ধরে নিচ্ছি আপনি একজন লিনাক্স বেসড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারী। এখন আপনি লিনাক্স ব্যবহার করার জন্য একটি নতুন ল্যাপটপ কিনতে চাচ্ছেন। এই অবস্থায় আপনার পছন্দের যে কোন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বিশিষ্ট ল্যাপটপ কেনা উচিৎ হবে না, কেননা হয়ত সেই ডিভাইসটি লিনাক্সের কথা মাথায় রেখে বানানোই হয়নি। ফলে লিনাক্স ইন্সটল করার পর বিভিন্ন রকম সমস্যার মুখোমুখি আপনি হতে পারেন, বিভিন্ন রকম হার্ডওয়্যার কাজ নাও করতে পারে যদিও এক্ষেত্রে আমরা সবাই জানি যে লিনাক্সে হার্ডওয়্যার সাপোর্ট সবচাইতে বেশি। তাই লিনাক্সের জন্য একটি ল্যাপটপ কেনার আগে অল্প কিছু ব্যাপার জেনে এরপরই কেনা উচিৎ, এজন্যেই আজকের এই ব্লগটি লিখছি।
মন দিয়ে পড়ুন, আশা করি নতুন কিছু জানতে পারবেন। চলুন জেনে নেয়া যাক, লিনাক্স ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপ কেনার কি কি অপশন আমাদের সামনে আছে।
বাজারে কিন্তু এমনও ল্যাপটপ পাওয়া যায় যেগুলোতে লিনাক্স বেসড অপারেটিং সিস্টেম প্রি-ইন্সটলড অবস্থায় থেকে থাকে। আপনি যদি লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে প্রচন্ড আগ্রহী অথবা সিরিয়াস হয়ে থাকেন তবে এই ল্যাপটপ গুলোই কেনা উচিৎ হবে। ‘এই ল্যাপটপ গুলোতে আগে থেকেই লিনাক্স ইন্সটল করা থাকে ফলে ইন্সটল করার ঝামেলা নেই’ – আমি এজন্যে কিন্তু এই ল্যাপটপ গুলোর কথা বলছি না।
লিনাক্স তো আপনি নিজেই অল্প সময়ের মধ্যে আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করে নিতে পারবেন কিন্তু এই ল্যাপটপ গুলো যেহেতু লিনাক্স প্রি-ইন্সটলড অবস্থায় বাজারে আসে সেহেতু এর হার্ডওয়্যার সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা যায় যে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম কোন রকম সমস্যা ছাড়াই ল্যাপটপটিতে ব্যবহার করা যাবে। একটি ল্যাপটপ বাজারে লিনাক্স প্রি-ইন্সটলড অবস্থায় আসার অর্থ হচ্ছে ল্যাপটপটির নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমটি যে এই ল্যাপটপটিতে স্ট্যাবল এবং লিনাক্স ড্রাইভার সমর্থন করে – এই কথাটি বোঝাতে চাচ্ছে। এবং পরবর্তী সময়ে লিনাক্স ব্যবহার করার সময়ে আপনি যদি কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হন তবে সেই নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানটিই আপনাকে পরিপূর্ন সুবিধা প্রদান করবে।
আপনি নিচের লিনাক্স ল্যাপটপ গুলোর মাঝে একটি কিনতে পারেনঃ
Dell XPS 13 Developer Edition:
এই ল্যাপটপটি মূলত ডেলের চমৎকার একটি ল্যাপটপ ‘এক্সপিএস ১৩ আল্ট্রাবুক’ এর উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে। এবং এই Dell XPS 13 Developer Edition-টিতে উবুন্টু লিনাক্স প্রি-ইন্সটলড অবস্থায় আসে।
এই প্রোডাক্টটি ডেলের ‘প্রোজেক্ট স্পুটনিক’ এর একটি অংশ যার ফলে ডেল ডেভালপারদের জন্য একটি লিনাক্স ল্যাপটপ তৈরী করেছে।
ল্যাপটপটির স্পেসিফিকেশন জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
System76 ল্যাপটপঃ
System76 প্রতিষ্ঠানটি উবুন্টু অপারেটিং সিস্টেম বিশিষ্ট ল্যাপটপ কম্পিউটার, ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং সার্ভার পিসি বিক্রি করে থাকে। এমনকি System76 এর বেশির ভাগ ল্যাপটপে কীবোর্ডের ‘সুপার কী’তে উইন্ডোজের লোগো বাদ দিয়ে উবুন্টুর লোগো ব্যবহার করা হয়। System76 প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন রকমের ল্যাপটপ বিক্রি করে থাকে, যেমন এরা ১৪ ইঞ্চির আল্ট্রা থিন ল্যাপটপ থেকে উইন্ডোজের শক্তিশালী গেমিং ল্যাপটপের মত ১৭ ইঞ্চি মন্সটার ডিজাইনের লিনাক্স ল্যাপটপ বিক্রি করে থাকে।
System76 প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপ গুলো দেখতে চাইলে ভিসিট করুন এই লিঙ্কে।
ZaReason Laptops:
ZaReason প্রতিষ্ঠানটিও System76 প্রতিষ্ঠানটির মত উবুন্টু অপারেটিং সিস্টেম বিশিষ্ট ল্যাপটপ কম্পিউটার, ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং সার্ভার পিসি বিক্রি করে থাকে তবে এই প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপ গুলো System76 প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপ গুলোর চাইতে কিছুটা কম মূল্যে পাওয়া যায়।
ZaReason প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপ গুলো দেখতে চাইলে ভিসিট করুন এই লিঙ্কে।
নোটঃ মনে রাখবেন, আমি নিজে কিন্তু এই ল্যাপটপ গুলো ব্যবহার করে দেখিনি, এজন্যে আমি জোর দিয়ে বলতে পারছিনা যে ল্যাপটপ গুলো ভালো হবেই। আপনি যদি উপরে উল্লেখিত ল্যাপটপ গুলো থেকে কোন একটি কিনতেই চান তবে পরামর্শ থাকবে ‘ভালো করে ইন্টারনেটে এই ল্যাপটপ গুলো সম্পর্কে পড়ে দেখার জন্যে’ এবং এর পর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য।
আপনি ক্রোমবুককেও একটি সস্তা লিনাক্স ল্যাপটপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ক্রোম ওএস মূলত আলাদা ইন্টারফেস বিশিষ্ট ডেস্কটপ লিনাক্সের একটি মোডিফাইড ভার্শন এবং এজন্যেই ক্রোমবুকের হার্ডওয়্যার লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট করবে। আপনি ইচ্ছে করলে ক্রোমবুকে ক্রোম ওএস এর পাশাপাশি ট্রেডিশনাল ডেস্কটপ লিনাক্স ব্যবহার করতে পারবেন।
তবে ক্রোমবুকে লিনাক্স ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। ক্রোমবুক তৈরী করার সময় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের উপযোগী করে তৈরী করা হয়নি।
ক্রোমবুকে কম পরিমানের স্টোরেজ ব্যবহার করা হয় এবং এটিকে হালকা সিস্টেম অনুযায়ী তৈরীই করা হয় যেন ক্রোম বুকের মাধ্যমে খুব দ্রুত এবং ভালোভাবে ইন্টারনেটে এক্সেস করা যায়। ক্রোমবুকের হার্ডওয়্যার অধিক ভার্চুয়াল মেশিন একই সময়ে রান করানোর মত উপযোগী করে তৈরীই করা হয়না এবং অন্যদিকে ক্রোমবুক গুলো আসল লিনাক্স ল্যাপটপ গুলো থেকে অনেক কম দামের হয়ে থাকে। তবে, আপনি যদি একটি কম দামী এবং হালকা ডিভাইসে উবুন্টু ব্যবহার করতেই চান তবে ক্রোমবুক আপনার জন্য কাজটি করে দিতে কিছুটা হলেও সক্ষম।
আপনি লিনাক্স ব্যবহারের জন্য এমনও ল্যাপটপ কিনতে পারেন যেগুলোয় লিনাস্ক প্রি-ইন্সটলড অবস্থায় থাকেনা। এই ল্যাপটপ গুলোতে আপনি খুব সহজেই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এবং লিনাস্ক ওএস ডুয়াল বুট পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবেন।
যদিও আমরা সবাই জানি যে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে সর্বাধিক হার্ডওয়্যার সাপোর্টেড হয়ে থাকে, তবুও লিনাক্সের জন্য অন্যান্য ল্যাপটপ কেনার আগে কিছুটা রিসার্চ করে নেয়া উচিৎ বলেই আমি মনে করি যেন ভবিষ্যতে লিনাক্স ব্যবহার করা নিয়ে কোন রকম ইস্যুর মুখোমুখি আপনাকে না হতে হয়। তবে, ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে ‘Nvidia Optimus graphics-switching technology’ যুক্ত ল্যাপটপ কেনার সময় বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকবেন কেননা, Optimus টেকনোলোজিটি লিনাক্স পুরোপুরি সমর্থন করেনা এখন পর্যন্ত। হয়ত আপনি এটির মাধ্যমে আপনার কাজ করিয়ে নিতে পারবেন তবে এই ব্যাপারটি ভবিষ্যতে আপনার মাথা ব্যাথার কারন হতে পারে।
উবুন্টুর একটি হার্ডওয়্যারের ডেটাবেইস রয়েছে যা ‘Ubuntu Certified hardware database’ নামে পরিচিত। এই সার্টিফিকেশন প্রোসেস কম্পিউটারের বিভিন্ন রকম হার্ডওয়্যার নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্টগুলো পরীক্ষা করে এবং পরবর্তীতে পরীক্ষিত হার্ডওয়্যারটি উবুন্টু কম্পাটিবল কি না তা তাদের ডাটাবেইসে জমা করে রাখে।
আপনি উবুন্টুর এই ডাটাবেইস ঘেটে সার্টিফাইড লিস্ট থেকেও একটি ল্যাপটপ কিনতে পারেন যাতে করে উবুন্টু ব্যবহারে আপনি কোন সমস্যার মুখোমুখি না হন এবং এই ল্যাপটপ গুলো উবুন্টুর পাশাপাশি জনপ্রিয় সকল লিনাক্সের ডিস্ট্রিবিউশনগুলোও সাপোর্ট করে থাকে।
ধরুন, আপনার একটি ল্যাপটপ পছন্দ এবং আপনি লিনাক্স ব্যবহারের জন্য সেই ল্যাপটপটি কিনতে চাচ্ছেন, তবে সমস্যা হচ্ছে যে সেই ল্যাপটপটি সার্টিফাইড ডাটাবেইসের লিস্টে নেই। তখন আপনি কী করবেন? এরকম সমস্যার মুখোমুখি হলে সবচাইতে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে গুগলে সেই ল্যাপটপটির মডেল লিখে শেষে ‘লিনাক্স’ অথবা ‘উবুন্টু’ দিয়ে সার্চ করলেই আপনি বিভিন্ন ফোরামে অন্যান্য লিনাক্স ব্যবহারকারীদের তাদের ল্যাপটপ গুলোতে লিনাক্স ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দেখতে পাবেন। এবং, আপনার সেই পছন্দের ল্যাপটপটি যদি লিনাক্স ব্যবহারের জন্যেই আগে কেউ কিনে থাকে তবে অবশ্যই কোন না কোন ফর্মে আপনি সেই ব্যাক্তির অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে নিতে পারবেন যে ল্যাপটপটি লিনাক্স ব্যবহারের জন্য কতটা উপযোগী।
লিনাক্সের জন্যে ল্যাপটপ কেনা ঠিক ততটাই সহজ যেমনটা সহজ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বিশিষ্ট ল্যাপটপ কেনা।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বলতে গেলে প্রায় ৯৯ শতাংশ গ্রাফিকাল ইউআই বিশিষ্ট এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি হবার কারনে সাধারন কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মাঝে লিনাক্স খুব বেশি জনপ্রিয় না হলেও বেশির ভাগ ডেভালপারগন লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকেন। আপনি যদি সত্যিই লিনাক্স ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান তবে সাম্প্রতিক লিনাক্স প্রি-ইন্সটলড ল্যাপটপ গুলো কিনতে পারেন এবং এতে করে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন আপনি হবেন না বললেই চলে। এছাড়াও, ক্রোমবুক বা সাধারণ ল্যাপটপের কথাও আমি উপরে কিছুটা বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি। এখন, সিদ্ধান্ত পুরোটাই আপনার যে আপনি ঠিক কোন ল্যাপটপটি কিনবেন।
আজ এ পর্যন্তই।
আপনার সবাই ভালো থাকুন এবং চমৎকার সব টেক বিষয়ক সংবাদ, ব্লগ, রিভিউ এবং বিভিন্ন রকম টিউটোরিয়ালের জন্য প্রিয় টেকের সাথেই থাকুন।
শুভেচ্ছা ,
আবির ভাই অনেক দরকারি একটা পোস্ট । টেক প্রিয় কে ধন্যবাদ , এমন এক মাধম্য করে দেওয়ার জন্য । তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক এমন লেখাসমূহ বাংলায় লেখার কারনে অনেকেই পড়ে সহজে বুঝতে পারছে ।
তাই অনেক উপকারে আসছে , আসা করি টেক প্রিয় এগিয়ে যাবে ।
প্রযুক্তির সাম্প্রতিক তিউনস টেক - টিউনস নিয়ে লেখার জন্য
আবার আবির ভাইকে ধন্যবাদ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।