আমার প্রতিবেশী ৬৮ বছরের মি: ডঙ প্রতিদিন সকালে অন্ধকার থাকতেই হন্তদন্ত হয়ে পার্কে ছুটেন। সূর্য উঠার অবকাশ না দিয়ে ইয়ুসীও পার্কের জুয়া মহলে টর্চ জ্বালিয়ে তাড়া নিয়ে শুরু করেন মাচাঙ। পার্কের এই ওপেন এয়ারে ভোর শুরু হবার আগেই জড়ো হয় নারী পরুষের বড়সড় দল। যত জুয়াড়ী তার থেকে বেশী হয় দর্শক। এদের মধ্যে আমার স্বামীও একজন।
মি:ডং-এর অন্ধকারে জুয়ার অভিসার
বলা হয়,চীনাদের প্রথম পছন্দ ক্যাশ বিন্যাস দ্বীতিয় পছন্দ জুয়া। প্রতিটি পাড়া বা মহল্লায় যেমন একাধিক নাপিত থাকে তেমনি আছে একাধিক জুয়া মহল। এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় জুয়া হচ্ছে মাচাঙ, তারপর তাস। জুয়া গন চীনের মহামারী না বললেও অনায়াসে বলা যায় দুরারোগ্য ব্যাধি। জুয়া-রোগ দুর করতে ইদানিং কয়েকটা হেল্প লাইনও চালু হয়েছে।
ঢাকায় ’ঢাকা ক্লাব’ থেকে শুরু করে প্রেস ক্লাব হয়ে দেশের সব ক্লাবে যে হারে জুয়া খেলা হয়ে থাকে সেখানেও বেশ কয়টি হেল্পলাইন অনায়াসে চলতে পারে। কেননা চীনারা জুয়া খেলে নিয়ম মেনে,সকাল থেকে দুপুর ১২টা। আবার ২ টা থেকে ৬টা অবধি। স্বামীর মুখে শুনেছি বাংলাদেশে একনাগাড়ে ৯৬ ঘন্টার রেকর্ডও রয়েছে।
মহল্লার জুয়া মহল
জুয়া কমিউনিস্ট শাসনে নিষিদ্ধ হলেও কতৃপক্ষ সাধারনত চোখ বন্ধ রাখতে অভ্যস্ত।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কয়েকটি লটারি কোম্পানি গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়। তারা আবার লটারীর লীফলেটে চীনের সর্বজন শ্রদ্বেয় দার্শনিক কনফুসিয়াসের বাণী প্রচার করে;’ভ্দ্র জনে খোঁজে ন্যায় পরায়ণতা,ইতর জনে খোঁজে মুনাফা’।
দর্শকদের ভীড়
আমার আরেক প্রতিবেশী মি: পাঙ হুইল চেয়ার চালিয়ে প্রতিদিন নিয়মিত পার্কের জুয়া মহলে নির্দিষ্ট যায়গায় বসে খেলা দেখেন। লোকে বলে যৌবনে ছিল দুর্দান্ত জুয়াড়ী,জুয়া খেলে গাড়ি-বাড়ী সব হারিয়েছেন। এখন ছেলে মেয়ের পোষ্য হিসাবে দিন কাটান।
ছেলে থাকেন কানাডায়,নিজে কিছু কিছু ইংরেজী বলতে পারেন। দেখা হলে হাই হ্যালো হয়। আমার স্বামী ঠাট্টা করে বলে,দেখলে হবে?লেগে পড়েন, দুপয়সা আসবে। তিনি দার্শনিকসূলভ উত্তর দেন, কিছু বিনিয়োগ করে কিছুই ফেরত না পাবার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে জুয়া।
ওপেন এয়ারে জুয়া
কামনা করি, চীনের সব জুয়াড়ীদের জন্য আজকের দিনটি শুভ হোক।
সেই সাথে স্মরন করি কনফুসিয়াসের আরেকটা বাণী; ষাঁড়ের সামনে যেয়োনা,ঘোড়ার পেছনে যেয়োনা এবং বোকাদের ত্রি-সীমানায় যেয়োনা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।