আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্লেন খোঁজার প্রযুক্তিগুলো

যোগাযোগব্যাবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও, যে কোনো প্লেনের বেসিক সিস্টেম হিসেবেই ইঞ্জিন নির্দিষ্ট প্রযুক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই তাদের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিংবা এয়ারলাইনকে কিছু কারিগরি তথ্য পাঠাতে পারে। তদন্ত কর্মকর্তারা এখন বলছেন, এ রকমই কিছু সিস্টেম এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সঙ্গে ফ্লাইট ৩৭০-এর যোগাযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও অনেক্ষণ ধরে কাজ করছিল। আর সেটা থেকেই তারা ধারণা করছেন ‘অদৃশ্য’ হয়ে যাওয়ার পরও প্রায় সাত ঘন্টা ধরে আকাশেই অবস্থান করছিল প্লেনটি।

যেসব প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়েছে এই অসাধ্য সাধন, তার মধ্যে একটি হল এসিএআরএস (এয়ারক্র্যাফট কমিউনিকেশন্স অ্যাড্রেসিং অ্যান্ড রেসপন্ডিং সিস্টেম)। এর কাজ হল শর্ট রেডিও বার্স্টের মাধ্যমে এয়ারলাইনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্লেনের অবস্থা সম্পর্কে ¯^য়ংক্রিয়ভাবে তথ্য আদান-প্রদান করা।

এসিএআরএস-এর মাধ্যমে একটা প্লেন বিভিন্ন রকমের তথ্য পাঠাতে পারে। প্লেনের কতটুকু জ্বালানি বাকি আছে কিংবা ইঞ্জিনের অবস্থাই বা কেমন- এ ধরনের হালহাকিকত তদারকির জন্য এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়।   ২০০৯ সালে ব্রাজিলের এক সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়ার আগে এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট ৪৪৭ এধরনের ২৯টি এসিএআরএস মেসেজ পাঠিয়েছিল; যার কারণে ট্রান্সপন্ডার নষ্ট হয়ে গেলেও প্লেনটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে, এসিএআরএসের মাধ্যমে কি ফ্লাইট ৩৭০-এর অবস্থান সম্পর্কে জানা সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে এটি সম্ভব নয়। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এসিএআরএসের মাধ্যমে কেবল বলা সম্ভব, প্লেনটি এখনো আকাশে উড়ছে কিনা; অন্য কোনো তথ্য সেখান থেকে বের করা সম্ভব না।

তদন্তকারীদের একজন, এম্ব্রি-রিডল অ্যরোনটিকাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বিল ওয়ালডক বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন এভাবে, “সাধারণত, এসিএআরএস প্লেনের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে জানাতে পারে না। এটি শুধু প্লেনের ইঞ্জিনের অবস্থা সমএর্ক তথ্য দেয়। এর থেকে ভ‚মি থেকে প্লেনের উচ্চতা কিংবা কোন ধরনের দিকনির্দেশনা সম্পর্কিত তথ্যও সাধারণত পাওয়া যায় না। তবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এসিআরএস-এর সংকেত পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ধরে নেওয়া যায় প্লেনটি ধ্বংস হয়নি। ”

এদিকে তদন্তকারীরা এখন বলছেন, এসিএআরএসের পাঠানো তথ্য থেকে তারা ধারণা করছেন, গন্তব্যের পথ থেকে সরে গেলেও ফ্লাইট ৩৭০ ইঞ্জিন ভালোভাবেই চলেছে অন্তত সাত ঘন্টা।

সোজা কথায়, যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হলেও কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই ওই সময় উড়ছিল প্লেনটি।

এসিআরএএস-এর এইসব তথ্য থেকেই এখন ধারণা করা হচ্ছে, রহস্যময় কোন দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত আক্রমণেরই শিকার হয়েছে ফ্লাইট ৩৭০। এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, “বিষয়গুলো এখন সবারই জানা। যতই সময় যাচ্ছে, ততই এটির দুঘর্টনা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। বরং এটিকে এখন একটি সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবেই আশংকা করা হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্লেনটির অবস্থান যদি এখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার মিটার ওপরেও হয় (যেখানে কোনো ধরনের নেটওয়ার্ক কাজ করে না), সেখান থেকেও কী এই প্রযুক্তিতে তথ্য পাঠানো সম্ভব? উইকিমিডিয়া বলছে, সম্ভব। কারণ, এই প্রযুক্তি অনেকগুলো প্রটোকলেই ব্যবহার করা যেতে পাারে। এর মধ্যে রয়েছে ভিএইচএফ রেঞ্জে রেডিও ওয়েভে সংকেত প্রেরণ ও কৃত্রিম উপগ্রহগুলোকে সংকেত পাঠনো। এভাবে নেটওয়ার্কের আওতায় না থাকলেও এই প্রযুক্তিতে প্লেনের অবস্থা জানতে পারা সম্ভব।

 

এরমধ্যেই, শুক্রবারে একটি স্যাটেলাইট অপারেটরে পাওয়া এসিএআরএস সংকেত আশা জাগাচ্ছে সবার মধ্যে।

ইনমারস্যাট নামের ওই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সংকেতটির ইনকামিং ট্রান্সমিশনের ‘অ্যাঙ্গেল’ খতিয়ে দেখে প্লেনটির অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করে দেখবে তারা।

এসিআরএএস ছাড়াও অন্য কী কী প্রযুক্তিতে খোঁজ পাওয়া যেতে পারে প্লেনটির? এই পশ্নের উত্তর সম্ভবত সবচেয়ে ভাল জানা আছে ফ্লাইট ৩৭০ এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোইংয়ের। কারণ, তারা নিজেদের তৈরী প্লেনগুলোর নিরাপত্তার জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অনেকধরনের প্রযুক্তি তৈরী করে রেখেছে, তবে অবশ্যই গ্রাহককে সেসব প্রযুক্তি নির্দিষ্ট মূল্যে কিনে নিতে হবে তাদের কাছ থেকে। বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মালয়শিয়ান ওই এয়ারলাইন্স বোইং-এর সেসব প্রযুক্তি নেয়নি।

তবে তদন্তকারীদের জন্য আশার কথা, ফ্লাইটরেডারটোয়েন্টিফোর নামের আরেকটি উপগ্রহভিত্তিক অবাণিজ্যিক প্রযুক্তি (যেটির মাধ্যমে আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের এভিয়েশন সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো ট্র্যাক করে) এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এর মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে থাকা যেকোনো প্লেনের অবস্থান বের করা সম্ভব। অবশ্য এই প্রযুক্তি থেকে কী পরিমাণ তথ্য পাওয়া যাবে, বা সেটাও এক্ষেত্রে যথেষ্ট কিনা, সেটাও দেখার বিষয়।

যাত্রীদের মোবাইল ফোনের সংকেত কি কোনো কাজে আসতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরটি এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়, কারণ এখানো অনেকগুলো ‘যদি’র উপস্থিতি রয়েছে। এক. যদি প্লেনটি যথেষ্ট নিচু দিয়ে উড়ে থাকে। দুই. যদি প্লেনটি ধীরগতিতে চলে থাকে যাতে করে মোবাইল টাওয়ার থেকে সংকেত ধরতে পারে।

এবং, যদি প্লেনটি জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে যেখানে যথেষ্টসংখ্যক মোবাইল ফোন টাওয়ার রয়েছে।

 

বেল ল্যাবের সাবেক এভিয়েশন গবেষক ড্যানিয়েল বারনিঞ্জার বলেন, মোবাইল ফোনের সিগনাল পিক করতে হলে প্লেনটিকে অবশ্যই ১০০০০ ফিটের কম উচ্চতায় উড়তে হবে। তারপরও মনে রাখা উচিৎ মোবাইল ফোন টাওয়ারের সিগনাল সবসময় একইরকম ক্ষমতাসম্পন্ন থাকে না।

তবে এতোসব প্রযুক্তির গুরুগম্ভীর আলোচনার মধ্যে প্রযুক্তিবিষয়ক এক ব্লগে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করেছেন এক পাঠক-- এটি কী হওয়া উচিৎ যে, কোনো প্লেন হাইজ্যাক করা হলে তার সিগনাল পাঠানোর কাজটি ককপিট থেকেই বন্ধ করে দেয়া সম্ভব? প্লেন নির্মাতারা আরোহীদের নিরাপত্তার ¯^ার্থেই কি এমন প্রযুক্তি জুড়ে দিতে পারেন না যাতে কোনো বিমানবন্দরে নামার আগমুহুর্ত পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সংকেত পাঠাবে প্লেন যেটি চাইলেও বন্ধ করা সম্ভব নয়? জবাবটি প্লেন নির্মাতারাই ভালো দিতে পারবেন, তবে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশ্নটির গুরুত্ব এখন অনেকখানি।




সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।