আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিঝুমের হারিয়ে যাওয়া!!

দেশটা আমাদের। এর জন্য ভাল কিছু করতে হলে আমাদেরই করতে হবে। Mail:rabiul@gmail.com

আমার ছাত্রী বুশরা। আমি যখন যখন ওকে পড়ানো শুরু করি তখন ও মাত্র ক্লাস টু তে পড়তো। বিকেল ৪ টা থেকে পড়ানো শুরু করলে অনেক সময় ৫।

৩০ এর আগে ছুটি দিতে পারতাম না। কিন্তু ৫ টা বাজলেই বুশরার বান্ধবীরা বুশরাকে ডাকা শুরু করতো। বুশরার চোখ দুটো তখন ছলছল করে উঠতো নিচে নামার জন্য। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হতাম তাকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিতে। আমি বুশরাকে নিয়েই অনেক সময় নিচে নামতাম।

তখন ওর ছোট্ট বান্ধবীরা আমাকে সালাম দিতো। এদের ভিতরে একজনের নাম ছিলো নিঝুম। ওকে প্রথম দেখায়ই আমার খুব পছন্দ হয়েছিলো। খুব লাজুক এবং ঠান্ডা ধরণের মেয়ে ছিলো। ওর চোখগুলো অনেক সুন্দর টানাটানা।

লজ্জায় কথা বলতো না। শুধু সালামটা সুন্দরভাবে দিতো আর হাসতো। ঈদের দিন বুশরা নিঝুম বাসায় আসতো। সালাম করতো। আমি ৫ টাকা করে দিতাম।

তাতেই তারা খুব খুশী হতো। ওদের এতো আপন মনে হতো!!মায়াটা হয়তো সেখান থেকেই জন্ম নিয়েছিলো। ওরা কোন দিন হারিয়ে যাবে ভাবি নাই। যা হোক এক সময় বুশরা কে পড়ানো ছেড়ে দিয়েছি। বুশরা এসএসসি দিলো,তারপর এইচ এস সি দিলো।

এখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। মাঝে মাঝে যেতাম ওর বাসায়। আর ফোনে নিয়মিতো যোগাযোগ হতো। মাঝে মাঝে ওর বান্ধবীদেরও খবর নিতাম। কে কই পড়ছে ইত্যাদী।

এর ভিতরে এক সময় জানলাম নিঝুম এর বিয়ে হয়ে গেছে ৫ বছর আগেই এস এস সি দেয়ার পর পরই। আমেরিকা প্রবাসী ওর ফুফাতো ভাই মামুনের সাথে। ওর একটা সন্তানও আছে। নিঝুম দেখতে কেমন হলো দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। তিন বছর আগে বুশরার মাধ্যমে ওর ফেসবুক আই ডি পেলাম।

ওকে দেখলাম। সেই ছোট্টো নিঝুম কতো বড় হয়ে গেছে!!!কিন্তু মুখের ভিতরে সেই সরলতা আর লাজুক ভাবটা ধরে রেখেছে আর চোখ দুটো হয়েছে আরো সুন্দর। সব ছবিতেই সেই হাসি মুখ।
আজ দুপুরে গেলাম বসুন্ধরা সিটিতে একটা ট্যাব কেনার জন্য। সবে দোতলায় উঠলাম।

ভিড়ের ভিতরে হঠাত একটা মেয়ে দেখে কেমন পরিচিতো মনে হলো। ফেসটা যে কোথায় দেখেছি?কিভাবে যেনো মেয়েটাকে চিনি। কোন ভাবেই মনে করতে পারছিলাম না। মেয়েটার দিকে বার বার তাকানোর ফলে আমার সাথে ওর দুইবার চোখাচোখি হলো। হাসিমুখ।

মেয়েটা ওর হাসবেন্ডের হাত ধরে একতলার দিকে নেমে যাচ্ছিলো। ওর সাথে একটা বাচ্চাও ছিলো। হঠাত মনে হলো আরে এটাতো নিঝুম মনে হয়!!পিছে পিছে নেমে আসলাম। পিছন থেকে ডাক দিলাম। মেয়েটা ডাক শুনেই ঘুরে চাইলো আমার দিকে।

ওর হাসবেন্ড কিছুদুর সামনে চলে গেলো। কথা বলেই ভুল করলাম। সারা দিন মন খারাপ করে বসে রইলাম। কথা গুলো শুধু মাথায় ঘুরছিলো।
রবিউলঃএই যে---এই যে----এক্সকিউজ মি---একটু শুনবেন?সরি কিছু মনে করবেন না।

আপনার নাম কি নিঝুম---মানে নিঝুম খন্দকার?
নিঝুমঃজি!বাট আপনি কে?আপনাকে তো আমি চিনতে পারছি না?
রবিউলঃওমমম---আমাকে চিনতে পারার কথা না?অনেকদিন পরে দেখা হলোতো-----আমার নাম রবিউল।
নিঝুমঃসরি কোন রবিউল একটু বলবেন?আমিতো এই নামে কাউকে চিনি না।
রবিউলঃবুশরাকে মনে আছে? আপনার ছোট বেলার ফ্রেন্ড ছিলো?একই বিল্ডিং এ থাকতেন?
নিঝুমঃহুমমমম---বুশরা নামে তো আমার এক ফ্রেন্ড ছিলো। ছোটবেলার ফ্রেন্ড। এক সাথে একই বিল্ডিংয়ে থাকতাম।

ওর সাথে তো অনেক দিন ধরে যোগাযোগ নাই। আর আপনিই বা বুশরাকে চিনেন কিভাবে?
রবিউলঃহা হা হা----আমি তো আপনার পাসের বিল্ডিংয়েই থাকতাম। আমি বুশরাকে ছোট বেলায় পড়াতাম। আপনিতো ছোট বেলায় আমার বাসায়ও আসছিলেন?ঈদে আসতেন?আপনার কি কিছুই মনে নাই?
নিঝুমঃসরি আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি আসলেই আপনাকে চিনতে পারছি না।

আর একটা জরুরী কাজে আমাকে এখন যেতে হবে। আপনাকে আর সময় দিতে পারছি না।
রবিউলঃএকটু দাড়ান-----প্লিজ---আপনি কি আসলেই চিনতে পারছেন না?উনি আপনার হাসবেন্ড মামুন না?
নিঝুমঃ আরেরররর----আপনি তো দেখি আমার হাসবেন্ড এর নামও জানেন?জি উনিই আমার হাসবেন্ড আর ওইটা আমার সন্তান। আমার খুব অবাক লাগছে। আপনাকে তো আমি একটুও চিনতে পারছি না।


রবিউলঃহা হা হা--- ইউএসএ থেকে কবে আসলেন?আবার কবে যাবেন?
নিঝুমঃআমি ইউএসএ তে থাকি সেটাও জানেন?আমি দেশে আসলাম এক মাস আগে। ২ দিন পর চলে যাচ্ছি। বুঝতে পারছি না!!আসলে আমার খুব অবাক লাগছে যে আমি আপনাকে একটুও চিনতে পারছিনা---ইয়ে –--সরি আমাকে এখন যেতে হচ্ছে---হাসবেন্ড ডাকছে। ----কিছু মনে করবেন না। আমাকে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে জয়েন করতে হবে।

কেমন যেনো লজ্জায় মিশে যাচ্ছিলো।
রবিউলঃনাহ!!আপনি একটুও বদলান নাই---ঠিক আছে---আমি আসলে আপনার ছোট বেলার ফ্রেন্ড বুশরার সুজন স্যার। এখন আপনাকে আমি নিজেকে কিভাবে চিনাবো।
নিঝুমঃসুজন স্যার!!!-----আপনি!!!ওয়েট ওয়েট একটু একটু মনে পড়ছে। কিন্তু---কিন্তু--- আমি তো আপনার কথা বুশরার কাছে অনেক শুনতাম।

আপনিতো শুনেছি ভালো জব পেয়েছিলেন। তাই বুশরাকে আর সময় দিতে পারলেন না। ইয়েস আপনিই সুজন স্যার। আমার এখন মনে পড়েছে। স্যার এখন আপনি কোথায় আছেন?
রবিউলঃ হ্যা আমি ভালোই আছি কিন্তু আপনাকে তো আর এখন আটকে রাখতে পারছিনা।

য়ামার ও সময় নাই। আপনার হাসবেন্ড আর ছেলে আপনাকে ডাকছে। ঠিক আছে আজকে আপনি যান। দেখে খুব খুশীই হলাম।
নিঝুমঃনা—না-- স্যার সময় আছে।

আপনার সাথে অনেক দিন পরে দেখা?২ দিন পরেতো চলেই যাচ্ছি। আর দেখা হবে না। স্যার একটু দাড়ান!!কোথায় আছেন বল্লেন না তো!!
রবিউলঃবলে আর লাভ কি?তুমি আসলে এতক্ষণেও আমাকে চিনতে পারো নাই। অভিনয় করে যাচ্ছো। ফেসবুকে বুশরার ফ্রেন্ড লিষ্টে আমাকে পাবে।

যাও ভালো থেকো। বিদায়। গলাটা ধরে আসছিলো। চোখ দিয়ে পানি এসে পরবে মনে হচ্ছিলো। জলদি ফিরতি পথে হাটা দিলাম।


একটু পরে পিছন ফিরে চাইলাম। নিঝুম দেখি তাকিয়ে আছে। পাশে ওর হাস বেন্ড। জোরে বলে উঠলো স্যার ভালো থাইকেন। দোতলায় উঠে কাচের ভিতর দিয়ে নিচের দিকে চাইলাম।

দেখি ঝকঝকে লাল একটা কারে করে নিঝুম চলে যাচ্ছে। ব য়সের সাথে এভাবেই আসলে অতি আপন চেনা মানুষগুলো পৃথিবীতে হারিয়ে যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।