আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ জার্নি বাই প্লেন

ওরা দিনের আধারে ঘুমায় ওরা রাতের আলোতে হাটে ইটের দেয়ালে মাথা রেখে ওরা হৃদয় খুলে হাসে বাংলাদেশ থেকে অতি শীঘ্রই যে রাজনৈতিক আন্দোলন টি হারিয়ে যাবে সেটা অবিসংবাদিত ভাবে হরতাল । কি অবাক লাগছে তো ? অবাক হওয়ার কিছু নাই । ঢাকা শহরে যাতায়াত করে সবচেয়ে শান্তি হরতালে । কোন জ্যাম নাই , শান্তিতে ফুড়ুৎ করে এপার থেকে ওপারে যাওয়া যায় । কিন্তু দিন বদলাচ্ছে ।

আজ গন্তব্য ছিল ফার্মগেট টু গুলশান । উঠলাম ৬ নাম্বার বাসে, মনে হল আহ আজ প্লেনের জার্নি হবে, রাস্তা থাকবে ঝকঝকা ফকফকা । জার্নি বাই প্লেন নাম্বার ৬ ঃডি । গাড়ি চলতে শুরু করলো কিন্তু অবাক করা কান্ড হল আজ এই হরতালের দিনে আমাকে অবাক করে দিয়ে প্লেনটি উপর্যুপরি জ্যামের পড়তে লাগলো । আমার মেজাজ গেলো বিগড়ে ।

সব দোষ এই সব প্রাইভেটকার ওয়ালা মালিকদের বউ দের । স্মামী কয়টা টাকা জমাইছে ঠিক ওইসময় আদুরে গলায় বলবে -এই শুন না পাশের ফ্লাটের ভাবীরা না একটা দারুন গাড়ি কিনেছে । তোমার তো অনেক টাকা জমা আছে । চল না একটা কিনে ফেলি । মামলা খতম , পয়সা হজম ।

বেচারা স্ত্রীর আদুরে ঢং এর ফাদে পা দিয়ে কোমর মোটা টাকা নিয়ে শো রুম থেকে নিয়ে আসে নয়া গাড়ি । কিছুদিন যেতে না যেতেই এক রাতে বিছানায় শুয়ে স্বামীর উপর আবার সেই পুরানা অস্ত্রের প্রয়োগ করে এই জালিম বৌ রা । এবার নতুন ঢং এ বলে , আমাদের গাড়িটা তো তুমিই বেশি ব্যাবহার কর, আমাদের সন্তানেরা এখন বড় হইসে তাছাড়া আমাকে মাঝে মাঝে শপিং এ যেতে হয় , তুমি এক কাজ কর আমাদের জন্য একটা আলাদা কিনে ফেল , তুমি বলেছিলে আমাকে কি গিফট দিবা এই জন্মদিনে , তুমি গাড়ি না দিলে বুঝবো তুমি আমাকে ভালইবাস না । স্ত্রীর মুখে একটা অভিমানী ঢং । স্মামী বেচারা আবার চিটপটাং ।

কি আর করা, ভালোবাসা বলে কথা । আবার আসে নতুন গাড়ী । ঠিক এভাবেই প্রতিনিয়ত প্রায় দু’ শ গাড়ী নামে ঢাকার রাস্তায়। হিলারী ক্লিনটন যেবার শেষ ঢাকা আসেন তিনি এই জ্যাম দেখে মন্তব্য করেন “হোয়াট দা ফা......এই দেশ নাকি গরীব , যেদেশের লোকেদের এতো গাড়ী, সেই দেশ গরীব হয় কিভাবে ?” হিলারি আন্টি আমাদের কথা জানেন না । আমরা আম পাবলিক পড়ি মহা জ্যামে ।

আমাদের তো গাড়ি নাই তাই এইসব বাসই আমাদের সম্বল । উনারা গাড়ীতে বসে এসির হাওয়া খান আর আমরা ভিড়ের মধ্যে ঘামের গন্ধ খাই । আপনি জানেন কিনা জানিনা, ঢাকা শহরের সব বাসগুলোতে ব্জীন আছে । কি অবাস্তব মনে হচ্ছে ? হুম হবেনই কারন বাসের সেই ব্জীন আপনাকেও ধরে কিন্তু আপনি বুঝতে পারেন না । ঢাকা শহরের যেকোন বাসে উঠলেই একটা শান্তশিষ্ট ভদ্র লোক ও যুদ্ধাংদেহী ভুমিকায় নেমে পড়েন , বাসে কেউ হাসে না ।

সবার মুখ থাকে গম্ভীর । একটু পর পর চলে ভাড়া নিয়ে গ্যাঞ্জাম , অতি ভদ্র আপুও অধিকার সচেতন হয়ে সিট নিয়ে কলহে মাতেন । জয় অবশ্য মেয়েদেরি হয় । মেয়েদের প্রতি বাঙ্গালী অতি মাত্রায় দুর্বল কিনা । আমার মনে প্রশ্ন জাগে নারীরা সমান অধিকার চায় সব খানে ।

কিন্তু বাসে উনাদের প্রতিবন্ধীদের মত সংরক্ষিত আসনের দরকার কি ?আপনারা তো প্রতিবন্ধী না । এটা খটকা লাগে ,আরে আপু আগে আইসা আগে বইসা পড়েন ,ঝামেলা খতম । কিন্তু ব্জীন উনাদের খুব ভালভাবে আসর করে তাই গলার আওয়াজ তীব্র বেগে গোটা বাসকে প্রকম্পিত করে । কিন্তু ঝামেলায় পড়েন সেই সকল আসল নারীরা যাদের ব্জিন কবজা করতে পারে না,ইনারা কোন উচ্চবাচ্চ করেন না , দেখেই সন্মান দিতে ইচ্ছা হয়। উনাদের জন্যই আমার মাঝেমাঝে মনে হয় নাহ সংরক্ষিত আসন রাখা উচিত ।

যাক সেসব কথা ,উপলব্ধি হল মানুষ আর আগের মত নাই ,সবাই ডেমকেয়ার , তাই সবাই হরতালের দিনেও গাড়ী নামচ্ছে নির্বিঘ্নে । গাড়ী ঘোড়া ঠিকই চলছে । তাই অদূর ভবিষ্যতে এই আন্দোলনের এই রুপটি নিয়ে হতাশ । হরতাল উঠে গেলে ক্লাস বন্ধ উঠে যাবে ,শান্তিতে ঘুরতে পারবো না,ঘুমের ডিস্টার্ব । কি কষ্ট কি কষ্ট ।

আমি আপনি হরতাল থাকবে কি থাকবে না এনিয়ে তর্ক করতেই থাকবো , কিন্তু ভুলে যাবো হরতালের কারনে না খেয়ে থাকা মানুসগুলোর কথা । আমি জানি আমার মত বাঙ্গালীদের জন্যই জাতির কোন উন্নতি নাই । হবেও না । অবশেষে সাত সমুদ্দুর তের নদী পার হয়ে গুলশান দুই সার্কেলে নামলাম । এবং একটি পঙ্গু দেশের সুনাগরিক হিসেবে পঙ্গু লোকের মত খুড়িয়ে খুড়িয়ে গন্তব্যের দিকে চোখ রাখলাম ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।