নীড় ছোট ক্ষতি নেই , আকাশ তো বড় !
সাদেক এখন মিটিমিটি হাসছে কারন তার সামনে যে ছেলেটি বসে আছে তাকে একটু পর কঠিন একটা ছেচা দেয়া হবে। সেটা দিবেন তার বড় স্যার। সাদেকের বড় স্যার পুলিশের মস্ত বড় অফিসার ছিলেন , রিটায়ার করেছেন। তার সামনে কত অপরাধী প্রশ্ন করার আগেই জামাকাপড় ভিজিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। আজকে এই বান্দর পোলার পালা।
সাদেকের উপর ভার পড়েছে ছেলেটা যাতে বসার ঘর থেকে পালিয়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে। তার মতে এই সব ছেলেকে সকাল বিকাল নিয়ম করে দুইবেলা থাপরানো দরকার। কত্ত বড় সাহস , ছোট ম্যাডাম কে গোলাপ ফুল দেয় - তাও আবার বড় স্যারের সামনে !
গম্ভীর মুখে রকিব সাহেব ফারহানের সামনে বসলো। তার মুখে পাইপ , ধোয়া উঠছে। ফারহানের মতে বাংলাদেশের খুব কম মানুষের মুখে পাইপ মানায় এবং আশ্চর্য হলেও সত্যি যে রকিব সাহেবের মুখে তা বেশ ভাল মানিয়েছে।
নীরবতা প্রথম ভাঙ্গলেন রকিব সাহেব।
- তুমি অহনাকে গোলাপ দিয়েছো , ভাল কথা - কিন্তু আমার সামনেই কেন দিয়েছো ? লুকিয়ে দিলেও তো পারতে !
- লুকিয়ে দিলে তো আর আপনি দেখতেন না যে কে অহনাকে গোলাপ দিয়েছে , অহনা কার কাছ থেকে গোলাপ নিয়েছে - আর আমাকেও বাসায় এনে এসব জিজ্ঞেস করতেন না !
- কিন্তু কেন দিলে? একটা মেয়েকে লাল গোলাপ দেবার মানে কী তুমি বুঝো ?
- হুম , আমার মা বলেছে - তাকেই লাল গোলাপ দিতে যাকে হৃদয়ে স্থান দেয়া যায় মনের মানুষ হিসেবে।
- তোমার ভয় করলো না ? তুমি তো এখনো নিজেরই দায়িত্ব নিতে শিখো নি , অহনার কী ভাবে নিবে ?
- আমি পারবো , কারন অহনাকে আমি ভালবাসি , অহনাও আমাকে ভালবাসে। কিন্তু ও একটা শর্ত দিয়েছিল , তাই পূরণ করতে গিয়ে আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল এবং আমি দুঃখিত যে শর্তটির কথা আমি আপনাকে বলতে পারবো না। আংকেল আমি এখন আসি , রাত হয়ে গেছে - কালকে প্রেজেনটেশন আছে , অনেক কাজ করা বাকী , পরে কথা হবে।
রকিব সাহেবের উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফারহান চলে গেল। তার গতিপথের দিকে তাকিয়ে থেকে রকিব সাহেবের মনে পড়লো নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা। এমনই ভাবে একদিন সে অহনার মাকে তার বাবার সামনে ফুল দিয়ে ধরা খেয়েছিল। আজ এত বছর পরে অহনা তার পুনরাবৃত্তি করল! অহনার দাদু সেদিন রকিব সাহেব কে ফিরিয়ে দেন নি। রকিব সাহেব ঠিক করলেন তিনিও ফারহান কে ফিরিয়ে দেবেন না।
ছেলেটির না বলে যাওয়া শর্ত যেটি অহনা তাকে দিয়েছিল তাও তিনি জানেন। কারন অহনার মা তাকেও একদিন শর্ত দিয়েছিল যে যদি তার বাবার সামনে রকিব তাকে লাল গোলাপ দিতে পারে তাহলে তাকেই তিনি বিয়ে করবেন। অহনার মা আজ বেচে থাকলে অনেক খুশি হতেন শুনে যে তার মেয়ে তারই মত আরেক পাগলকে খুজে বের করেছে , পছন্দ করেছে।
সন্ধ্যা রাতে রাস্তার ডিভাইডারের সোডিয়াম লাইটের নীচে বসে আছে ফারহান। তার পাশে হাতে লাল গোলাপ নিয়ে বসে আছে অহনা।
ফারহান আনমনে তাকিয়ে আছে আকাশের তারা গুলোর দিকে। আর অহনা তাকিয়ে আছে ফারহানের দুই চোখের দিকে। অহনার বিষ্ময় কাটে না , অদ্ভুত সুন্দর এই চোখ জোড়াই তাকে বাধ্য করে অবিরত ফারহানের দিকে নির্লজ্জের মত তাকিয়ে থাকতে। অহনার মাথায় খালি হেনরির কয়েকটা লাইন ঘুরছে ...
Love is you and love is me
Love is prison and love is free
Love’s what’s there when you are away from me
Love is…
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।