বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাব এবং চীনাদের জীবনঃ
বিগত ৩০ বছরে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মান দ্রুত উন্নতি হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপাদান চীনা জনগণের খাওয়াদাওয়া, কাপড় পড়া, পরিবহন ও ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে মিশে গেছে।
প্রথমে চীনারা খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর রাখে। সর্বাই জানেন, চীন বিশ্বের ৭ শতাংশ আবাদী জমিতে বিশ্বের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যাকে লালনপালন করছে। এ বিস্ময়ের সৃষ্টি আর উন্নত মানের চাষ প্রযুক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।
যেমন চীনের বিখ্যাত কৃষি বিশেষজ্ঞ ইউয়ান লোং পিং সংকর ধান আবিষ্কার করেছেন। গত ৩০ বছরে এ প্রযুক্তি চীনে কমপক্ষে ১৫০ লাখ হেক্টর জমিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ধানের উত্পাদন পরিমাণ আগের চেয়ে গড়পরতা ৪৫০০ কেজি বেড়েছে। এটা চীনের খাদ্যশস্যের নিরাপত্তার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এখন সত্তর বছরেরও বেশি বয়সী এই কৃষি বিশেষজ্ঞ আরো উচ্চ লক্ষ্যবস্তু বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন।
ইউয়ান লোং পিং বলেছেন, 'তৃতীয় পর্যায়ের দৃষ্টান্ত জমিতে প্রতি মু এর উত্পাদনের পরিমাণ ৯০০ কেজি হবে। এ লক্ষ্যবস্তু বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমার আত্মবিশ্বাস আছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১০ সালে এ লক্ষ্যবস্তু বাস্তবায়িত হবে। '
তা ছাড়া কৃষি ক্ষেত্রের বহু উন্নত প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি চীনা জনগণ 'পেট-ভরা খাওয়া' থেকে 'ভালো করে খাওয়া' এর বদলে যাচ্ছে। এখন চীনের বাজারে পরিপূর্ণ প্রজাতির কৃষিপণ্য ও আনুষঙ্গিক পণ্য আছে।
শীতকালেও টাটকা শশা, টমেটো ও তরমুজসহ সব ধরনের খাদ্য সাধারণ মানুষের খাবার টেবিলে দেখা যায়।
অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ও প্রকৌশল প্রযুক্তির মান ধারাবাহিক অগ্রগতির কারণে চীনের শহরাঞ্চলের গণ পরিবহন ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ৩০ বছর আগে চীনের রেলগাড়ির গড়পরতা গতি কেবল ৫৪ কিলোমিটার ছিলো। তখন বেইজিং থেকে শাংহাই যেতে প্রায় ২০ ঘন্টা সময় লাগতো। বর্তমানে চীনে রেলগাড়ি, সড়কপথ ও বিমান চলাচল দিয়ে সব জায়গায় যাওয়া যায়।
বেইজিং থেকে শাংহাই যেতে মাত্র আগের দশ ভাগের এক ভাগ সময় লাগে।
এর পাশাপাশি 'ভবিষ্যত গাড়ি' বলে অভিহিত বিদ্যুত্ চালিত গাড়ি নতুন পরিবহন যন্ত্র হিসেবে চীনা জনসাধারণের কাছে চলে এসেছে। এখন বেইজিং, উহান, থিয়েনচিন ও ওয়েই হাইসহ নানা শহরের অধিবাসীরা চীনের তৈরি বিদ্যুত্ চালিত বাস দিয়ে বাইরে যেতে পারেন। বেইজিংয়ের একজন যাত্রী ম্যাডাম সু সিউ মিন সংবাদদাতাকে বলেছেন, ঐতিহ্যিক তেল চালিত গাড়ির তুলনায় তিনি বিদ্যুত্ চালিত পাবলিক বাস বেশি পছন্দ করেন। তিনি বলেছেন, 'আমি মনে করি, যাত্রীর পক্ষে তেল চালিত গাড়ি আর বিদ্যুত্ চালিত গাড়িতে বসে তেমন পার্থক্য নেই।
তবে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির নিঃসরণের বর্জ্য পদার্থ অনেক কম। ভবিষ্যতে যদি তেল চালিত গাড়ির সংখ্যা কমলে এবং বিদ্যুত চালিত গাড়ির সংখ্যা বাড়লে, তাহলে বেইজিংয়ের জলবায়ুর গুণগত মান অবশ্যই অনেক ভালো হবে। '
চীনা জনগণের জীবনযাপন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের কারণে তথ্যায়নের যুগে প্রবেশ করেছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন চীনে ২৫ কোটি নেট-ব্যবহারকারী আছে।
ইন্টারনেট মানুষের তথ্য পাওয়া, বিনোদন ও বিনিময় করার গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। বেইজিংবাসী সুন ওয়েন একজন পর্যটন অনুরাগী। দু'বছর আগে তিনি ইন্টারনেটে ব্লগ লিখতে শুরু করেন। এখন প্রতিদিন ব্লগে পর্যটন বিষয়ক রোজনামা লেখা তাঁর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, 'সম্প্রতি আমি উত্তর চীনের শানশি ও অন্তর্মঙ্গোলিয়া গিয়ে সেখানকার প্রাচীন প্রাচীরের পাশে গ্রামবাসীদের ছবি তুলেছি।
ভ্রমণের সময় আমি সেখানকার মানুষের জীবনযাপন ও কাজকর্মের অবস্থা দেখেছি। ফিরে এসে আমি নিজের ব্লগে এ সব অভিজ্ঞতা লিখেছি। আশেপাশের বন্ধুরা হয়তো সবাই একসাথে ভ্রমণ করতে পারেন না। তবে তারা আমার ব্লগের মাধ্যমে আমার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অনুভব করতে পারেন। '
তা ছাড়া ইন্টারনেট প্রযুক্তি সরকারের গণসেবা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করছে।
যেমন চার বছর আগে চীনে 'গ্রামাঞ্চলের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের আধুনিক দুরপাল্লা শিক্ষা প্রকল্প' শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের সাহায্যে চীনের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামীন স্কুল দুরপাল্লা শিক্ষাদানের সামর্থ্য অধিকার করেছে। কম্পিউটার ও উপগ্রহ টেলিভিশন নেটের মাধ্যমে গ্রামের ছাত্রছাত্রীরাও নামকরা শিক্ষকদের ক্লাস এবং মাল্টিমিডিয়ায় দেয়া শিক্ষাদান গ্রহণ করতে পারে। দক্ষিণ চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের হুই চাই থানার প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র লি সিয়াং সংবাদদাতাকে বলেছে, দুরপাল্লা শিক্ষাদান পদ্ধতি তার শেখার কৌতুহল জেগেছে। সে বলেছে, 'ইন্টারনেটে কার্টুন আছে, আওয়াজ আছে, চলচ্চিত্র দেখার মতো দেখতে যেমন সুন্দর, শিখতেও তেমনি মজা পাই।
'
চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাপনের গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সম্প্রতি চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাজের সার্বিক ব্যাখ্যা করে বলেছেন, 'বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হচ্ছে চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্তম্ভ। আমরা বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নত মানের কিছু কল্যাণমুলক ও মৌলিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা প্রকল্প করবো। ' তিনি বলেছেন, 'উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি শিল্প, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ও সংস্কার, খাদ্যের নিরাপত্তা ও নিরাপদ উৎপাদনসহ নানা ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্প জোরদার করতে হবে।
সাহস করে বিশ্বের সকল শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সফলতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন দ্রুততর করে নিরন্তরভাবে চালিকাশক্তি যুগিয়ে দিতে হবে। '
কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত বেইজিং অলিম্পিক গেমসে সাফল্যের সঙ্গে প্রতিফলিত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উপাদান বেইজিং অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়ামের নির্মাণ, তথ্য ও টেলিযোগাযোগ, বুদ্ধিমান পরিবহন, খাদ্যের নিরাপত্তা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তাসহ সর্বক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রযুক্তিগত সফলতা প্রয়োগ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় ও পর্যটকদেরকে বড় সুবিধা দেয়া হয়েছে।
বেইজিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হচ্ছে সবচেয়ে উজ্জ্বল বিষয়ের অন্যতম।
সারা বিশ্বের দর্শকদেরকে একটি বিস্ময়কর সাংস্কৃতিক ও দর্শনীয় মহা ভোজসভা উপহার দেয়ার জন্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কয় দশক উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে এবং অলিম্পিক ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তুরস্কের ক্রিড়া বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহমেত আলি শাহিন বলেছেন, 'আমি বহু বার অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু আমি মনে করি, বেইজিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবচেয়ে চমৎকার এবং সবচেয়ে নিখুঁতভাবে উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।