আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপি হারার মূল কারণ 'ভোট ডাকাতি'

ভোট 'ডাকাতি' করে ফলাফল ছিনতাইয়ের কারণেই অধিকাংশ উপজেলায় দল সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয় হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি বেশকিছু উপজেলায় প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত, একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়াও অন্তত ২০ উপজেলায় জামায়াতের পৃথক প্রার্থী থাকার কারণে ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এ নিয়ে বিএনপি চরম হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। শীর্ষ নেতারাদের বক্তব্য হলো_ ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা এমনভাবে ভোট ডাকাতি করে কেন্দ্র দখল করবে তা আমরা ভাবতেও পারিনি।

চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ৫৫, বিএনপি ২৪, জামায়াত ৫, জাতীয় পার্টি ১ এবং চারটিতে অন্য দলের সমর্থকরা নির্বাচিত হন।

চার দফায় মোট ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ১৭২, বিএনপি ১৪৭, জামায়াত ৩৩, জাতীয় পার্টি ৩ এবং অন্যরা ২৮টি উপজেলায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা বলেন, প্রথম দুই ধাপে কারচুপি ও সহিংসতা তুলনামূলক কম ছিল। তৃতীয় ধাপে এসে কারচুপি ও সহিংসতা অনেক বেড়ে যায়। চতুর্থ ধাপে তা চরম আকার ধারণ করে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপে তা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে বিএনপি।

এখন শুধু 'নামকাওয়াস্তে' নির্বাচন হবে বলে মনে করছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। যার কারণে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আর আশা দেখছে না দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে ভোট ডাকাতির যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাতে ভোটের প্রতি মানুষের কোনো বিশ্বাস থাকবে না। চতুর্থ দফা নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মহোৎসব জাতি দেখতে পেয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করা যে সঠিক ছিল, তা আবারও প্রমাণিত হলো।

দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চতুর্থ ধাপে নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হলে দল সমর্থিত অন্তত ৭০টি চেয়ারম্যান পেতাম। আওয়ামী লীগ এমন ভোট ডাকাতি করবে তা আমরা কল্পনাও করিনি। যেভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে, তাতে গণতন্ত্রের লাশ হওয়ার বাকি নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ৪৬টি জেলার সংশ্লিষ্ট সব উপজেলায় কম-বেশি ভোট কারচুপি করেছে আওয়ামী লীগ। অধিকাংশ উপজেলায় ছিল ভয়াবহ ভোট ডাকাতি।

বেসরকারি টেলিভিশন এবং পত্রিকায় কারচুপির যে চিত্র ওঠে এসেছে, বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। তারা বলেন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বে কারচুপি না হলে বিজয়ী উপজেলার সংখ্যা আরও বেশি থাকত। জানা গেছে, আগামী ৩১ মার্চ পঞ্চম দফা নির্বাচনের পর কারচুপির প্রতিবাদে কর্মসূচি দেবে বিএনপি। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং ১৯ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, যশোরের কেশবপুর, সাতক্ষীরার কলারোয়া, পটুয়াখালীর দুমকি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, ফেনীর সোনাগাজী, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, কঙ্বাজারের রামু ও কুতুবদিয়ায় জামায়াতের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল।

এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কঙ্বাজারের রামু উপজেলায় বিএনপি এবং বাঁশখালী ও সাতকানিয়ায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। বাকি ৮ উপজেলায় জোটের শরিক এই দুই দলের লড়াইয়ের ফল ঘরে তুলে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী।

সিলেট সদরের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশফাক আহমেদ বিএনপির প্রার্থী শাহ জামাল নুরুল হুদার চেয়ে ২৬ হাজার ৬২০ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন। সেখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল খায়ের শামীম পান ৩০ হাজার ৯১ ভোট। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন তৃতীয় অবস্থানে।

এ ছাড়া খুলনার রূপসা উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্র্থী মাত্র ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করেন। সেখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আবু হোসেন বাবু ৮ হাজার ভোট পান। রাঙ্গুনিয়াতেও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

হবিগঞ্জে সমন্বয়হীনতা ও দলীয় কোন্দলে চারটি উপজেলায় হেরেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। সদরে একক প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বেলাল বিশাল ভোটে পরাজিত হন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব থাকার কারণে।

প্রবাসী অধ্যুষিত নবীগঞ্জ উপজেলায়ও একই অবস্থা। সেখানে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মনে করেন। অবশ্য সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ সুজাত মিয়াকেও দোষারূপ করছেন নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনে তিনি নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। কারণ তার মেয়ের জামাই মিজানুর রহমান চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন।

এতে নেতা-কর্মীরা দুই ভাগ হয়ে পড়েন। লাখাই উপজেলায় বিএনপির তিন প্রার্থী ছিলেন। আজমিরীগঞ্জে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সেখানে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় জাতীয় পার্টির নেতা মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য রওশন মোশাররফ শাবানাকে বিএনপির কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডা. আহমেদুর রহমান আবদাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত ও নেতা-কর্মীদের সমন্বয়হীনতায় চারটি উপজেলায় বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বিএনপির পরাজয়ের কারণ দল সেখানে তিন ভাগ। বিএনপির জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক আফজাল এইচ খান, আরেক ভাগে বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এবং তৃতীয় ভাগের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর। এবার উপজেলা নির্বাচনে দল থেকে সমর্থন পান উপজেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক আজিজুল আহসান। তিনি আফজাল এইচ খানের অনুসারী বলে 'খ্যাত'।

উপজেলায় তার জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। প্রার্থী সিলেকশনে ভুল ছিল বলে স্থানীয় বিএনপি মনে করে। ফলে অন্য দুই গ্রুপের কর্মী-সমর্থকরা তাকে সহযোগিতা করেননি বলে জানা গেছে।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী ছিলেন হাবিবুল্লাহ ফকির। সেখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন অধ্যাপক রেজাউল হক।

সখীপুরে বিএনপির প্রার্থী খোরশেদ আলম মাস্টারের বিপরীতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা শেখ মু. হাবিব। কালিহাতী উপজেলায় বিএনপি প্রথমে শফিকুল ইসলাম তালুকদারকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়। পরে বিদ্রোহী প্রার্থী শুকুর মাহমুদকে সমর্থন দেয়। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে শুকুর মাহমুদকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে আবার শফিকুল ইসলাম তালুকদারকে সমর্থন দেয়। দুদুল্যমান অবস্থার কারণে সেখানে বিএনপির ভরাডুবি হয় বলে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির ভরাডুবির কারণ হিসেবে অনৈক্যকেই দায়ী করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। পাবনার ঈশ্বরদী ও ফরিদপুর উপজেলায় বিএনপির ভরাডুবির কারণ হিসেবে দলীয় কোন্দলকেই দায়ী করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। প্রার্থী বাছাইয়েও চরম ভুল ছিল বলে মনে করেন তারা। ঈশ্বরদীতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জাকারিয়া পিন্টু ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৃতীয় স্থানে এবং জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী চতুর্থ স্থানে ছিলেন।

ফরিদপুর উপজেলায়ও বিএনপি একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়। সেখানে বিএনপির তিন প্রার্থী ছিলেন। প্রতিবেদন তৈরি করতে সহায়তা করেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও বিভাগীয় প্রতিনিধিরা।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.