নাম শুনেই যার প্রেমে পড়ি
৪/৫ দিন আগে বন্ধু পরাগের সাথে ফার্মগেট দেখা হয়ে গেল। কাজকর্ম শেষ করে ওর সাথে চলে গেলাম কালাচাঁদপুর ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। সেখানে সন্ধ্যায় দেখা হলো বিপিন, শুভজিতসহ অন্যান্যদের সাথে। রাত ৮টার দিকে পরাগ, বিপিন ও আমি চলে এলাম সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায়। এখানে বিপিনদের আরো কয়েকজন বন্ধু আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল।
সোডিয়াম বাতির আলো-আধারিতে বিপিন ওদেরকে ঠিকই খুঁজে বের করল। সংখ্যায় আমরা হলাম মোট ৬জন। লেকের বাধানো পাড়ে বসে আছি আমরা। নাগরিক মানুজনের নানা ব্যস্ততায় চোখ বুলাচ্ছি আগ্রহ ভরে। এর আগে এমন সময় এখানে আড্ডা মারার অভিজ্ঞতা আমার বা পরাগ কারোরই ছিল না।
এখানে আসা মূলত বিপিনের আগ্রহেই। হেড লাইটজ্বলা প্রাইভেটগুলো চোখের সামনে এপার-ওপার করছে বিরতিহীন ভাবে। মাঝে মাঝে একটা -দুটা থামছে কিছুক্ষণের জন্য, লোকজন নামছে। কেউ কেউ উঠছে, চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। নাগরিক ব্যস্ততা।
কারো দিকে তাকানোর সময় যেন নেই কারোরই। আঙুলের ফাঁকে সিগারেট শলাকা জ্বলছে একের পর এক। নানান বয়সী নারী-পুরুষের আনাগোনা চলছে অবিরত। তবে কিছু কিছু ছায়া যেন বারে বারে ফিরে আসছে দৃষ্টি সীমায়। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়ত এটা হয়ত আলো-আধারির কোন চাতুরতা।
কিন্তু না, সত্যিই কিছু মুখ ঘোরাফিরা করছে এদিক-ওদিক। আমাদের অন্য বন্ধুরা সমানে নিজেদের মধ্যে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে; তবে তা কি নিয়ে তা আমার মাথায় খেলছে না। বা বলা চলে আমিই খেলাচ্ছি না। সিগারেট ফুঁকছি আর আমার হিজিবিজি ভাবনার সাথে খেলছি। মানুষের মস্তিস্কের ক্ষমতা আসলেই অসাধারণ।
একসাথে কতকিছু নিয়ে ভাবতে পারে। বার্মার মানুষদের মুক্তির জন্য উন্মাদনা, মধুপুরে নতুন করে আদিবাসী উচ্ছেদের প্রক্রিয়া, একান্তরভাবে আমাদের রাজনৈতিক উদাসীনতা ইত্যাদি সহ নাগরিক ব্যস্ততার নানান ভাবনার সাথে আমায় মাথায় খেলে যাচ্ছে ইদিলপুরের সুলভদের কথাও। ওরা একটা গানের দল করেছে গ্রামে। বাংলাতে নয়, আপন ভাষাতেই গানের চর্চা করবে ওরা। ওদের ভাষাটা না জানলেও ওদের একজন আমাকে বলেছিল বাংলাতেই কিছু গান লিখে দেওয়ার জন্য।
কখনো গান লিখিনি। তাই অপারগতা আগেই প্রকাশ করেছিলাম ওদের কাছে। ওদের প্রস্তাব মাথায় রেখেই যেন কিছু শব্দ গুন গুন করছিল ভেতরে। জানিনা কেন জানি এরকম অনেক পরস্পর সংযোগহীন ভাবনাগুলো প্রাইভেট কারের ন্যায় হেড লাইট জ্বালিয়ে এদিক-ওদিক করছে। সিগারেট পুড়ছে সমান তালে।
হঠাৎ খেয়াল করলাম বিপিন যেন কাকে ডাকছে, ' ..দেশী, ও দেশী.. '। দেখি এক তরুনী সাড়া দিল। কাছে এল বিপিনের, 'কী দেশী দেশী করো কে? আইজকা অবস্থা বেশী ভালা না। ' বিপিনের সামনে আসতেই বিপিন ওকে কাছে টেনে নিল। আমার ঘোর কাটেনি যেন, এমন ভাবে তাকিয়ে আছি বিপিনের দিকে।
কিছুক্ষণপর বিপিন ওকে ১০ টাকার একটা নোট দিল। তরুনীটি চলে গেল একপাশে। বিপিনের সাথে আমার পরিচয় অনেকদিন ধরেই। বেশ দিলখোলা মানুষ হিসেবেই জানি ওকে। এভাবে ওকে কখনো চিন্তা করিনি।
যাই হোক, এবার বিপিনদের আড্ডায় কান রাখলাম। হ্যাঁ, ওরা সেইসব নারীদের নিয়েই কথা বলছে যারা এই নাগরিক ব্যস্ততায় এপাশ-ওপাশ করছে নিজেদের পেট বাঁচানোর তাগিদে। আমার চোখ বিপিনদের মতই ঘুরছে কড়া মেকাপ-সম্তা পারফিউমের গন্ধ ছড়ানো নারীদের পিছু পিছু। পরাগ কোন কথা বলছে না। চুপচাপ।
হয়তো কোন কবিতার লাইন মনে মনে চিন্তা করছে। আমরা চোখ ঘুরছে তাদের পিছু পিছু। কেউ কেউ হারিয়ে যাচ্ছে আশপাশের আধারে, কেউবা প্রাইভেটের নিরাপদ(!) খোলসে; কেউবা ঘুরছে এপাশ-ওপাশ। আশপাশ থেকে ছেলে-ছোকরাদের কেউ কেউ টিজ করছে। তবে কাকে করছে তা বুঝা মুশকিল।
হয়ত ওই গাড়ি ওয়ালাকে বা ঐ খোলসে ঢোকা রমনীকে অথবা উভয়কে। কিছুক্ষণ পর কর্ণেল এসে যোগ দিল আড্ডায়। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন বর্তমান ছাত্র । কর্ণেল আরেকটা মেয়েকে ধরে এনে দরদাম শুরু করে দিল। সে আড্ডায় যোগ দেয়ার পর বিপিনদের আড্ডায় যেন নতুন মাত্র যোগ হলো।
আচ্ছা নারীকে এ অবস্থায় দেখে একজন বোধবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের যেখানে লজ্জা পাওয়ার কথা সেখানে কেমন আমরা আনন্দিত হয়ে উঠছি। মজা করছি। কী অদ্ভূত একটা নিয়ম আমরা চালু করে রেখেছি যে, নারীকে বাঁচতে হবে পুরুষের কামনাকে মিটানোর মধ্য দিয়েই। শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সব শ্রেণীর পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নারীকে তার দেহ দিতে হবে, মন দিতে হবে, প্রয়োজনে সর্বস্ব দিতে হবে। পুরুষের কাছে এটাই যেন সার্বজনীন ধর্ম, সার্বজনীন আচার-প্রথা।
পুরুষের প্রয়াজনে নারীকে আমরা তার দেহ বিক্রিতে বাধ্য করলেও তাকেই পতিত জ্ঞান করেছি, কিন্তু কোন পুরুষকে নয়। নারীকে কী আসলে আমরা এভাবেই দেখতে পছন্দ করি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।