চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এই পর্বে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৪৫৬টি কেন্দ্রে টানা ভোটগ্রহণ চলবে।
চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে এসব উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন ১১শ' জনের বেশি। তাদের মধ্যে থেকে ২৪৩ জনকে নির্বাচিত করবেন ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ১৩ ভোটার।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে প্রার্থীদের সব প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। টহলে রয়েছেন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
এরইমধ্যে কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম।
নির্দলীয় এ নির্বাচনকে ঘিরে রয়েছে রাজনৈতিক উত্তাপ। প্রথম দুই পর্বের ধারাবাহিকতায় এবারও অধিকাংশ উপজেলায় দলীয় নেতাদের বিজয় আশা করছে বিএনপি।
প্রথম দুই পর্বে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দাবি করলেও বিএনপি বরাবরই কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।
কারচুপি হলে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকিও দিয়েছেন দলটির নেতারা।
গত দুই পর্বে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা হলেও এবার নির্বাচন সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করতে তৎপর ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক সাংবাদিকদের বলেন, ভোটের পরিবেশ নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনে স্থানীয় প্রশাসনও ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় তারা কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য বাহিনীর সদস্য বাড়াতে ও কমাতে পারবে। ”
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরলেও জ্যেষ্ঠ এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “একেবারে যে কিছু ঘটবে না তা আগাম বলা যাবে না।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা বদ্ধ পরিকর। সবকিছু আল্লাহর হাতে। অনিয়ম দেখলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি। ”
সহিংসতার মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের দুই মাসের মধ্যে উপজেলা পরিষদের প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে ৬২ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে।
এবারও ভালো ভোটার উপস্থিতির আশা করছে ইসি।
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
এছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকছে।
তৃতীয় ধাপে ৪২ জেলার ৮৩ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের কারণে গাজীপুরের শ্রীপুরে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়া সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় আদালতের নির্দেশে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জেও নির্বাচন স্থগিত।
দুই পর্বের ভোটে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীগ সমর্থিত প্রার্থী ৮২ জন এবং বিএনপি সমর্থিত ৯৮ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির দুই নেতা, জামায়াতে ইসলামীর ২০, জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) তিন নেতাও চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ইতোমধ্যে বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়- এটাই তার প্রমাণ।
তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের অনিয়ম দেখেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। বর্তমান কমিশন সুষ্ঠু ভোটে বাধা।
নির্বাচন কমিশনের সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান জানান, ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। এ আইন কেউ লংঘন করলে কারাদণ্ডের পাশাপাশি আর্থিক জরিমানাও করা হবে, এমনকি প্রার্থিতাও বাতিল করা হতে পারে।
এর আগে ১৯৮৫ সালে প্রথম ও ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একাধিক দিনে ভোট হয়।
তার দেড় যুগ পর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একদিনে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়।
এবার ছয় ধাপে দেশের ৪৮৭ উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ভোট হচ্ছে। প্রথম পর্বে ১৯ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় পর্বে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট হয়। তৃতীয় পর্বে শনিবারের পর চতুর্থ পর্বে ২৩ মার্চ ৯৩ উপজেলায়, পঞ্চম পর্বে ৩১ মার্চ ৭৪ উপজেলায় ভোট হবে। ষষ্ঠ পর্বে ৩ মে বাকি উপজেলাগুলোতে ভোট হওয়ার কথা।
ভোটের তথ্য
তৃতীয় পর্বে ৪১ জেলার ৮১ উপজেলায় মোট এক হাজার ১১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪১৯, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২৩ এবং সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মোট ভোটার রয়েছেন এক কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩২ জন এবং মহিলা ভোটার ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ১৮১ জন।
ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৫৬টি, ভোটকক্ষ ৩৮ হাজার ১৮৯টি।
প্রিসাইডিং অফিসার প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন করে ৫ হাজার ৪৫৬ জন। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রতি ভোটকক্ষের জন্য এক জন করে মোট ৩৮ হাজার ১৮৯ জন।
৭৬ হাজার ৩৭৮ জন পোলিং অফিসার সংখ্যা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৪২ জেলার ৮৩ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুর এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ৮১ উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে টহল শুরু করেছে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচদিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে।
প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল দিচ্ছে। প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি টহলে রয়েছে। সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেটও থাকছেন মাঠে।
এছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যা ব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকছে।
এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (মহিলা-৪, পুরুষ-৬ জন) এবং আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রামপুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে।
ঝুঁকিপূর্ণ, পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধু পুলিশের ক্ষেত্রে দুজন হবে।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৩২৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৮১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।