কনফারেন্সর বিভিন্ন লেকচারে অংশগ্রহণ করতাম। আমার মতলবও ছিল ঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের মেয়েদের আগমনের সময় যেমনটি থাকে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাইয়াদের যে অধ্যাপকের লেকচার ভাল লাগত ও সেই বিষয় ভাল লাগলে লেকচার শেষ হবার সাথে সাথে কনফারেন্সের সুভেনির থকে সেই অধ্যাপকের মেইল বের করে তাকে মেইল করে দিতাম। মেইলে লিখতাম যে তোমার লেকচার আমার খুবই ভাল লেগেছে। আমি বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে Post Graduate Diploma করতেছি যেটা আগামী আগস্টে শেষ হয়ে যাবে।

তাই আমি আমার পিএইচডি গবেষণা তত্বাবধান করার জন্য একজন অধ্যাপক খুজতেছি। আপনি কোন PhD Student নিবেন কি না আগামী বছর? আজ দুপুরে আমরা একসাথে লাঞ্চে যেতে পারি কি না? এখানে বলে রাখি যে এমনিতেই সবাইকে একই ক্যাফেটেরিয়াতে লাঞ্চ করতে হত একই টেবিলে ৩/৪ জন বসে। আমার মেইল পেয়ে সেই অধ্যাপকও রাজি হয়ে গেল আমার সাথে লাঞ্চ করতে। সেই সাথে লিখল যে আমি আমার একটা Curriculum Vitae (CV) লাঞ্চের পূর্বেই তাকে পাঠাতে পারি কি না? আপনাদেরকে পূর্বেই বলেছি সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য আপনাকে সবসময় তৈরি থাকতে হবে। আমার ল্যাপটপে সবসময়ই আপ-টু-ডেট একটা CV থাকত সেই সাথে পূর্বের যত Academic Transcript এর PDF কপি।

সেই অধ্যাপকের মেইল পাবার সাথে সাথেই ওগুলো পাঠালাম এবং ঠিক ১ ঘণ্টা পরে তার সাথে লাঞ্চে গেলাম। লাঞ্চ চলাকালীন গল্পে-গল্পে সে আমার একটা ইন্টার্ভিউ নিয়ে ফেলল। লাঞ্চও শেষ আমার PhD ভর্তিও নিশ্চিত। একেই বলে ঝোপ বুঝে কোপ মারা ============================================= যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক V. Krishnamurthy কে যেভাবে রাজি করালাম ============================================= অধ্যাপক V. Krishnamurthy হলো দক্ষিণ এশিয় জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করা পৃথিবীর শীর্ষ ৫ জন বৈজ্ঞানিকের একজন। উনার জন্ম ভারতে হলেও গত ৩০ বছর ধরে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।

PhD করেছেন MIT থেকে। উনি প্রতিবছর International Centre for Theoretical Physics (ICTP) তে আসেন Visiting Scientist হিসাবে কোন না কোন Conference এ। যেহেতু পাশের দেশের মানুষ তাই এবার পূর্বে জনের মত মেইল করে অনুমতি না নিয়ে সরাসরি গিয়ে বললাম যে আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি এখানে Post Graduate Diploma করতে যেহেতু এটা শেষ হয়ে যাবে আগামী আগস্টে তাই সেপ্টেম্বর থাকে PhD শুরু করতে চাই আপনার তত্বাবধানে South Asian Monsoon নিয়ে। আপনি তো খুব ভাল করেই জানেন বাংলাদেশে এই বিষয় নিয়ে কত জন মানুষ গবেষণা করে। কি আর করা যাইব প্রতিবেশী দেশের মানুষ দ্বারা এমনে করেই ব্লাকমেইলের স্বীকার হইল এই মানুষটি।

এখানে আরও বলে রাখি যে George Mason University (http://aoes.gmu.edu/) তে আমার PhD যুগ্ন ভাবে তত্বাবধান করত আর একজন বিশ্ব বিখ্যাত ভারতীয় বৈজ্ঞানিক Jagadish Shukla (http://www.iges.org/people/shukla.html)। উনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর বিজ্ঞান উপদেষ্টা। ============================================= কানাডার Dalhousie University এর অধ্যাপক Randall Martin (Click This Link) কে যেভাবে রাজি করালাম ============================================= আবারও আপনাদেরকে বলতে চাই আপনার যদি জানা থাকে যে আপনি কি নিয়ে গবেষণা করতে চান তবে PhD তত্বাবধানের জন্য অধ্যাপক খুঁজতে আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। যেভাবে আমি খুঁজে নিয়েছিলাম Randall Martin কে। ১) প্রথমেই জানলাম যে Dalhousie University কানাডার ভাল একটি বিশ্ববিদ্যালয়।

২) এর পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পেলাম যে সেখানে Physics and Atmospheric Science নামক একটি বিভাগ আছে। ৩) সেই বিভাগের সকল অধ্যাপকের গবেষণার বিষয় সম্বন্ধে জানলাম। ৪) এর মধ্যে অধ্যাপক Randall Martin এর কাজের আমার আগ্রহ জন্মাল। আমি আমার আগ্রহ জানিয়ে তাকে একটি মেইল করলাম। ৫) উনি আমার মেইলের উত্তরে জানাল যে International Centre for Theoretical Physics (ICTP) সম্বন্ধে তার জানা আছে সেই সাথে সে এও জানাল যে ICTP Graduate দের সম্বন্ধে তার ধারনা খুব উচ্চ।

৬) এর পরে সে আমার কাছে ১ পৃষ্ঠার একটা Statement of Purpose চাইল কেন আমি তার গ্রুপে যোগ দিতে চাই? ৭) আমিও যথাবিহিত সম্মানপুর্বক মনের মাধুরী (বলিউডের মাধুরী দীক্ষিত না কিন্তু ভাইবোনেরা ) মিশিয়ে এক খানা Statement of Purpose লিখিয়া পাঠাইলাম ঢাকা শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বায়ুর বর্ণনা দিয়া যেহেতু অধ্যাপক মহাশয় কাজ করেন Atmospheric Chemistry নিয়ে। আমি লিখলাম ঢাকা শহরের বায়ুতে Aerosol Particles এর পরিমাণ যেহেতু অত্যান্ত বেশি তাই এই Aerosol Particles গুলো মেঘের কণা সৃষ্টি নিয়ন্ত্ররনের মাধ্যমে এখানকার বৃষ্টিপাতের পরিমাণের উপর বর্তমানে কি প্রভাব বিস্তার করতেছে ও ভবিষ্যতে কি পরিবর্তন সাধন করতে পারে তা নিয়ে গবেষণা করতে চাই। আমার Statement of Purpose পাইয়া ব্যাচারা পুরোই কুপোকাত আমারে ফিরতি মেইল দিল কামাল যেহেতু তুমি বাংলাদেশের মত একটি গরিব দেশ থেকে এসেছে তাই আমি চাইনা তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে ভর্তির জন্য দরখাস্ত কর। তুমি সেখান থেকে ফরম ডাউন-লোড করে তা পূরণ করে সরাসরি আমাকে পাঠাও আমি সেটা বিভাগের ভর্তি কমিটির কে দিয়ে দেব। এতে করে তোমাকে ভর্তি ফি এর ৭৫ ডলার দিতে হবে না।

সুতরাং অধ্যাপক কে খুশি করতে পারলে আমার মত আপনিও ৭৫ টি ডলার সাছ্রয় করতে পারবেন। এভাবেই Randall Martin রাজী করালাম আমার PhD এর তত্বাবধান করার জন্য। মাহফুজ আহমেদের অতঃপর নুরুল হুদা নাটকের কথা মনে আছে নুরুল হুদার মত আমিও একটা PhD Admission হাতে রেখে আরও ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় কি না সেটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম কাজী নজরুলের পূজারিণী কবিতার সেই নারীর মত "নারী নাহি হতে চায় একা কভু কারো ওরা দেবী ওরা লোভী যত পূজা পায় তত চায় ওরা আরও ইহাদের অতিলোভী মন একে পেয়ে খুশি নয় একজনে তৃপ্ত নয় যাচে বহুজন " কেন জানি আমার মনের মধ্যে একটা ভাবনা কাজ করত যে জীবনে PhD একটাই করব সুতরাং সেটা যেন ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়, একজন ভাল অধ্যাপকের তত্বাবধানে হয়। আল্লাহ আমার সেই ইচ্ছাটাই পূরণ করেছে। অবশেষে আমি খুঁজে পেলাম আমার স্বপ্নের সেই অধ্যাপক University of Waterloo এর Dr. John C Lin কে।

এই পোষ্টটি ইতোমধ্যেই অনেক বড় হবার কারণে আপনাদের সুবিধার্থে এই পর্বটিকে দুটি ভাগে ভাগ করে প্রকাশ করতে হল। অবশিষ্ট অংশে লিখব Dr. John C Lin কিভাবে ফোনে ৫০ মিনিটের একটি Interview এর মাধ্যমে আমাকে তার জীবনের প্রথম PhD Student হিসাবে মোনোনিত করেছিল। ৫০ মিনিটের সেই Interview এ উনি কি কি প্রশ্ন করেছিলেন? আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছিলাম কি না? উপরোক্ত প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানতে চোখ রাখুন চতুর্থ পর্বের পরবর্তি অংশে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.