আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিঃদু'নয়নে দুই দেশ (লিখেছেন রত্না রায়, হ্যানোভার, জার্মানি )

সভ্যতার ক্রমবিকাশের বর্তমান পর্যায়ে এসেও বিশ্বে অদ্যাবধি নারী-পুরুষের মধ্যে নানা বৈষম্য বিদ্যমান। এই বৈষম্য আবার সর্বত্র সমান নয়। অঞ্চল ভেদে এক দেশ থেকে অন্য দেশে নারীর প্রতি আচরণের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আধুনিক শিক্ষার সর্বাঙ্গীণ প্রসার, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ও ধর্মীয় অনুশাসনের ভিন্নতা এ পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। আর একারণেই হয়তো অনেক দেশে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য অনেকটা কমে এসেছে, আবার কোথাও আছে আগের মতোই।


এই লেখাটিতে আমি জার্মানিতে আমার বিগত এক বছরের উপলদ্ধি থেকে নারীদের প্রতি সমাজের তথা পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। একই সাথে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে বাংলাদেশে আমার বাস্তব জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করার প্রয়াস পেয়েছি। আরও স্পষ্ট করে যদি বলি জার্মানিতে এসে আমি নারীর প্রতি কিছু উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করেছি যা খারাপ শোনালেও দূর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই দেখতে পাইনি। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো অবচেতন মনে আমার অনুভূতিকে নাড়া দিয়েছে এবং মনে হয়েছে সমাজে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে নারীর বিকশিত হওয়ার জন্য এই বিষয়গুলির প্রয়োজন রয়েছে, যে কারণে আমার এই লেখা। যদিও আমার অভিজ্ঞতার সাথে অনেকের পর্যবেক্ষণ এক নাও হতে পারে।



জার্মানিতে অবস্থানকালে আমার উপলব্ধ ও পর্যবেক্ষণকৃত কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করবো যেখানে নারীর প্রতি সমাজের সত্যিকার উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়েছে। একজন বাংলাদেশি নারী হিসেবে যেটা আমার কাছে অন্যরকম মনে হয়েছে।

গ্রাম বা শহর যেখানেই হোক বাংলাদেশে একজন স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মেয়েকে পদে পদে মনে করিয়ে দেওয়া হয় তুমি নারী, তোমার নিরাপত্তা তোমাকে নিশ্চিত করতে হবে,
চলতি পথে আপদ এসে জুটতে পারে এবং তোমাকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে এগুলো এড়িয়ে চলার জন্য। অন্যথায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেকোনো জায়গায় বা যে কারও মাধ্যমে ঘটতে পারে এবং জন্মের পর থেকেই এসব শুনিয়ে বাঙালি নারীর মন ও মানসিকতাই অন্যায়সহিষ্ণু করে গড়ে তোলা হয়।

যেমন স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে, গণ-পরিবহণে বা এমনকি পুরুষ শিক্ষকের দ্বারা অযাচিত আচরণ। বিষয়গুলি বাংলাদেশে আমি আমার নিজের বা আমার বান্ধবী ও আত্মীয় স্বজনদের বেলায় প্রত্যক্ষ ও অনুধাবন করেছি। যদিও আমাদের দেশে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন হয়েছে, তথাপি বর্তমানেও প্রায়ই এ ধরণের নেতিবাচক ঘটনার খবর পাওয়া যায়।

আমি বিগত ছয়-সাত মাস জার্মানিতে একটি ভাষা শিক্ষার ইন্সটিটিউটে জার্মান ভাষা শিখছি। এই সময়টাতে আমার দেশীয়

অভিজ্ঞতার সাথে এখানে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি।

এখানে নারী শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে কখনও উদ্বিগ্ন থাকতে দেখিনি। আমি মাঝে মাঝে আমার বর্তমান মেয়ে বন্ধুদের কাছে এসকল বিষয়ে জানার জন্য আলোচনা করেছি। এখানে নারীদের শুধুমাত্র নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়না, স্বয়ংসম্পূর্ণ একজন মানুষ হিসেবেই দেখা হয়। কেউই নারীর বিষয়ে বাড়তি আগ্রহবোধ করে না বা দুর্বল ভেবে অনাকাংখিত বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়না। নারী আর পুরুষ সম্পূর্ণ সমান মানবাধিকার নিয়ে বসবাস করছে।

এই বিষয়টা আমাদের জন্য যারা ভিন্ন সামাজিক ব্যবস্থা দেখে এসেছি তাদের কাছে বিশেষভাবে নজর কাড়বার মত বিষয়।

আমি ও আমার স্বামী বর্তমানে জার্মানির হ্যানোভার শহরে বসবাস করছি। বসবাসের জন্য হ্যানোভার খুবই মনোরম শহর। আমার স্বামী পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমাকে মাঝে মাঝে একাই বাজারে কেনাকাটা করতে যেতে হয়। দিনে কিংবা রাতে যখনি প্রয়োজন, আমি অত্যন্ত নির্ভয়ে বাজারে কেনাকাটা করতে যেতে পারি।

এখানে নারীর চলাফেরা আমার কাছে অনেক শঙ্কাহীন মনে হয়েছে। কারণ এখানে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কদাচিৎও কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করে না যার মানে হতে পারে- তুমি একজন নারী হয়ে কেন এই সন্ধ্যাবেলা বা রাতে একা একা বাজারে এসেছ! অথবা পথে-ঘাটে বাজারে দেখা যায় না নারীর প্রতি কোন নেতিবাচক বা অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ। আমি বাংলাদেশে বসবাসের সময় ঢাকা ও খুলনা শহরে কখনও কখনও এরকম সন্ধ্যাবেলা বা রাতে কেনাকাটা করতে গিয়েছি। কিন্তু সত্যি বলতে কি কখনো এতো নিরাপদ অনুভব করিনি। আমার মনের মধ্যে কোনও না কোন ভীতি বা উদ্বিগ্নতা কাজ করেছে।

ছোট ছোট বিষয় হলেও জার্মানিতে নারীর প্রতি সমাজের ও পুরুষের এই বৈষম্যহীন, সাম্য উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে অভিভূত করেছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার গণ-পরিবহনে যেসকল নারীর চলাচল করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার বিশ্বাস তারা জার্মানির মত দেশের গণ-পরিবহণে চলতে খুব স্বস্তি ও নিরাপদ বোধ করবেন। এমন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বা ঘটনা নেই যা আমাদের দেশের গণ-পরিবহণগুলোতে ঘটেনি। এ ধরনের সমস্যার জন্য দায়ী মানুষের মানসিকতা ও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। নারীকে কখনো পণ্য বা অবহেলার বস্তু মনে করা হয় আর এখানেই এ জাতীয় সমস্যার মূল নিহিত।

তদুপরি, ‘৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ এর প্রাক্কালে এসকল বিষয়ে আমি অনেক বেশি আশাবাদী হতে চাই। আমি মনে প্রাণে চাই আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন বৈষম্য বিরাজ না করুক। নারীর প্রতি সমাজ ও পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির আমুল পরিবর্তন ঘটুক যেন নারী তার চলার পথকে সম্পূর্ণ নির্ভার ও বাধাহীন মনে করতে পারে। তাহলে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারী তার সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে।

তবে পশ্চিমা বিশ্বের সবকিছুই যে নারীর জন্য মঙ্গলজনক তা নয়।

নারীর বাধাহীন চলার পথ মানে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল জীবনাচরণ নয়। আমার এই লেখার আবেদনও তা নয়। আমি শুধু নারীর প্রতি সমাজের ও পুরুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার সর্বোপরি প্রভাবের বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

সকল নারীর প্রতি সম্মানার্থে আমরা এবারের ম্যাগাজিন জার্মান প্রবাসে সাজিয়েছি শুধুমাত্র নারীদের লেখা দিয়ে। জার্মানিতে অবস্থানরত নারীদের মধ্যে অনেকেই বহু বছর যাবৎ জার্মানিতে অবস্থান করছেন, নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছেন আবার কেউ বা সদ্য পাড়ি জমিয়েছেন।

কিন্তু বিসাগের প্ল্যাটফর্মে তাঁদের পদচারণা তুলনামুলকভাবে অনেক ক্ষীণ। তাই আমাদের চেষ্টা তাঁদের চোখ দিয়ে আরেকবার জার্মানিকে আপনার কাছে তুলে ধরা। জার্মান প্রবাসে – নারী দিবস বিশেষ সংখ্যা – মার্চ, ২০১৪

# পড়ুন "জার্মান প্রবাসে" – নারী দিবস বিশেষ সংখ্যা – মার্চ, ২০১৪! http://bsaagweb.de/bsaag-magazine-march-2014/
#ফেসবুকে আমরা - জার্মান প্রবাসে- http://goo.gl/EW4qBH

একটু পড়ে যদি রিভিউ দেন তাহলে অশেষ উপকার হয়। আর কি কি যোগ করা যায় তাও জানাতে পারেন আমাদের। আপনার একটা চাওয়া, একটা মন্তব্য অথবা আপনার কোন অভিজ্ঞতা ভাগ করুন না আমাদের সাথে! চটজলদি লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়ঃ german.probashe@gmail.com

অসংখ্য ধন্যবাদ।

ভাল থাকবেন সবাই!।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।