ইউক্রেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ক্রিমিয়া নানা ঘটনা আর চড়াই-উতরাই পার করে সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের রক্তচক্ষু আর হুমকি উপেক্ষা করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিনা রক্তপাতে ক্রিমিয়াকে নিজের দেশের অংশ করে নিয়েছেন।
স্বভাবতই তা হজম করতে পারছে না পশ্চিমারা। তাত্ক্ষণিক শাস্তি হিসেবে উন্নত দেশগুলোর জোট জি-৮ থেকে রাশিয়াকে বের করে দিয়েছে। সমৃদ্ধ ক্রিমিয়াকে সঙ্গী করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আদলে ইউরেশিয়া গঠনের স্বপ্নে মগ্ন পুতিন এর মোক্ষম পাল্টা পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন।
তবে ইউক্রেনের প্রভাববলয় থেকে ক্রিমিয়াকে নিজেদের করে নেওয়ার পুরো বিষয়ে রাশিয়াকে ‘অপহরণকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া যা করেছে, পশ্চিমা বিশ্ব চাইলে দেশটিকে শাস্তি দিতে পারে। তবে রাশিয়ার তরফ থেকে পাটকেলটি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে পশ্চিমাদের।
ইউক্রেনের বলয়ে থাকা ক্রিমিয়া ছিল একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ক্রিমিয়ার অধিকাংশ মানুষ রুশ ভাষাভাষী।
এ কারণে সেখানকার নাগরিকদের বেশির ভাগই ইউক্রেনের বদলে নিজেদের রুশপন্থী ভাবতে পছন্দ করেন। ইউক্রেনের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচও রাশিয়ার স্বার্থের বাইরে যায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত কখনো নেননি। কিন্তু হঠাত্ করেই ইইউতে যোগ দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়ে দেশটিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইইউতে যোগ দেওয়ার পক্ষে যাঁদের অবস্থান তাঁদের যুক্তি, ইইউতে যোগ দিলে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। ইউক্রেনের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান হবে।
তবে সরকার ইইউতে যোগ দিয়ে রাশিয়াকে চটাতে চায়নি। জনগণের সামনে তাঁরা যুক্তি উপস্থাপন করে, ইউরোপজুড়ে অর্থনীতিতে মন্দাভাব চলছে। তাই সেখানে যোগ দিয়ে আদতে ইউক্রেনের কোনো লাভ হবে না।
এ নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে বিক্ষোভের মুখে ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ। দেশে অন্তর্বর্তী সরকার আসে।
এ অঞ্চলের নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ক্রিমিয়ায় সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া। আর রাশিয়ার এমন পদক্ষেপে খেপে যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউসহ পশ্চিমা বিশ্ব। বর্তমান পরাক্রমশীল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসময়ের পরাক্রমশীল রাশিয়ার বিরোধটা আবারও প্রকাশ্যে আসে। একপর্যায়ে ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করে। তাতে ৯৫ শতাংশের বেশি ক্রিমিয়াবাসী রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে মত দেয়।
ক্রিমিয়া ‘বেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলেও পশ্চিমা বিশ্ব পুরো বিষয়টিকে পুতিনের ‘একনায়কতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক’ আচরণ হিসেবে দেখছে। ক্রিমিয়ায় মোতায়েন করা সেনাসদস্য ও তাদের পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া—এমন দাবি করে ইউক্রেনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের উচিত এখনই জরুরি ভিত্তিতে দেশটিকে মোটা অংকের অর্থ দেওয়া, যাতে তারা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করে, এ ব্যাপারেও তাদের নজর দেওয়া প্রয়োজন।
একই সঙ্গে ব্যাপক রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের পরও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার কারণে রাশিয়ার প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কৌশলী আচরণের মাধ্যমে ‘অপহরণ’ ঠেকাতে এসব ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।